
ষাট ও সত্তরের দশকে মার্কিন তরুণ প্রজন্মকেই মূলত হিপ্পি বলা হয়ে থাকে। এই তরুণ প্রজন্মের চোখে ছিল বিপ্লবের স্বপ্ন, ছিল সমাজ পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা। হিপ্পি আন্দোলন শুধু মার্কিন দেশেই সীমাবদ্ধ থাকেনি ছড়িয়ে পড়েছিল দেশ থেকে দেশান্তরে। আর সেসব দেশেও সৃষ্টি হয়েছিল বিদ্রোহ মনো-ভাবাপন্ন এক নবতর স্বাপ্নিক আন্দোলন। হিপ্পি আন্দোলনে কোন লিখিত ইশতেহার বা কোন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছিল না শুধু ছিল পরিবর্তনের জন্য হাহাকার। হিপ্পি সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ; কর্পোরেট ভোগবাদ, আমেরিকার ভিয়েতনাম যুদ্ধ, এর আগে দুইটি বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ সবকিছু পরিহার করে পরি-ভ্রমণশীল একটি সহজ জীবনধারার এক তীব্র আকুতি।
আমেরিকার সানফ্রানসিসকো ছিল হিপ্পি বিপ্লবের কেন্দ্র। এখানেই ১৯৬৭ সালের গ্রীষ্মে মার্কিন সমাজের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে এক লাখ সংস্কৃতি কর্মী ও হিপ্পিদের এক মহা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই মহা-সমাবেশ ‘দ্য সামার অব লাভ’ নামে পরিচিত। ওই একই সময় হিপ্পিরা নিউ ইয়র্ক, লস এঞ্জেলস, ফিলাডেলফিয়া এসব শহরে জড়ো হয়ে নিজেদের উপস্থিতি তুলে ধরে। এর ফলে হিপ্পি-দর্শন এর প্রতি মার্কিন জনগণ সচেতন হয়ে ওঠে। এভাবে পঞ্চাশের দশকে-বিশেষ করে মার্কিন সাহিত্য-মহলে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে। এই আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন কবি অ্যালেন গিনসবার্গ।
পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে এদের কেউ কেউ বলতে লাগল ‘আই অ্যাম হিপ্পি’। আবার কেউ কেউ ওদের বলত হিপ্পিস্টারস।এভাবে হিপ্পি আন্দোলন শুরু। হিপ্পি-দর্শনের মূলে রয়েছে প্রেম ও স্বাধীনতা-যা বিদ্যমান দমনমূলক পুরোহিত-তান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোয় নেই। এ কারণেই অনেকে ষাটের দশকের হিপ্পি আন্দোলনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছিল। কারণ হিপ্পি আন্দোলন ছিল প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতা-কাঠামোর বিরুদ্ধে বিপ্লব। যদিও হিপ্পিরা নিজেদের ক্ষমতার ভিত্তি স্থাপন করতে চায় নি। হিপ্পিরা অন্যদের ওপর তাদের বিশ্বাস চাপিয়ে দেয় না। তারা নিজেদের জীবনধারা ও যুক্তি দিয়ে পৃথিবীকে বদলাতে চেয়েছিল।
অন্যদিকে বর্তমান সময়ে আমরা দেখছি ISIS মুখী এক শ্রেণির তরুণ-তরুণীকে। যারা উন্নত বিশ্বে বসবাস করেও ISIS এ যোগ দেওয়ার জন্য নিজ রাষ্ট্রে সমাজ ত্যাগ করছে। যাদের চোখেও পরিবর্তনের স্বপ্ন কিন্তু সেই পরিবর্তন সুন্দরের নয় দানবের। পত্রিকা খুললেই দেখি কানাডা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া থেকে অনেক বাংলাদেশী তরুণ তরুণীও ISIS এ যোগ দিচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের সকল দেশের কিছু সংখ্যক মুসলিম তরুণ-তরুণী আইএস এ যোগ দিচ্ছে। এই পরিবর্তন কিসের; ধ্বংসের, সৃষ্টির, যৌন জিহাদের, ঘৃণার, নাকি সুন্দরের? ইরাকে প্রাচীন সভ্যতা গুড়িয়ে দিচ্ছে আইএস। তারা কোন ইতিহাস রাখবে না। সাদা খাতার মতন একটি পৃথিবীই তৈরি করা তাদের স্বপ্ন। যে পৃথিবীতে কোন কবি থাকবে না, কোন লেখক থাকবে না, কেউ আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখবে না আর সেই পৃথিবী তৈরি করার জন্য উষ্মাদের মতন তরুণ-তরুণীরা ছুটে যাচ্ছে IS এর দিকে। যে ছেলে রান্না ঘরে পেঁয়াজ কাটেনি সে আজ ইসলামিক বিপ্লব ও হুরের নেশায় অবলীলায় মানুষের গলা কেটে যাচ্ছে। আই-এস এর প্রতি তরুণ সমাজের মানসিক ও শারীরিক সমর্থন সহজে ম্লান হবে বলে মনে হয় না।
[…] যুদ্ধ, একই সমাজে আমেরিকান সমাজে হিপ্পি আন্দোলন তীব্র হওয়া, সব কিছু মিলিয়ে ভাসিন্থার […]
LikeLike
[…] যুদ্ধ, একই সমাজে আমেরিকান সমাজে হিপ্পি আন্দোলন তীব্র হওয়া, সব কিছু মিলিয়ে ভাশিষ্ঠার […]
LikeLike
[…] যুদ্ধ, একই সমাজে আমেরিকান সমাজে হিপ্পি আন্দোলন তীব্র হওয়া, সব কিছু মিলিয়ে বশিষ্ঠর মনে […]
LikeLike