মানব প্রগতির দায়

আমাদের সমাজ কেন দিনদিন হিংস্র হয়ে যাচ্ছে? এর উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। এসব বিষয়ে সমাজ বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে থাকেন।

রাষ্ট্র একদিকে বিচার না করে ‘ক্রসফায়ার’ দিচ্ছে। অন্য দিকে পাবলিক দুই টাকার জন্য পিটিয়ে মেরে ফেলতে পিছ পা হচ্ছে না। সংখ্যালঘুর বাড়ি যেহেতু দখল করলে কেউ কিছু বলে না, সুতরাং যতোদিন সংখ্যালঘুর কাছে জমি থাকবে, ততদিন এগুলো চলতে থাকবে রাষ্ট্রের পরোক্ষ মদদে।  আহমদ শরীফের বিরুদ্ধেও মোল্লারা মিছিল করেছে, ফাঁসির দাবী করেছে, কিন্তু কেউ কতল করে দেবে এমনটি বলার সাহস পায় নি। হুমায়ুন আজাদের বেলায় বলতে হয়েছে; কতল করা উচিত। ‘কতল করে ফেলব’ এই বাক্যটা করার সাহস তারা পায় নি।

কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে তারা জনসম্মুখে কতল করার হুকুম দিচ্ছে! অথচ আইনগত ভাবে এমন হুমকি দিলে যে কেউ গ্রেফতার হতে বাধ্য। আমাদের রাষ্ট্র গ্রেফতার তো দূরের কথা এর বিপরীতে কোন টু শব্দটি করতে সাহস পায় নি। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়ে রাষ্ট্র সরকারী মানুষদের দিয়ে ক্রসফায়ার করাচ্ছে অন্য দিকে ধর্মীয় ফ্যানাটিক পাণ্ডারা নিজের উদ্যোগে চাপাতি ফায়ার করছে!  যৌতুকের জন্য নিজের স্ত্রী’কে মেরে ফেলতেও কেউ ভয় পাচ্ছে না। যদি কারো শাস্তি কিংবা পুলিশের ভয় থাকত তাহলে তো যে কোনও অন্যায় করতে দুই বার ভাবতে হতো।

আবার পুলিশের যদি জবাবদিহিতা কিংবা শাস্তির ভয় থাকত, তাহলে রাজনের খুনীদের বাঁচানোর জন্য ২৬ লাখ টাকার বায়না করতো না। রামুর ঘটনার মতন বাংলাদেশে হাজারো ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ঘটনা ঘটে। যেমন, চট্টগ্রামে ২০১৩ সালে মসজিদ থেকে ‘নাস্তিকরা হুজুরকে তুলে নিয়ে গেছে’ — এই গুজব ছড়ানো হলো মসজিদের মাইক থেকে। এতে সহিংস উন্মত্তাতায় সম্ভবত এক শ’র উপর আহত ও বিশ জনের মতন মারা পড়ে। যারা এসব গুজবে অংশ নেয় বা হামলায় অংশ নেয়, তারা জানে এসব হামলার বিচার কখনো হবে না।

যদি বিচার বা আইনের ভয় থাকত তাহলে অংশ গ্রহণের সময় কেউ দ্বিতীয় বার ভাবত। সহজ একটা উদাহরণ দিই; রাস্তায় পুলিশ মটর সাইকেল থামার সিগনাল দিলে রাজনৈতিক বাইকগুলো দাঁড়ায় না। কারণ, তাদের শেল্টার আছে, সুতরাং আইন মানের ঠ্যাকা নেই। এই ঠ্যাকা যাদের নেই, তারাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আইন অমান্য করে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে হয়তো এগুচ্ছে। কিন্তু মানবিক দিক দিয়ে কতো দূর আমরা এগুতে পারলাম? আমাদের জন্য নিজ দেশের প্লেয়াররা ফেসবুক পেজে কমেন্ট অপশন বন্ধ করে দেয়। এই ঈদে সাকিবের বৌসহ ছবি কিছু বিদেশী ক্রিকেট পেজেও পোস্ট হয়েছে। বিদেশী পেজগুলোতে স্থান পায় ভূয়সী প্রশংসা। আর আমাদের দেশের পেজে স্থান পায় গালাগালি, কে কী পোশাক পড়বে না, তা নিয়ে লেকচার।

অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেনের একটা কথা মনে রাখা উচিত- ‘কোনো দেশের মানবিক অগ্রগতি না হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আবার অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও মানবিক প্রগতি স্থির হয়ে থাকতে পারে।’

জুলাই ২৮, ২০১৫

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.