এক সাংবাদিকের মুখে শুখে শুনলাম ৭১ সালে নরওয়েতে অনেক পাকিস্তানী আশ্রয় পায়। সে সময় নরওয়েতে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ পাওয়া যাচ্ছিল। অন্যদিকে তাদের অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল। ৭১এর যুদ্ধ ও পাকিস্তান সেনা বাহিনীর অত্যাচার বর্ণনা করে নিজেদের পশ্চিম পাকিস্তানের আটঁকে পড়া বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের অনেকে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। নরওয়ের সরকারও তাদের নিয়ে আসে। এছাড়াও এই দেশটি মধ্যপ্রাশ্চ্য ও এশিয়া থেকে সাগরে ঝাপিয়ে পড়া মানুষগুলোকেও অতীতে আশ্রয় দিয়েছে। মজার বিষয় হল গত বছর নরওয়েতে ধর্ষকদের তালিকায় এই বান্দাদের অবস্থান সবচেয়ে উপরে।
ইংল্যান্ড থেকে সবচেয়ে বেশি তরুণ-তরুণী সিরিয়ার আইএসআইএল এ যোগ দিয়েছে। ৭১-এর পর বুদ্ধিজীবী হত্যার সহযোগী মঈনুদ্দীন ব্রিটেনে পাড়ি জমায়। তিনি সেখানে অনেক ইসলামিক সংস্থা থেকে শুরু করে মসজিদ নির্মান করেন। ইতোমধ্যে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে জঙ্গিবাদে এসব সংস্থা, মসজিদ জড়িত। ফলে ব্রিটেন তার নীতি পরিবর্তন করে। বর্তমানে অনেক মানুষ ব্রিটেন ছেড়ে দেশে চলে আসতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশীও কম নয়। ব্রিটেনে পূর্বে ১৩ হাজার পাউন্ড আয় করতে পারলে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যেত সেখানে এখন নতুন নিয়ম অনুসারে ৩৫ হাজার পাউন্ড [যদি ভুল জেনে না থাকি] দেখাতে হয় ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য। এছাড়াও নতুন আইনে ব্রিটেনে পড়তে গিয়ে কাজ পেয়ে ব্রিটেনে থেকে যাওয়ার যে সুযোগ ছিল তাও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে যারা ৭ বছর ধরে ব্রিটেনে অবস্থান করছে কিন্তু ভিসা বেশি দিন নেই এমন সাধারণ বাংলাদেশীদের চোখে আজ ঘুম নেই। ফলে এক আইনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সবাই।
কিছুদিন আগে সংবাদ দেখলাম ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন একটা বড় ফান্ড গঠন করেছে তাদের জন্য; যারা সমুদ্র ঝাপিয়ে পড়ছে কিংবা আইএসএল এর অত্যাচারে দেশ থেকে পালিয়েছে এসব মানুষগুলোর জন্য। যাই হোক এসব মানুষ ইতোমধ্যে সামাজিক অনেক সংকট সৃষ্টি করেছে বিধায় নওরয়ে ইতোমধ্যে এদের আনা নাকি বন্ধ করে দিয়েছে। ইংল্যান্ডের মতন জার্মানির পুলিশ অফিসেও অসংখ্য নিঁখোজ তরুণ, তরুণীর ছবি ঝুলছে। যারা জার্মানি থেকে মিসিং। মজার বিষয় হল সবাই জানে এরা সিরিয়ার আইএসআইএল এ যোগ দিতে গিয়েছে কিন্তু এরা যখন ফিরে আসছে তখন বাঁধা দিতে পারছে না। কারণ আইনগতভাবে আপনাকে বাঁধা দিতে হলে রাষ্ট্র বা পুলিশকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি ISIL এ যোগ দিয়েছেন। সে সুযোগ যেহেতু নেই (তদন্ত করতে তো আর সিরিয়ায় যাবে না কেউ) সেহেতু তারা ফিরে আসার সুযোগও পাচ্ছে।
আইএসআইএল হুংকার দিয়েছিল যে, আশ্রয়প্রার্থী মানুষগুলোর মাধ্যমে তারা তাদের সদস্য ইউরোপের দেশগুলোতে ঢুকিয়ে দেবে। ইউরোপের মিডিয়া অনেক কিছুই চেপে যায়, সরকারেও বেকাদায় থাকায় এগুলো নিয়ে কিছু বলতে পারছে না। ইউরোপের স্থানীয় মানুষগুলো অনেক রক্ত সংগ্রাম অতিক্রম করে সামাজিক এই জায়গাটায় তাদের অবস্থান সৃষ্টি করেছে। বর্ণবাদ, ধর্মীয় সংস্কার সবকিছু অতিক্রম করে তারা আজকে এই জায়গায়। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে এরা যাদের আশ্রয় দিচ্ছে এদের একটা অংশ পরিবর্তন হতে চাচ্ছে না, বরং মসজিদকে ব্যবহার করে স্থানীয়দের প্রতি ঘৃণা, রাষ্ট্রের আইন লংঘন করতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অপরাধ, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় এই বান্দারা এগিয়ে আছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীটা ইউরোপের সামাজিক সংকট আরো জটিল করে তুলছে। ইউরোপের মিডিয়া অনেক ঘটনা হাই লাইট না করলেও অনেক খবর মাঝে মধ্যে বের হয়ে যায়। যেমন- মালমো তো বোমা হামলার ঘটনা তেমনভাবে মিডিয়াতে হাই লাইট হয় নি। এছাড়া অনেক শহরে খুনাখুনি, বোমা হামলার মতন ঘটনাও ঘটেছে এই জিহাদীদের হাতে। সিরিয়া থেকে আসার অনেক মধ্যবিত্ত তরুণ ফিরে যাচ্ছে আইএসএল এর কাছে। চলে যাচ্ছে তাদের স্বপ্নের জিহাদে।
ইউরোপের এই সামাজিক সংকটটা হয়তো বড় আকারের রাষ্ট্রীয় সংকট হিসেবে হাজির হবে। স্থানীয় মানুষেরা এই মানুষগুলোর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। অনেকের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম এরা অতি মাত্রায় বিরক্ত এই অভিবাসীদের উপর। মস্তিষ্কে ভাইরাস আছে কিনা এমন যন্ত্র যেহেতু নেই সেহেতু মস্তিষ্কে ভাইরাস নিয়ে এরা সব রাষ্ট্রে ঢুকে পড়ছে। তাই একটা অংশ সুযোগ পেলেই নেমে পড়ছে তাদের স্বপ্নের জিহাদে। অনেকে এটাকে ক্ষুদ্র বললেও হিসেব করলে দেখা যায় এটা ক্ষুদ্র নয়। কিছুদিন আগে একটা রির্পোটে বলা হল আইএআইএল সার্পোট করে ৩% মুসলিম। তাহলে ২০০ কোটির মধ্যে ৬ কোটি মুসলিম প্রত্যক্ষভাবে আইএসআইএল সার্পোট করছে! অন্যদিকে আল-জাজিরা রির্পোট করল; মধ্যপ্রাশ্চ্যের ৯৫% মানুষ আইএসআইএল এর সমর্থক! ইউরোপের অনেকে স্থানে এরা সংখ্যায় কম হওয়ায় এখনো চুপ-চাপ আছে। এসব কারণে ইতোমধ্যে অনেক দেশ তাদের পলেসি পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। অনেক রাষ্ট্রের অতি মানবিকতার সুযোগ এরা এতো ভালো ভাবে ব্যবহার করছে যে তা দেখতে বোঝা যাবে না। জিহাদীপন্থীদের জন্মহার বৃদ্ধি, জিহাদী আমদানী সবকিছু মিলিয়ে ত্রিশ বছর পর ইউরোপের চেহারা অন্য রকম হয়ে যাবে
নিজের বাসায় অতিথির দাপট আসলে কেউ ভালো চোখে নেবে না। তার উপর যদি এভাবে জঙ্গিবাদ, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠানের বিপ্লব বানিয়ে ফেলে শেষ পর্যন্ত এদের শায়েস্ত করতে গেয়ে সবাই সমস্যা সম্মুখিন হবে। অথচ সমস্যা যখন শুরু হচ্ছিল তখন আপনি চুপ ছিলেন। একটা উদাহারণ দিই- বাংলাদেশ ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এই রোহিঙ্গারা ঘোষণা করল বাঙালির শাড়ি পরা অশ্লিল, পয়লা বৈশাখ খারাপ তাহলে কী মেনে নেবেন? এরা এখানে ইসলামিক বিপ্লবের নামে যা করছে তাতে সকল মুসলিম বাঁশটা খাবে না খাবে এশিয়া, আফ্রিকার সকল মানুষ। যা ইংল্যান্ডের নতুন আইনের মাধ্যমে অভিবাসী খেয়ে ফেলেছে। হ্যা! সবাই এই কাজে জড়িত না একটা অংশ জড়িত কিন্তু সেই সংখ্যা কম নয়। তাই এদের বিরুদ্ধে প্রথমে রাস্তায় নামা দরকার ছিল সাধারণ মুসলিমদের, তা নিজেদের স্বার্থেই। ইউরোপের সাগরে ভেসে শুধু মানুষ আসছে না সাথে আসছে সংকট, আসছে অন্ধকারও।
আগস্ট ১১, ২০১৫