কিছুদিন আগে আমির খানের একটা ছবি বাংলাদেশের বিভিন্ন পেইজে শেয়ার করতে দেখলাম; আমির খান তার মাকে নিয়ে হজ্ব করে আসলেন। সামাজিক কুসংস্কারের বিপক্ষে আমির খান সবসময় অবস্থান নিয়ে থাকেন। তাই এই প্রিয় অভিনেতা সপ্তাহ দুয়েক আগে হাজী হয়েও নিজের শরীর মেডিক্যালে দান করে গেছেন। নিজের আস্তিক্য বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক বিধায় এই নিয়ে আমাদের কারো আগ্রহ নেই। কিছুদিন আগে অণু ভাইয়ের মাধ্যমে জানার সুযোগ হল যে; ফিনল্যান্ডে মৃত ব্যক্তির শরীর রাষ্ট্র স্বাভাবিকভাবে মেডিক্যালে নিয়ে যায়। তাই কারো আপত্তি থাকলে তা আগে জানাতে হবে। মূলত মোটা দাগে আপত্তি থাকে এশিয়া কিংবা আফ্রিকান ধর্মকেন্দ্রিক মানুষগুলোর। মৃত শরীরের অঙ্গগুলো মাটিতে না পচিয়ে জীবিত মানুষগুলোর জন্য দান করে নেওয়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একটি কাজ বলে মনে হয়।
মানুষের জন্য জীবনে কিছু করতে চাইলে নিজের নিথর-মূল্যহীন শরীরটা দিয়ে অনেক বৃহৎ কিছু করে যাওয়া সম্ভব। পত্রিকায়, অনলাইনে অনেক সময় অন্ধ, কিডনির সমস্যার সম্মুখীন মানুষগুলোর জন্য অনেক আবেগী পোস্ট দেখি অথচ এই সমস্যার সমাধান আমাদের হাতেই। বাংলাদেশে প্রতিদিন যতো মানুষ মারা যায় তার দশ শতাংশ মানুষ যদি তাদের মরণোত্তর শরীর দান করে যায় তাহলে সমাজে কেউ আর অন্ধ থাকবে না, কেউ কিডনির অভাবে মারা যাবে না। দয়াবান ঈশ্বরের অবাধ্য হয়ে কেউ নিজের শরীরটি দান করে দিতে রাজি নয়। কারণ স্বার্থ-কেন্দ্রিক মানুষ নিজের ইহলোক, পরলোকের বাহিরে চিন্তা করার ক্ষমতা রাখে নাহ। অথচ শরীর দান করতে কাউকে অবিশ্বাসী হতে হয় না। হজ্ব কিংবা তীর্থ করে এসেও মানবের কল্যাণে শরীরটি দান করে দেওয়া সম্ভব যদি মানবের সেই ইচ্ছা থাকে। তখন সমাজ ও মানুষের কাছে ধর্মটি আরও মানবিক হয়ে উঠত! অথচ স্বর্গ-লোভী নভোচারীরা তা মানতে নারাজ! বেহেস্তি কেন্দ্রিক মানুষগুলো তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য ঈশ্বরের প্রত্যাশায় বসে থাকে তাই তাদের সমস্যার কোন সমাধান হয় না। এর একটিই কারণ ঈশ্বর হয়তো তাদের ভরসাতেই বসে আছেন।
কথাগুলো এই কারণে বললাম যে গতকাল একটি ইভেন্ট চোখে পড়ে। সাদিয়া তুত তায়বা নামে শিশুটি অসুস্থ। সাদিয়া নামের এই ছোট বাচ্চাটাকে বাঁচানোর জন্য দুটো মাত্র জিনিষ দরকার-
১) একটা সুস্থ লিভার মানে কলিজার কিছু অংশ।
২) ৬০ লক্ষ টাকা।
ধারণা করি, দান করা লিভার না পাওয়া গেলে হাসপাতাল থেকে লিভার কিনবে হবে। বাংলাদেশের অনেক মানুষ গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের জন্য লিভার বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশে একটি চক্র আছে যারা হত-দরিদ্রদের থেকে কিডনি, লিভার সংগ্রহ করে থাকে। কিছুদিন আগে জয়পুর থেকে এমনই এক পাচারকারী’কে গ্রেফতার করে পুলিশ। পত্রিকার ভাষ্যমতে মানুষের কিডনি পাচার করেই ক্ষান্ত হয় নি পাচারকারী সাইফুল ইসলাম। ফুসলিয়ে-ফাসলিয়ে বা যে কোন অজুহাতে লিভার বা কলিজা বিক্রি করতেও বাধ্য করতো হত-দরিদ্রদের। অথচ আমরা যদি মরার পর দেহ দান করতাম তাহলে পৃথিবীর হাজারো অন্ধ মানুষ পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ পেত। এই বিষয়ে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হল ধর্ম! ধর্ম যে সময় নাজিল হয়েছে সেই সময় এই বিষয় সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না বলেই দেহ দান বিষয়ে ধর্মে পজিটিভ কোন দৃষ্টিভঙ্গি নেই। আশার বাণী হচ্ছে- ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত ইসলাম-বিশারদদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা অঙ্গ-দানের ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছন৷ তাঁরা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া ও মস্তিষ্কের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া এই দুই অবস্থাকেই মৃত্যু বলে মনে করেন। এ ছাড়া তাঁরা অঙ্গ-দানকে মৃতের প্রতি অসম্মান বলে মনে করেন না। বরং অঙ্গ-দান অন্যের প্রতি সহানুভূতিরই পরিচায়ক৷ স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হলে জীবিত মানুষও অঙ্গ-দান করতে পারে৷ বর্তমানে বহু ইসলামি দেশেই বর্তমানে অঙ্গ-দান অনুমোদিত ও বাস্তবায়িতও হচ্ছে। (লিংক)
মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনা আইন, ১৯৯৯’ নামে বাংলাদেশের আইনটিতে বলা হয়েছে, অসুস্থ ব্যক্তিকে তাঁর নিকট আত্মীয়রা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন৷ তবে বাংলাদেশে মৃত ব্যক্তিদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার৷ কেননা, মৃত্যুর আগে কেউ তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দানের অঙ্গীকার করলেও মারা যাওয়ার পর তাঁর স্বজনরা এ ব্যাপারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আগ্রহী হন না। তবে যুব সমাজ যদি পারিবারিক-ভাবে দেহ দান বিষয়ে জনমত গঠন করতে পারে তাহলে ফিনল্যান্ডের মতন বাংলাদেশেও হয়তো মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবে দেহদান আইন করতে পারব। তবে যারা করতে চাইবে না তারা সরকারী নথীতে নিজের নাম লিখে যাবে যে মানব সভ্যতার জন্য তারা দেহ দিতে ইচ্ছুক নন।
মানব সভ্যতার জন্য আপনি আপনার শরীরটি মরণোত্তর দান করুণ এবং পরিবারের সদস্যদের এই বিষয়ে উৎসাহী করুন।
জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন
মানুষের মৃত্যুর পর অসার, নিস্পন্দ দেহখানি কবরের মাটিতে গলে মিশে যায়। অথবা সম্প্রদায় বিশেষে অগ্নিদাহ হয়ে ছাইভস্মে পরিণত হয়। মানবদেহের মতো মূল্যবান একটি সম্পদের এভাবে অপচয় হওয়া সমর্থন করা যায় না, যুক্তিযুক্তও নয়। যে কোনো শুভ-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ জীবদ্দশায় যেমন তেমনি মৃত্যুর পরও মানব কল্যাণে অবদান রাখতে পারেন।
মরণোত্তর দেহ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে দান করে এই কল্যাণ সাধনের সুযোগ রয়েছে। মৃত্যুর ছয় ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল কলেজ বা হাসপাতালে দেহ পৌঁছালে ১৪টি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায়। অর্থাৎ একটি প্রাণহীন দেহ ১৪ জন বিকলাঙ্গকে সচল করতে পারে।
মরণোত্তর দেহদানের প্রক্রিয়াটি খুব জটিল কিছু নয়। অঙ্গীকার পত্র ও হলফ-নামায় সম্মতিদানের মাধ্যমে নোটারি-পাবলিক করলেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।
আগ্রহী যে কেউ আমাদের অফিসে ব্যক্তিগতভাবে অথবা টেলিফোনে যোগাযোগ করতে পারেন। অথবা চাইলে আমরা ফর্ম পাঠাতে পারি, ওটা পূরণ করে স্বাক্ষর ও ছবি সংযুক্ত করে পাঠিয়ে দিন। ফর্মের সফট কপি, স্ট্যাম্প ও নোটারী ব্যয় বাবদ ৩০০ টাকা ফ্লেক্সি লোড করে পাঠালে চলবে। আমরা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে সার্বক্ষণিক সংরক্ষণের জন্য একটি দেহদান পত্র পাঠিয়ে দেব।
দ্রুত যোগাযোগ করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। শুভবাদী সকল বন্ধুদের উদ্দেশ্যে আজীবন শুভেচ্ছা।
জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন
১০৮ কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউ
বাংলামটর, ঢাকা
মোবাইল : ০১৫৫২৩৫৮০১৮ / ০১৭১২২৯৬৮১৮
Email: janabigganfoundation@gmail.com