মুক্তচিন্তার প্রকাশকদের প্রতি শ্রদ্ধা

৩১ অক্টোবর ২০১৫ দিনটি অন্য দিনগুলো থেকে ব্যতিক্রম!গণজাগরণ মঞ্চ হওয়ার পর ইসলামিক জঙ্গিরা প্রথম খুন করে ব্লগার রাজীব হায়দার’কে। এরপর ২০১৫ সালে ঢাকার ‘বই মেলা’য় অভিজিৎ রায়, সিলেটে অনন্ত বিজয় দাশ, ঢাকার রাজপথে ওয়াশিকুর বাবু, জুম্মাবারে ঢাকার বাসায় নীলয় চট্টোপাধ্যায়। এই বছর আমরা ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট হয় মোট ৪ জন লেখকে হারাই। কিন্তু আজকের দিনটি ব্যতিক্রম এই কারণে যে, আজকে শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ গুরুতর-ভাবে আহত হোন ব্লগার ও লেখক রণদীপম বসু ও কবি তারিক রহিম। তারা যখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যুর সাথে যাচ্ছেন ঠিক সেই সময় আরেকটি নিউজ থেকে স্তব্ধ হয়ে যাই; শাহবাগের আজিজ মার্কেটে ঢুকে  জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা কর হয়। অতীতে একই দিনে একই সাথে লেখক-প্রকাশকদের উপর এভাবে হামলা হয় নি।

জাগৃতি প্রকাশনী ও শুদ্ধস্বর থেকে অভিজিৎ রায়ে বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বই হল-শুদ্ধস্বর থেকে অবিশ্বাসের দর্শন, জাগৃতি থেকে বিশ্বাসের ভাইরাস। পরবর্তীতে “অবিশ্বাসের দর্শন” ও জাগৃতি পূনঃপ্রকাশ করেছিল। বিশ্বাসের ভাইরাস বইটি বের হওয়ার পর থেকে ইসলামিক মৌলবাদীরা অভিজিৎ রায়’কে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল। যদিও অভিজিৎ রায় বরাবরের মতন হুমকিগুলোকে আমলে নেন নি। অনলাইনে বই কেনা-বেচার সাইট ‘রকমারি প্রকাশনী’ যেন বিক্রি না করে তার জন্য অনলাইনে হুমকি দেয় অতীতে হিজবুত তাহরী’র কর্মী শফিউল রহমান ফারাবী। রকমারি’র প্রকাশক বইটি তাদের সাইট থেকে সরিয়ে নেন। কে কী বই বিক্রি করবে তা ব্যবসায়ী’র উপর নির্ভর করে। কিন্তু জঘন্য বিষয় ছিল; রকমারি’র মালিক  সোহাগ অনলাইনে নিজের ইমানী পরীক্ষা দিতে ফারাবীর নিকট ধর্না দেন। সে সময় অভিজিৎ রায়কে নিয়ে লিখেছিলাম- আলো হাতে চলিয়াছে আধারের এক যাত্রী ব্লগটি

ফারাবীদের ভয়ে কিংবা ইসলামিক মৌলবাদীদের ভয়ে যারা মুক্তিচিন্তা’র বই প্রকাশ করা থেকে বিরত ছিলেন না তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন-শুদ্ধস্বরের টুটুল এবং জাগৃতি প্রকাশনীর দিপেন। জাগৃতি প্রকাশনী’র দীপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রখ্যাত শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী আবুল কাশেম ফজলুল হক স্যারের ছেলে। স্যার নিজেও মুক্তচিন্তার একজন মানুষ। ২০০৭ সালে দীপন তার ‘অন্ধকার’ ব্লগের সব পোস্ট মুছে দিয়ে  ৮-ই নভেম্বর লিখেছিলো ‘নির্বাসনে যাচ্ছি।

আমরা দেখেছি ২০১৫ সালের বই মেলায় হেফাজতের আপত্তির মুখে বাংলা একাডেমি বই মেলা থেকে ‘নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর’ বইটি নিষিদ্ধ করে। সেই সাথে প্রকাশক রোদেলা প্রকাশনী’কে বন্ধ করে দিয়ে আগামী বছরের জন্য বই মেলা থেকে নিষিদ্ধ করে। বই নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অথচ বাংলা একাডেমি আগ বাড়িয়ে বই নিষিদ্ধ করেছে। নবী মুহাম্মদের বইটি কেন নিষিদ্ধ হল এই প্রশ্নের জবাবে বাংলা একাডেমির পরিচালক বলেন-আমরা শুনেছি বইটি পড়ে অনেকের অনুভূতি আহত হচ্ছে তাই বইটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে! একজন পরিচালক বই নিষিদ্ধের আগে বইটি পড়ে দেখার কোন প্রয়োজনীয়তা বোধ করলেন না। বই নিষিদ্ধের প্রতিবাদে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে গুটি কয়েক টিএসসি’র প্রতিবাদ সমাবেশে হাজির হোন। অনেকেই এই বিষয়ে কথা বলতে চান নি এতে সরকারের উন্নয়ন যদি বাঁধাগ্রস্ত হয়! আরেক পার্টি অনুভূতির হেফাজতের কণ্ঠে সুর মিলিয়ে পরোক্ষভাবে মৌলবাদীদের পক্ষেই কথা বলেছেন।

আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে সকলের অবদান আছে। বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ বেনামী মাদ্রাসা, মসজিদ তৈরি, ওয়াজ মাহফিলে ধর্মের নামে উগ্রবাদী মতবাদ প্রচার, টেলিভিশন চ্যানেলে পিস টিভির মাধ্যমে ওহাবী মতবাদ প্রচারের সুযোগ তো আমরাই করেছি। লতিফ সিদ্দিকী’র যেদিন জামিন হল সেদিন লালবাগের হেফাজতে ইসলামের নেতা বলেছিল-লতিফ সিদ্দিকীকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই কতল করা হবে। জনসম্মুখে এভাবে হত্যার হুমকি দেওয়ার পরও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে নি। উল্টো র‍্যাব মহাপরিচালক বেনজির সাহেব ব্লগারদের আসামী করে টক শো’তে হাজির হোন। সেই বিষয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম-সরকারী কর্মকর্তা নাকি রাজনৈতিক নেতা? সাথে কিছু নয়ন চ্যার্টাজি

সরকারের ব্যর্থতা, ধর্মের নামে উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের বৈধতা, মৌলবাদী দলগুলোর সাথে সরকারের আপোষের কারণে বাংলাদেশে একের পর এক মুক্তচিন্তার মানুষ খুন হচ্ছে। লেখকের সাথে সাথে আঘাত আসছে প্রকাশকদের উপরও। প্রকাশকদের অপরাধ তারা বইগুলো প্রকাশ করছে, মানুষকে ধর্মান্ধ-মুক্ত করছে। দেশে একের পর এক হত্যা, হামলা হওয়ার পরও বিএনপি-জামাত সরকারের মতন বর্তমান সরকার বলে যাচ্ছে- দেশে কোন জঙ্গি নেই। যারা জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব দেখে তারা নাকি রাবিশ! এই সরকার কতো বড় রাবিশ তা তাদের মন্ত্রী’দের কথা-বার্তায় প্রমাণিত হয়। পদার্থ বিজ্ঞানের জনপ্রিয় শিক্ষক অজয় রায় ছিলেন অভিজিৎ রায়ের বাবা। আজকে জাগৃতি প্রকাশকের মালিক দীপেন হচ্ছেন বাংলা বিভাগের বুদ্ধিজীবী আবুল কাশেম ফজলুল হকের ছেলে। যে দেশে বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা ছেলে হত্যার বিচার পায় না সেখানে সাধারণ মানুষ কীভাবে আছে তা সহজে অনুমান করা যায়।

লেখক ও প্রকাশক হত্যার বিচার চাই।

প্রথমে শুদ্ধস্বর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত। পরবর্তীতে জাগৃতি থেকে প্রকাশিত হয়।
প্রথমে শুদ্ধস্বর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত। পরবর্তীতে জাগৃতি থেকে প্রকাশিত হয় বইটি।
জাগৃতি থেকে প্রকাশিত
জাগৃতি থেকে প্রকাশিত
জাগৃতি থেকে প্রকাশিত।
শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত।

এছাড়াও এই বছর (২০১৫) শুদ্ধস্বর থেকে বের হয় শূন্য থেকে মহাবিশ্ব বইটি।

10861002_837921116264160_5370976023242314788_o

এছাড়াও শুদ্ধস্বর থেকে বের হয়েছিল অভিজিৎ রায়ের “ভালোবাসা কারে কয়” বইটি

বইটি শুদ্ধস্বর থেকে ২০১২ সালে বের হয়।
বইটি শুদ্ধস্বর থেকে ২০১২ সালে বের হয়।

One comment

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.