বর্তমান র্যার মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ পুলিশ প্রধানের বক্তব্যগুলো সরকারী কর্মকর্তার বক্তব্য না হয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তির বক্তব্য হিসেবে জনগণের সামনে হাজির হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে পুলিশ কর্মকর্তা, সাবেক সেনা কর্মকতারদের রাজনীতি করার ইতিহাস আছে। কিন্তু অবসর গ্রহণের আগে ওনাদের বক্তব্য এতো বেশি রাজনৈতিক বক্তব্য হয়ে উঠছে যে তাতে যে কোন সাধারণ মানুষ প্রশাসনের উপর আস্থা হারাতে বাধ্য। বিগত দিনে বিএনপির পেট্রোল বোমার আন্দোলনের সময় মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ থেকে আমরা রাজনৈতিক বক্তব্য শুনেছিলাম। বিএপির আন্দোলন কে আন্দোলন বলা যায় কিনা, এ বিষয়ে র্যাবের পোশাক পরে কী মন্তব্য করা যায়? পেট্রোল বোমায় শত শত মানুষ দগ্ধ হয়েছে। অসংখ্য মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছে। পুলিশ র্যাব এগুলো থামাতে পারে নি। ৫৪ দিনের পেট্রোল বোমার আন্দোলনে আমরা সাধারণ মানুষ আগুণের ভয় নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি, সাধারণ মানুষ স্বজন হারিয়েছে। অন্যদিকে ওনারা প্রশাসনিক কাজে ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে গেলেন।
গণজাগরণ মঞ্চ হওয়ার আগে মোটাদাগে ইসলামপন্থীরা ব্লগারদের উপর এতোটা মারমুখি ছিল না। তবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা অনেক বছর থেকেই ব্লগারদের উপর নজরদারি রাখছে। ফখরুদ্দিনের তত্ত্ববধায়কের সময়ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ব্লগ ও ব্লগার বিষয়ে তৎপর হয়ে উঠে! ২০১৩ সালে রাজিব হায়দার যখন নিহত হলেন তখন ‘আমার দেশ’ প্রতিকার মাহমুদুর রহমান রাজিব হায়দারের কিছু লেখা পত্রিকায় প্রকাশ করে জঙ্গিদের খুনকে বৈধতা দিয়ে দিল। মাহমুদুর রহমানরা ২০১৩ সালে যা করেছিলেন সেই কাজটি এখন আওয়ামী লীগের কিছু ব্লগার ও আইন-সংস্থার কর্মকর্তা করছেন। ৭১ টিভির এক টক শোতে বেনজির আহমেদ আসিফ মহিউদ্দীনের কাবা রঙ করার ছবি দেখিয়ে দিয়ে মাহমুদুর রহমানের মতন খুনকে বৈধতা দিতে চাচ্ছেন। অন্যদিকে অমি রহমান পিয়াল খুনীদেরও ব্লগার হিসেবে উল্লেখ করে বলছেন-যারা খুন হচ্ছে তারাও যেমন ব্লগার তেমনি যারা খুন করছে তারাও ব্লগার। এক বছরে চারজন ব্লগার খুন হলেন। এতোগুলো আইন সংস্থা মিলেও কোন আসামী গ্রেফতার করতে পারল না। এছাড়া পহেলা বৈশাখের যৌন নিপীড়নের অভিযোগেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না আমাদের আইন-শৃংখলা বাহিনী। উল্টো যৌন নিপীড়নের শান্তির দাবী যারা তুলেছে তাদের উপর চড়াও হয়। এখন যেহেতু খুনীদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না তাই নিজেদের র্ব্যথতা ঢাকার জন্য তারা ব্লগারদের লেখালেখির সীমানা নির্ধারণ করে দিচ্ছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষকের মতন ব্লগারদের নীতি নৈতিকতা শেখাতে টক শো’তে আসছেন।
এই র্যাবের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানা এলাকার একটি দরবার শরিফ থেকে দুই কোটি টাকা লুট করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া বিচার বর্হিভূত হত্যার জন্য দেশে বিদেশে এই র্যাব সমালোচিত। র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা এবং নজরদারি করার জন্য সংস্থাটির কেনা সরঞ্জামের একটি চালান আটকে দিয়েছে সুইজারল্যান্ড। বিষয়টি স্বীকার কেরেছেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে নারায়নগঞ্জের সিক্স মার্ডারের কলংক তো আছেই। বিনীত ভাবে বেনজির আহমেদ কে জিজ্ঞেস করতে চাই; নিজেদের নীতি নৈতিকতার বালাই না রেখে, চক্ষু লজ্জা বিসর্জন দিয়ে টক শো’তে কথা বলতে কী একটুও ইতস্তত হোন না? অবসরে শেষে নির্বাচনে গিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে হয় তা না হয় মানলাম কিন্তু তাই বলে আগে থেকে অভ্যাস শুরু করলে পোশাকের অসম্মান হয়। জুনিয়র অফিসাররা আপনাদের থেকে প্রশাসনিক আচার-আচরণ না শিখে রাজনৈতিক ব্ক্তব্যটাই শিখবে যা দেশের জন্য মঙ্গল বহে আনবে না।
ফেসবুকে একটা পেইজ আছে নাম-নয়ন চ্যার্টাজি! ইসলাম প্রচার আজকাল আর আরবি নামে হয় না! তাই ব্রাহ্মণ নামে আজকাল ইসলাম প্রচার চলছে। জিহাদ করার জন্য যেমন ব্যাংক লুট হালাল তেমনি ইসলাম প্রচারের জন্য ব্রাহ্মণের নাম ব্যবহার করা দোষের কিছু নয়। গত ছয় বছরে কতো মানুষ দেশ ছেড়েছে, কতো পরিবার ক্ষমতাসীন কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠদের হাতে লাঞ্চিত হয়েছে, ওদের হাতে সব হারিয়ে রাতের অন্ধকারে পাশের দেশে চলে গেছে সেই হিসেব আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়; মাতালকে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে মসজিদে ঢিল মেরে হিন্দুদের বাড়ি, দোকান লুট। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়; ওয়াজের নামে ভিন্ন সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলার করার মতন উষ্কানিমূলক বক্তব্য! আমাদের কাছে শুধু গুরুত্বপূর্ণ ইসলাম। আওয়ামী লীগ সরকার পাকিস্তানের মতন ব্লাসফেমি আইন করেছে কিন্তু ব্লাসফেমি নামটি শুধু দেয় নি। পুলিশ থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেন; ধর্মে আঘাত দিলে গ্রেফতার! ওনারা স্পষ্ট করে বলেন না যে, শুধু ইসলাম নিয়ে সমালোচনা করলে গ্রেফতার হবে। এছাড়া প্রতিদিন সপ্তাহে মন্দির ভাঙচুর করলেও কোন অসুবিধা নেই। কোন ধর্মকে অপমান করলে যদি গ্রেফতার হয় তাহলে বাংলাদেশের ইমান ও হুজুরদের জন্য বাড়তি পাঁচটা জেলখানা তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের আর কোন সমস্যা নেই। তাই সবাই ইসলাম বাঁচাতে টক শো’তে চলে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই খন্দকার মোশরফ হোসেন যখন চক্ষুলজ্জা উপেক্ষা করে হিন্দু জমিদার বাড়ি দখল করতে পারেন সেখানে এই সরকার ভিন্ন সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা দেবে তা আশা করি না। ধূর্ত টক শো জীবীরা আজকাল টশ শো’তে কিছু নয়ন চ্যার্টাজির আমদানী করান। এসব নয়ন চ্যার্টাজি ব্যক্তিগত লাভ-লোকশানের কথা মাথায় রেখে বক্তব্য রাখেন! আজকাল আবার ইসলামের হেফাজতও করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের হাতে যখন ভিন্ন সম্প্রদায় লাঞ্চিত হয় তখন ওনারা পুরাতন এক থিউরি আমদানী করেন- উহারা সহি আওয়ামী লীগ নয়। সেই হিসাবে বর্তমান মন্ত্রী খন্দকার মোশারক তাহলে কী জানতে খুব মন চায়। নিজেদের স্বার্থ যেহেতু ক্ষুন্ন হবে তাই এসব বিষয়ে কথা বলতে তারা পছন্দ করে না। এছাড়া এই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন পেন্সিডিলসহ ধরা খাওয়া ওলামা লীগ ব্লগার লিস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে দেয়। এছাড়া নারীর বিয়ের বয়সের বিরোধীতা, বই পত্রে অমুসলিম লেখকগণের লেখা বাতিল, প্রধান বিচারপতি কেন অমুসলিম হবে এই নিয়ে তাদের বিরোধীতা গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের ওলামা লীগের কথাগুলো যদি বিএনপির ওলামা দল বলত তাহলে প্রগতিশীলতার তুফান বয়ে যেত। অথচ দিনের পর দিন এসব অসভ্যের বিষয়ে সরকারী দল ও আমাদের প্রগতিশীল সংগঠনগুলো চুপ! বিএনপির সাথে জামাতের মতন সংগঠন যেমন আছে তেমনি বাংলা ভাইকে ফাঁসি দিয়ে বিএনপি কিছুটা হলেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যা আওয়ামী লীগ পারে নি। আওয়ামী লীগ জানে আওয়ামী লীগের মতন এই পঁচা কলা ছাড়া অধিকাংশ মানুষের উপায় নেই তাই সেই সুযোগটা খুব দারুনভাবে ব্যবহার করছে! আওয়ামী ছাড়া উপায় নেই এমন দোহাই দিয়ে সুইস ব্যাংকে টাকার পাহাড় গড়েছে নেতারা। সারা জীবনের জন্য দাস হয়ে যাওয়া অমুসলিমগুলো তাদের উপর অত্যাচার বিষয়ে মুখ খুলছে না। দাসত্ব করতে করতে দাসেরও নাকি স্বাধীন হওয়ার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু বাংলাদেশের অমুসলিম দাসগুলো বরই বিচিত্র! প্রিয়দল মন খারাপ করবে তাই রাজনৈতিদ নেতার হাতে জমি দিয়ে রাতের আঁধারে দেশ ছেড়ে চলে যায়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠের কেউ ভোট দিতে না গেলেও মোটা দাগে এরাই ভোট দিতে যায়। পরবর্তীতে বাড়ি ঘর হারিয়ে এর খেসারত দিতে হয়।
ব্লগার হত্যার খুনীদের ধরার ক্ষমতা নেই যাদের তাদের উপদেশ দেওয়ারও নৈতিক অধিকার নেই। শেখ মুজিবের খুনীদের জন্য অজয় রায় রাজপথে সংগ্রাম করেছেন, শেখ মুজিবের নামে একাত্তরে যুদ্ধ করেছেন সেই অজয় রায়কে এখন সন্তান হত্যার বিচার দরজায় দরজায় গিয়ে চাইতে হয়। কৃতজ্ঞতার খাতিরে প্রধানমন্ত্রী গোপনে টেলিফোন করলেও প্রশাসনকে কোন নির্দেশ দেয় নি। যদি প্রশাসনকে নির্দেশই দেওয়া হতো তাহলে রাজিব হায়দারের খুনীদের মতন অভিজিৎ রায়ের খুনীরাও ধরা পড়ত। অথচ উল্টো প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সন্তান জয় বলছেন-যারা দ্রুত বিচার দাবী করেন তারা নির্বোধ, বোকা। জানতে খুব ইচ্ছে করে, অভিজিৎ রায়ের খুনীদের কী বছর দশেক পর ধরা হবে? নাকি দশ বছরও তারাহুরা হয়ে যাবে? আসলে সবকিছু হল দায়িত্বহীনতা ও ব্যর্থতা ঢাকার কৌশল মাত্র। বিএনপি জামাতের কোন মুখেশ নেই্ ওরা স্পষ্ট করেই বলে ব্লগাদের তারা পছন্দ করে না। কিন্তু বছরের পর বছর আওয়ামী লীগ কখনো টুপি পরে কখনো প্রগতির ছাল গায়ে জড়িয়ে ব্লগারদের সাথে এক তামাশায় লিপ্ত হয়েছে। প্রশাসনির ব্যর্থতা, মাঠ-পর্যায়ে কর্মীদের অত্যাচারকে ধামাচাপার জন্য মিডিয়ায় একটা বড় অস্ত্র ব্লগিং ইস্যু। যেখানে আসামী ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় ব্লগারদেরই আসামী করা হচ্ছে! মাঝে মধ্যে ভাবি; রাজা গণেশের শাসন কাল কী এমনটাই ছিল?
[…] […]
LikeLike
[…] […]
LikeLike