আগে ভাবতাম মানুষ মনে হয় ছাগুদের কথায় পাত্তা দেয় নি কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমরা তাদেরকে প্রতিনিয়ত খুব পাত্তা দিয়ে যাচ্ছি। জামাত-শিবির শাহবাগ আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলন বলে প্রচার করতে থাকে কিন্তু অবাক কাণ্ড হল আমাদের ব্লগাররাও তাদের তালে তালে নিজেকে আস্তিক হিসেবে উপস্থাপন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
ভাইজানরা আপনাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি; শাহবাগের আন্দোলন কী অনৈতিক বা ভিত্তিহীন কোন আন্দোলন? দেশ ও জনগণের হতাশা ও ক্ষোভ থেকেই এই আন্দোলনের সূত্রপাত। তাহলে এখানে আমর বিশ্বাস কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে? ৫২, ৬৯, ৭১-এর সকল আন্দোলন ও যুদ্ধকে নাস্তিক, কাফের ও ভারতীয় আন্দোলন ও যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল পাকিস্তানি ও তাদের দালালরা। খুব জানতে ইচ্ছে করে; তখনও কী আন্দোলনকারীরা নিজেদের বিশ্বাস উপস্থাপন করতেই ব্যস্ত ছিল কিনা। প্রতিনিয়ত আস্তিক-নাস্তিকতার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে; আমি যদি নাস্তিক হই তাহলে আমি আমার মা-বোনের ধর্ষণের বিচারের জন্য আন্দোলন করতে পারব না। আমি পারব না ধর্ষকের বিরুদ্ধে কথা বলতে কারণ আমি নাস্তিক।
কয়েক দিন আগে একজন ব্লগারের উপর হামলা হল। মারা যাওয়ার পর তার বিচার বাদী যখন তোলা হচ্ছিল সে তখন বলল সে নাস্তিক। বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে তার বিচার চাওয়ার কোন অধিকার নেই। আমরা বর্তমান ব্লগাররা যেভাবে নিজেকে আস্তিক হিসেবে উপস্থাপন করার প্রতিযোগিতায় নামলাম তাতে মনে হচ্ছে আস্তিক হলে আমার ধর্ষণও মাপ হয়ে যাবে। এর ফলাফল কী হবে তা সহজেই অনুমান করা সম্ভব।ভবিষ্যতে ধর্ম নিয়ে কেউ কিছু সহজে লিখতে পারবে না। দুনিয়ায় সবসময় ধর্মের সমালোচনা হয়েছে এবং হবে। সুস্থ সমালোচনা সবসময় আশা করি। মানুষ তার বোধ নিয়ে সব কিছু বিচার করতে চাইবে এমনকি ধর্মকেও কিন্তু বর্তমানে নাস্তিক জিনিসটাকে এমন ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে নাস্তিক মানে অন্যায়, নাস্তিক মনে খারাপ। তাই নিজের স্বার্থে আমাদের সাবধানতার সহিত কাজ করতে হবে। আমাদের সমাজে নাস্তিকদের এমনিতেই মানুষ সহ্য করতে পারে না। নাস্তিক মানে বাঘ ভাল্লুক ভাবে তার উপর আমাদের এমন কার্যকলাপ নাস্তিকদের জন্য আরও হুমকি স্বরূপ বলে বোধ করছি। তাই আস্তিক নাস্তিক প্রমাণ ছাড়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করি। আমার ইস্যু কতোটুকু যৌক্তিক বা কতোটুকু সত্য তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন আপনি কিন্তু আমি কি বিশ্বাস করি তা তো আলোচনায় আসা অযৌক্তিক। মানুষের কাজ কাম দেখে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে কোন মানুষ যদি তার বাবা হত্যার বিচার চায় তখন আগে তাকে আস্তিক প্রমাণ করতে হবে তারপর তার অভিযোগ আদালতে নেওয়া হবে।
একজন মানুষের প্রথম পরিচয় সে মানুষ। সে কি বিশ্বাস করে তা তো মুখ্য না। কিন্তু আমাদের সমাজে এখন বিশ্বাসটাই মুখ্য হয়ে গেছে। আন্দোলন করার অধিকার শুধু আস্তিকদের আছে বিষয়টি তেমনই মনে হয়। কোন ব্যক্তি যদি বলে; ধর্ষকদের ফাঁসি চাই তার দাবী আমলে নেওয়া হবে যদি সে আস্তিক হয় আর যদি নাস্তিক হয় তখন বলা হবে এটা নাস্তিকদের আন্দোলন। এই কথাটার মাধ্যমে প্রমাণ হয় ইস্যু কি ও তা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত তা মুখ্য না তার বিশ্বাসটাই মুখ্য। হায় বাঙালি! আমরা আসলেই অদ্ভুত। অন্যরা যখন বিগ ব্যাং নিয়ে চিন্তা করে তখন আমরা চিন্তা করি আমার পাশের মানুষটি কি আস্তিক নাকি নাস্তিক!!!