তসলিমা নাসরিনের কাছে রাষ্ট্র ও সমাজের অপরাধ

-১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমি বই মেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল/ছাত্রলীগ তসলিমা নাসরিনের শাড়ি খুলে ফেলে। এমন জখন্য অন্যায়ের কোন বিচার হয়নি। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তাকে সরকারী চাকরি হতে বহিষ্কার করে, নাগরিকত্ব বাতিল করে এবং তার পাসপোর্টও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।

-২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের তৌহিদী জনতা একুশে টেলিভিশনের নারী সাংবাদিককে আক্রমণ করে। কারণ এমন বেলাল্লাপনা নারী ঐ দিন কেন রাস্তায় বের হয়েছিল। মেয়েটা প্রাণে বেঁচে গেলেও পায়ে মারাত্বক আঘাত পায়।

প্রথম নারীটি সর্ম্পকে আমরা সবাই বিরুদ্ধাচারণ করি। অনেকে আবার অস্বস্তী অনুভব করি। কট্টর মোল্লারা তার ফাঁসি চায় আর প্রগতির ঝাণ্ডাধারী তার বিষয়ে সবসময়ে এড়িয়ে চলে। কারণ এই বিষয়ে কথা বলে কারো বিরাগভাজন হতে চায় না। তাই প্রথম নারীর সর্ম্পকে আমরা বরাবরই নীরব। তসলিমা নাসরিনের এই রাষ্ট্রে বাস করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। আর এই অধিকাররের বিষয় কথা বলতে তার মুরিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই। তসলিমা নাসরিন কী দেশের একমাত্র শেষ বাজে ( আপনাদের ভাষায়) লেখক ছিলেন?

135829161_2258689607608818_3156859941834968588_o

তারিখ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ সাল। স্থান বাংলা একাডেমী

তসলিমা নাসরিনের ব্যাপারে কথা উঠলে প্রথম দুইটা প্রশ্ন সবার মুখে আসে। ১. তিনি ফালতু/বাজে/ আক্রমণের ভঙ্গি খারাপ করে লেখেন। ২. তার চরিত্র ভাল না। এগুলো সবার আগে বলে তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার একটা বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

অভিযোগ উত্থাপনকারীদের অভিযোগ মেনে নিয়ে বলা যায়; তার থেকে বাজে লেখক এমনকি চটি লেখকও তো দেশে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধর্ষণ (পলাতক বাচ্চু রাজাকার) টিলিভিশনে ধর্মীয় শিক্ষা দিচ্ছে। তিনিও তো এই বাংলার মাটিতে দিব্যি ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাহলে তসলিমাকে নিয়ে এতো বিতৃষ্ণা কেন? তার প্রধাণ কারণ তিনি ধর্ম নিয়ে লিখেছিলেন। এই বিষয়েও কমন অভিযোগ তার আক্রমণের ভঙ্গি খারাপ।তাও মেনে নিলাম। আক্রমণের ভাষা খারাপ হলে কী দেশে থাকার অধিকার থাকে না? যদি না থাকে তাহলে আমাদের সমাজের ওয়াজ মাহফিলের কোন বক্তার দেশে থাকার অধিকার থাকে না। কারণ খুব পরিষ্কার। ওদের আক্রমণের ভাষা পুরোটাই আদি রসাত্বক ও নগ্ন। সাইদি হুজুরের সাম্প্রদায়িক বয়ান, অন্য ধর্মের বিষয়ে হাস্যরস, নিন্দর ক্যাসেট তো জোরসে আমাদের সমাজে বাজানো হয় তাহলে তসলিমার লঘু পাপে গুরুদণ্ড কেন?

দ্বিতীয় অভিযোগ তার চরিত্র ভাল না।এটা শুনলে অবচেতন মনেই হাসি পায়। কারণ চরিত্র খারাপ জিনিসটি কী? এটা তো আপেক্ষিক বিষয়। আর বাংলাদেশের সংবিধানে কী চরিত্র খারাপ হলে দেশে থাকা হারাম ঘোষণা করা হয়েছিল? আর কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আপনে আমি মন্তব্য করার কে?

আর রাষ্ট্র ও সমাজ তার উপর কী পরিমাণ অন্যায় করেছেন তা কী কখনো ভেবে দেখেছেন? আসলে মডারেট পাবলিক যেহেতু কাঠ মোল্লাদের মতন সরাসরি ফাঁসির দাবী করতে পারে না। বা বলতে লজ্জা পায় তাই ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে বলার চেষ্টা করে; ঐরকম মহিলার দেশে থাকার অধিাকার নেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর দাউদ হায়দারকেও দেশ ছাড়তে হয়। বলা যায় জান নিয়ে দেশ ত্যাগ করতে হয় তাকে। দাউদ হায়দারের পরিবারের ক্ষমতা থাকার দরুন তিনি জীবন নিয়ে দেশ ছাড়তে পেরেছিলেন। তারপর তসলিমা নাসরিনকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়। যারা ভাবছেন ধর্ম নিয়ে লেখার কারণে তাদের দেশ ছাড়তে হয়েছিল তাদের জন্য উদাহারণ হচ্ছে ”শাহবাগ”। কারণ ফাঁসির দাবী নিয়ে যারাই শাহবাগে গিয়েছিল তাদের সবাইকে নাস্তিক হিসেবে আক্ষায়িত করেছেন আমাদের ধর্মের টেন্ডার নেওয়া হুজুর সমাজ। সময়টা খুব বেশি দূরে নয় যেদিন ধর্মীয় রাজণৈতিক দলগুলো সার্পোট না করলে আপনাদেরও নাস্তিক হিসেবে আক্ষায়িত করা হবে। তসলিমা নাসরিনকে দেশ ত্যাগের ট্রেনে সবার আগে উঠতে হলেও সেই বগির যাত্রী হতে পারি আমি বা আপনি। দেশ ছাড়া আপনজন হারা; একাকিত্বই যার সঙ্গী সেই তসলিমা নাসরিন দেশে ফিরে আসুক তাই প্রত্যাশা করি। এই দেশে থাকার অধিকার সবার আছে যেমন আছে তসলিমা নাসরিনের তেমনি আছে তেঁতুততত্ত্বের জনক আল্লাম শফি হুজুরেরও।

অগাস্ট ২৫, ২০১৪

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.