
Date and time: 1 November 2015 (Sunday); 2pm.
Place: Altab Ali Park, East London
প্রতিবার ব্লগার খুন হওয়ার পর মোবাইলে কল আসত বেঁচে আছি কিনা। প্রতিদিন আমার বাবা কল করে খবর নিতে তার ছেলে বেঁচে আছে কিনা। বিদেশ পড়তে থাকা বন্ধুরা ব্লগার খুন হওয়ার পর ভয়ে ভয়ে নিউজ পড়ত নিহতের মধ্যে আমার নাম দেখতে হয় কিনা। অনেক ভুলের মাঝে ছিলাম। ভেবেছিলাম ব্লগার গ্রেফতার হওয়ার মধ্য দিয়ে ইতি টানবে বিষয়টি। কিন্তু নাহ আমরা ভুল ছিলাম।
শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবুল কাশেম ফজলুল হক স্যার প্রায় সময় একটি কথা বলেন; পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ বই আছে। কিন্তু তোমাকে এই ছোট্ট জীবনে বই পড়তে সবে বাছাইকৃত কিছু বই। ২০১৭ নাম্বার রুমে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাস ছিল। তৎকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন শ্রদ্ধেয় আবুল কাশেম ফজলুল হক স্যার। বিদ্যুৎ বিহীন প্রথম ক্লাসে স্যার পড়ানোর ফাঁকে জিজ্ঞেস করছিলেন; বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কারো কোন প্রশ্ন আছে কিনা? সেই বয়সে কিছুটা ফাজিল প্রকৃতির হওয়ায় স্যার’কে বললাম; বাংলাদেশের সর্বচ্চ বিদ্যাপীঠ হওয়ার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ চলে যাওয়াকে স্যার কীভাবে দেখেন? স্যার বললেন; দরিদ্র দেশে এটা আমাদের মেনি নিতে হবে। আজকে সারের ছেলেকে বই প্রকাশের জন্য খুন হতে হোল। পত্রিকার মাধ্যমে জানলাম স্যার বললেন- ‘হত্যাকারীদের প্রতি আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই না। কেননা বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক, সম্পূর্ণ সাংস্কৃতিক। আমি জানি, বিচার চেয়ে কোনো প্রতিকার হবে না।’
স্যার যেমনটি আমাদের বলছিলেন; সারা দেশে বিদ্যুতের সমস্যা কারণে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও একই সমস্যা দেখে দেবে তেমনি সমগ্র দেশে বিচারহীন সংস্কৃতিতে স্যার নিজের ছেলের জন্য অহেতুক বিচারের প্রত্যাশা করেন নি। কারণ স্যার জানেন এই রাষ্ট্র তাঁর সন্তান হত্যার বিচার করবে না।তিনি স্পষ্টভাবে মিডিয়ার সামনে এও বলেন যে, “ওনার সন্তান ওনার মতন ধর্মের পক্ষেও নয়, ধর্মের বিপক্ষেও নয়। ভাল লেখা পেয়েছে তাই ছেপেছে। অভিজিৎ তার বন্ধু ছিল তাই সে বই ছেপেছে এটাই তার অপরাধ ছিল।”
আর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক নিহত লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বলেছিলেন- ব্লগার হত্যায় সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে। এছাড়াও তিনি বলেন- অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড তদন্তে তিনি সন্তুষ্ট নন। ২০১৩ সালে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া হেফাজতের সাথে সুর মিলিয়ে ব্লগারদের নাস্তিক ঘোষণা করেছেন এবং বিএনপি’র মুখপাত্র ‘আমার দেশ’ পত্রিকা উদ্দেশ্যমূলক-ভাবে ব্লগ থেকে কিছু লেখা টুকে নিয়ে ব্লগার বিদ্বেষী একটি মনোভাব সৃষ্টি করতে সফল হয়েছে।
অজয় রায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছেন, ৭৫ পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিবের খুনিদের ফাঁসির দাবীতে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। গণজাগরণের সময় প্রধানমন্ত্রী রাজীব হায়দারকে দেখতে যেতে (গোয়েন্দা রিপোর্টের ঘটতি থাকার কারণে জানতেন না রাজীব নাস্তিক ছিলেন) পারলেও অভিজিৎ রায়ের ছেলে অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার পর জনগণের অনুভূতির ভোট বিবেচনা করে আর দেখতে গেলেন না। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী অজয় রায়ের সাথে কথা বললেও বিষয়টি মিডিয়াতে আনতে দেন নি। এর পর রয়টার্স-এ প্রধানমন্ত্রী’র তথ্য উপদেষ্টা ও পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় স্পষ্টভাষায় বলে দেন নাস্তিক হত্যায় সরকারের কিছু করার নেই। এবং অভিজিৎ রায় যে স্বঘোষিত নাস্তিক ছিলেন তা সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করে বুঝিয়ে দিলেন স্বঘোষিত নাস্তিকদের বিচার করতে এই সরকার আগ্রহী নয়। এরপর বিভিন্ন সময় পুলিশ প্রধান ও র্যাব প্রধানদের বিভিন্ন মন্তব্যের কারণে এই কথা স্পষ্টভাবে আমরা বুঝতে পারছি যে, বর্তমান সরকারও ব্লগার হত্যার বিচারে ততটা উৎসাহী নয়।
তাই অজয় রায়ের কথা পুনরায় বলতে হয় ব্লগার হত্যায় সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থন আছে এবং ফজলুল হক স্যারের মতন আমরাও বলতে চাই-ব্লগার হত্যার বিচার আমরা চাই না। কারণ আমরা জানি বিচার চেয়ে আসলে কোন লাভ হবে না।