৭১-এ জামাতের আল্লাহ ও কোরানের বিকৃত ব্যবহার

আল্লাহ তাদের লাঞ্ছিত করেছেন-
মতিউর রহমান নিজামী

৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন এবং ৭১-এর অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয় জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। বাঙলার জনগণ দ্বারা প্রত্যাক্ষিত হয়ে প্রতিশোধের আগুনে তারা উন্মত্ত হয়ে উঠে। গণ-অভ্যুত্থান ও অসহযোগ আন্দোলনে রাজপথের একটি প্রচলিত শ্লোগান ছিল,জিল্লাহ শাহীর পাকিস্তান-আজিমপুরের গোরস্থান” ।

শ্লোগানটি পাকিস্তানপন্থীদের পরাজয়ের গ্লানি আরো বাড়িয়ে দেয়। প্রতিরোধ স্পৃহায় ফুঁসতে থাকে তারা। কিন্তু তীব্র গণজোয়ারের মুখে অসহায়ভাবে সবকিছু মুখবুঝে হজম করতে হয় তাদের। ২৫ মার্চ রাতে পাক সেনারা আদিম হিংস্রতায় বাঙালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে প্রতিশোধের আনন্দে তারা পুলকিত হয়ে উঠে। এই গোষ্ঠীর সবচেয়ে হিংস্র ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী যশোহর ইসলামী ছাত্রসংঘের সভায় অসহায় বাঙালির দুঃখ-দুর্দশাকে উপহাস করে ভাষণ দেন। দৈনিক সংগ্রাম ১৫ সেপ্টেম্বর ‘অপরিণামদর্শী নেতারাই পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলীর জন্য দায়ী” শিরোনামে নিজামীর ভাষণটি প্রকাশ করে। পত্রিকাটি বাঙালিদের প্রতি নিজামীর বক্রোক্তির বিবরণ দিয়ে উল্লেখ করে-

সম্প্রতি যারা পাকিস্তান ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, আল্লাহ তাদের প্রত্যেককে লঞ্ছিত করেছেন। তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানকে যারা আজিমপুরের গোরস্তান বলে শ্লোগান দিয়েছিল তাদেরকে পাকিস্তানের মাটি গ্রহণ করে নি। তাদের জন্য কোলকাতা আর আগরতলা মহাশ্মশানই যথেষ্ঠ

রাজাকার সমাবেশে নিজামী
কোরআনের আয়াতের অপব্যাক্ষা
মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার নির্দেশ

নিজামী ১৪ সেপ্টেম্বর যশোহর রাজাকার সদর দফতরে সমবেত রাজাকারদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। দৈনিক সংগ্রাম ১৫ সেপ্টেম্বর ভাষণটি প্রকাশ করে। রাকাকাররা হত্যা, ধর্ষণ, লুট ও অগ্নিসংযোগসহ নানা প্রকার পাপাচারে লিপ্ত ছিল। এসব নিষ্ঠুর ও অনৈতিক কার্যকলাপকে শাস্তির ধর্ম ইসলাম সর্মথন করে না। অথচ নিজামী রাজাকারদের এসব পাপ কাজে আরো উস্কে দেবার লক্ষ্যে পবিত্র কোরআনের আয়াতের অপব্যাক্ষা দিয়ে ধর্মের পবিত্রতা ভূলুষ্ঠিত করেছেন। সমবেত রাজাকারদের উদ্দেশ্যে ভাষণে তিনি ফতোয়া দেন পাক সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করা ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করা সমার্থক। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার নির্দেশ দিয়ে রাজাকারদের উদ্দেশ্যে কোরআনের আয়ত পাঠ করে অপব্যাক্ষায় বলেন-  পবিত্র কোরআনের সুরায়ে তওবায় ১১১ ও ১১২ আয়াতের আলোকে জাতির এই সংকটজনক মুহূর্তে প্রত্যেক রেজাকারকে ঈমানদারীর সাথে তাদের উপর অর্পিত এ জাতীয় কর্তব্য পালনে সচেতন হওয়ার জন্য মতিউর রহমান নিজামী তাদের প্রতি আহবান জানান।।।

পবিত্র কোরআনের সুরায়ে তওবায় ১১১ ও ১১২ আয়াত-

إِنَّ اللّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللّهِ فَاسْتَبْشِرُواْ بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
111
আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য।

التَّائِبُونَ الْعَابِدُونَ الْحَامِدُونَ السَّائِحُونَ الرَّاكِعُونَ السَّاجِدونَ الآمِرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّاهُونَ عَنِ الْمُنكَرِ وَالْحَافِظُونَ لِحُدُودِ اللّهِ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
112
তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে

এতো কিছুর পরও বাঙলার মানুষ এদের দলকে ইসলামিক দল বলে, এরা নাকি ইসলামিক আর্দশে বিশ্বাসী। এদের সর্ম্পকে একটা কথাই বলা যায়; জামাতের ইসলাম মেড বাই পাকিস্তান।

– দৈনিক সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.