জিজ্ঞাসা

৬৫৭ সালের জুলাই মাসে সিরিয়ার সিফফিনের ময়দানে আলীর বিপরীতে যুদ্ধে নামে মুয়াবিয়া। সেই যুদ্ধে আলী জয়ের পথেই ছিলেন। পরাজয়ের সম্ভবনা দেখে মুয়াবিয়া ধর্মের আশ্রয় নিলেন। মুয়াবিয়ার সৈন্যরা বর্শার মাথায় কুরানের পাতা লাগিয়ে যুদ্ধ করতে নামলো। এতে আলীর বাহিনীর মধ্যে দ্বিধা তৈরি হয়। মুয়াবিয়ার সেনাবাহিনী কুরান সামনে রেখে যুদ্ধ করতে নামায় আলীর বাহিনীর অনেকেই যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। ফলে মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হন আলী এবং এই কারণে পরবর্তীতে আলীর রাজনৈতিক ও ক্ষমতার পরাজয় ঘটে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল জামাত ঐ মুয়াবিয়ার বংশধর। এরা ৭১’এ ধর্মীয় আশ্রয়ে রাজনীতি করেছে এবং বর্তমানেও তা করে যাচ্ছে। মুয়াবিয়ার প্রেতাত্মা প্রতিটি জামাত-নেতার ভেতর বাস করে। আর বর্তমানে বাঙালির অবস্থা সিফফিনের ময়দানে আলীর সৈন্যদের মতন। যারা ধর্মীয় রাজনীতি দেখে দ্বিধায় পড়ে যায়। মজার বিষয় হল বাংলাদেশে জামাতের মতন ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ছাড়াও শ’খানের ধর্মীয় দল রয়েছে। এসব দলগুলো কখনোই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার বিচার চায়নি। অথচ রোহিঙ্গা ও গাজার জনগণের জন্য মিছিলের পর মিছিল ঠিকই করতে করতে পেরেছে এমনকি একবার বায়তুল মোকারমের খতিব বলেন-থুথু দিয়ে ইসরাইলের সেনা বাহিনীকে ভাসিয়ে দেবার হুমকি। অথচ দেশীয় গণহত্যার ব্যাপারে তারা বরাবরই নীরব। দলেন নামগুলোয় ভিন্নতা থাকলেও চিন্তায় ও মানসে তারা অভিন্ন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

তিনদিন ধরে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে কিনা সেই সময় নিয়ে এবং এই ফাঁকে ইউরোপ আমারিকায় নিজেদের লবিং কাজে লাগিয়ে মৃত্যাদণ্ড যেন মকুফ হয় সেজন্য কাজ করে অতঃপর যখন ব্যর্থ হল তখন কামারুজ্জামানের ছেলে মিডিয়ার সামনে বলছে-রাষ্ট্রপতি প্রাণ ভিক্ষা দেবার কে? অথচ এই কথাটি বলতে তারা তিনদিন সময় নিল। ইসলামিক দলগুলোর চরিত্র বরাবরই এমন। রাজাকার কামরুজ্জামান মারা যাবার পর তারা প্রচার করতে শুরু করল-আল্লাহ যাকে নিয়ে যেতে চায় কেউ তাকে ধরে রাখতে পারে না। তাহলে কথা আসে ইসরাইলী গণহত্যার জন্য আমরা কে ইসরাইলের সেনাবাহিনীকে দোষ দিই! আল্লাহ যাকে নিয়ে যেতে চায় তাকে ধরে রাখার সাধ্য কার আছে বলুন। ইসরাইলের সেনা বাহিনীতো উছিলা মাত্র! মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট এভাবেই তারা কাজে লাগায়। এরাই সেই মুয়াবিয়ার বংশধর। নিজেদের সকল অন্যায় সকল পাপ এভাবেই ধর্মীয় প্রলেপে ঢেকে দেয় তারা।

অন্যদিকে আমাদের বালখিল্য সাংবাদিকতা ও মিডিয়ার কান্ডজ্ঞান দেখলে যে কোন সুস্থ মানুষ অসুস্থ বোধ করতে পারে। কামরুজ্জামানের কারণে যাদের পরিবার গণহত্যার শিকার হয়েছে, যারা বিধবা হয়েছে সেই সোহাগপুরের বিধবাপল্লীর বিধবাদের কোন কথা প্রচার না করলেও তারা রাজাকারটি কখন গোসল করবে, মৃত্যুর আগে পায়খানা করেছিল কিনা সেসব নিউজ দেখে নিজেই লজ্জিত হচ্ছি। আমরা এমন একটি দেশে বাস করি যেখানকার মিডিয়া সাংবাদিকরা জানে না কাকে কীভাবে উপস্থাপন করতে হয়। রাজাকার কাদের মোল্লা মারা যাবার পর কাদের মোল্লার মৃত দেহ গাড়ি করে নিয়া যাওয়া লাইভ প্রচার করছিল। যেখানে ইউরোপে যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুরপর মানুষ নিজ এলাকার দাফন দিতে অস্বীকৃতি জানায় সেখানে আমাদের মিডিয়ার কাজ দেখলে মনে হয় মাদার তেরেসা মারা গেলেন। এসব অসভ্য সাংবাদিকতা কবে বন্ধ হবে? একজন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া একজন যুদ্ধাপরাধী মারা যাওয়ার পর সংবাদ উপস্থাপনের নামে এসব বালখিল্য আচরণ বন্ধ করার আইনী কোন সুযোগ আছে কী? সাজা প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীকে নিয়ে এভাবে সংবাদ উপস্থাপন কখনো মিডিয়ার স্বাধীনতা হতে পারে না। এসব বন্ধের দাবী জানাই।

ছবি কৃতজ্ঞতায়-International Crimes Strategy Forum

5 comments

  1. //আলী জয়ের পথেই ছিল। পরাজয়ের সম্ভবনা দেখে মুয়াবিয়া ধর্মের আশ্রয় নিলেন।// আলীর জন্য “ছিল” আর মুয়াবিয়ার জন্য “ছিলেন”-এর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবহার দেখিয়া কেউ যদি আপনাকে বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ বলিয়া আখ্যা দেয় তবে অবাক হইব না। 😉

    Like

    • কথা খারাপ বলেন নাই। ছিল, ছিলেনেও বাঙালি অনুভূতি আহত হতে পারে।। সময় নিয়ে ঠিক করে দেব। যদিও ভিলেন মুয়াবিয়া

      Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.