‘অবমাননার শাস্তি’ জবাই-খতম নীতির রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক তোষণ

খান প্রকাশনী, দোকান নং ৩৮, ইসলামী টাওয়ার, ১১ বাংলা বাজার, ঢাকা-১১০০। মোবাইল-+৮৮০১৭৮১-৯০৩১২৮ ফেসবুক লিক-এখানে। খান প্রকাশনীর নাম উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হল এই প্রকাশনী থেকে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে এবং বাজারজাত হচ্ছে বইটির নাম-প্রিয় নবী স. অবমাননার শাস্তি। বইটি ইসলামিক একটি সাইট থেকে ডাউনলোড করে পড়ার চেষ্টা করি অবমাননার শাস্তি হিসেবে কী বলা আছে। ইসলাম ত্যাগের শাস্তি ও ধর্মাবমাননার শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হলেও ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ আমলে এমন কোন শাস্তির কথা সামাজিকভাবে ছিল না। এমনকি মধ্যযুগে ইউরোপের ক্ষমতাবান কিংবা বীর যোদ্ধারা এক জীবনে দুই-তিনবার ধর্ম বিশ্বাস পরিবর্তন করেছেন আবার কখনো কখনো নিজের পৈত্রিক ধর্মমতে ফিরে এসেছেন। বর্তমানে যে শাস্তির বর্ণনাগুলো আমরা দেখতে পাই সেগুলো আরব সমাজে। হাদিস ঘেঁটে এসব রেফারেন্সগুলো অন্য কেউ দিচ্ছে না, দিচ্ছে খোদ মুসলিম মাওলানারা। তাই অবমাননার শাস্তি হিসেবে সব স্থানে ইসলামিক জঙ্গিরা যখন চাপাতি দিয়ে হত্যা করে কিংবা ইসলাম ত্যাগ করেছি প্রকাশ্যে এমন ঘোষণা দেওয়ার পর যখন হত্যা করার জন্যে ধর্মপ্রাণ জিহাদিরা হামলা করে তখন বুঝতে বাকি থাকে না এই শিক্ষা তারা ধর্ম থেকেই পেয়েছে। লেখক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক খান ‘অবমাননার শাস্তি’ বইটির সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন। বইটিতে স্পষ্টভাবে অবমাননার শাস্তি হত্যা করার পক্ষে লেখকরা মত দিয়েছে। ভুলে যাওয়ার কথা না, ২০১৪ সালে হেফাজতের আল্লামা শফি ঘোষণা করেছিলেন নাস্তিক হত্যা ওয়াজিব হয়ে গেছে!(সূত্র- দৈনিক প্রথম আলো)

সরকারের তথ্য মন্ত্রী হাসান উল হক ইনু ২ নভেম্বর ২০১৫ সালে ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের উদ্দেশ্যে বললেন-ভয় পাবেন না আপনারা লিখে যান। (সূত্র-দৈনিক যুগান্তর) অন্যদিকে ৩১ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভাপতি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে কঠোর ব্যবস্থা! (সূত্র-ঢাকা টাইমস ২৪)। আরেক দিকে সরকার পুলিশকে জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর হতে বলছে এবং মানুষকে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সচেতন হতে আহবান করছে আবার অবমাননার শাস্তি কী এসব বিষয়ে বই বাজারজাত করার সুযোগ দিচ্ছে। শুধু যে খান প্রকাশনী এই বইটি প্রকাশ কিংবা বিলি করছে তাই নয়-রকমারি.কম-এর মতন অনলাইন বই কেনার সাইটেও এই ধরণের বই কিনতে পাওয়া যাচ্ছে! যেমন-“বিশ্বনবীর মর্যাদা ও তাঁর অবমাননার শাস্তি”। বইটির এডিটর-মাওলানা মুহাম্মদ সাইফুর রহমান কাসেমী। রকমারির মতন সাইটে যখন এসব বই স্থান পায়, খান প্রকাশনীর মতন প্রকাশনীতে এই বইগুলো প্রকাশিত হয় তাহলে স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে এই মতবাদ কিংবা প্রচারে কারো কোন আপত্তি নেই। বাংলা একাডেমি ২০১৫ সালে বই মেলায় ধর্মানুভূতি অভিযোগে রোদেলা প্রকাশনী বন্ধ ও “নবী মুহাম্মদের ২৩ বছর” বইটি নিষিদ্ধ করল, ব-দ্বীপ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত “ইসলাম বিতর্ক” বইটি নিষিদ্ধ ও প্রকাশনী বন্ধ। এছাড়া প্রকাশক, প্রেস মালিকসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে এমন অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে বই মেলার দায়িত্ব যে একাডেমির সেই একাডেমিকে না জানিয়ে পুলিশ সবার আগে প্রকাশনী ও প্রকাশক গ্রেফতারে নেমে পড়ছে। অন্যদিকে অবমাননার শাস্তি জবাই, খুন এমন বই প্রকাশ্যে বিক্রি ও প্রচার হলেও সরকার ও একাডেমি এগুলোর বিরুদ্ধে কোন অবস্থান নিচ্ছে না। কারণ বইগুলো কাউকে আঘাত না করে বরং জবাই শিক্ষার মাধ্যমে অনুভূতি হেফাজতের মন্ত্র প্রচার করছে।

গুগলে ‘অবমাননার শাস্তি’ লিখে সার্চ করা হলে অসংখ্য ইসলামিক ব্লগ পাওয়া যায় যেখানে তারা অবমাননা ও ধর্মত্যাগের শাস্তি হত্যা করা এমন মতবাদ প্রচার করছে। অদ্ভুত বিষয় হল এর বিরুদ্ধে আমাদের আলেম কিংবা মুসলিম সমাজের ধর্মীয় পাণ্ডারা কোন বক্তব্য দেন না। তারা ইহুদি নাসাদের ষড়যন্ত্র কিংবা সহি ইসলাম না বলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চান। অথচ হত্যাকারীরা হাদিস ও রসুলের জীবনের ঘটনগুলো’কে সামনে রেকেই রক্তের হলি খেলায় মেতে উঠেছে। অনেকেই হতো ভাববেন যে, এসব বইয়ের বদনাম করতে গিয়ে বইগুলোর প্রচার করে দিচ্ছি কিংবা তাদের মতবাদকেই একমাত্র সত্য হিসেবে মেনে নিয়েছি। এখানে স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই বইগুলোর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোন অ্যাকশন যেহেতু হচ্ছে না, ধর্মীয় মাওলানারা যেহেতু কোন কিছু বলছে না কিংবা এসবের বিরুদ্ধে কোন বইও লিখছেন না সুতরাং বইগুলোর বক্তব্য সামনে আনা জরুরী। কারণ হত্যাকারীরা এই বইগুলো পড়েই অবমানকারীদের হত্যা করতে এগিয়ে আসে। এছাড়া নাস্তিক হত্যার পর পত্রিকার নিচে প্রকাশ্যে যারা আনন্দ-উল্লাস করে তারাও এই বইয়ের লেখক ও পাঠকের মতনই চিন্তাভাবনা করে। সুতরাং বইগুলো কিংবা এসব বইয়ের রেফারেন্স হিসেবে যেসব কথা কিংবা ঘটনাগুলো বর্ণনা করা আছে সেগুলোর সম্পর্কে মাওলানা ও মুসলিম সমাজের মতামত অবশ্যই আমাদের জানতে হবে। সাধারণ শিক্ষিত মানুষ এগুলোকে পাত্তা না দিলেও আমাদের সমাজের ধর্মীয় চেতনায় বলিয়ানদের একটা বড় অংশ এগুলো মেনে চলে। আসুন দেখি ৬৪ পৃষ্ঠার বইটির ভিতরে কী লেখা আছে তার একটি ক্ষুদ্র চিত্র দেখি।

ঘটনা ১-কা’ব বিন আফরাফ হত্যার ঘটনা বর্ণনা

কা’ব বিন আফরাফ ছিলো একজন ইহুদি নেতা এবং খুবই প্রভাব সৃষ্টিকারী জ্বালাময়ী করি। যখন বদরে মুসলমানদের বিজয়ের সংবাদ মদীনায় পৌঁছালো, তখন কা’ব বিন আশরাফ সেই সংবাদ শুনে বলল, “যদি এই সংবাদ সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আমাদের মাটির নিচে থাকাই তার উপরে থাকার চেয়ে উত্তম। অর্থাৎ মৃত্যুই আমাদের জন্যে শ্রেয়। কুরাইশদের পরাজয়ের পর আর বেঁচে থেকে কী লাভ!”

সে মুশরিকদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে কবিতা রচনা এবং রসুল ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো শুরু করলো। এরপর যে মক্কায় তার কবিতা ছড়িয়ে দিলো। কুরাইশদের প্রতি সহমর্মিতা পোষণ করে যুদ্ধে তাদের ক্ষয়-ক্ষতিতে দুঃখ প্রকাশ করলো। শুধু এই পর্যন্তই নয়, এর থেকে আরো বেড়ে গিয়ে সে এবার তার কবিতার মাধ্যমে মুসলিম নারীদেরকেও কটাক্ষ করা শুরু করলো। এবং আল্লাহ রসুল বললেন- “কে এমন আছে? যে কা’ব ইবনে আশরাফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে! কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দিচ্ছে।“

তখন মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ, আব্বাদ বিন বিশর, আল হারিস বিন আওস, আবু আবস বিন হিবর এবং কা’ব বিন আশরাফের দুধ ভাই সালকান বিন সালামাহ স্বেচ্ছায় এ দায়িত্ব পালনের জন্য এগিয়ে আসেন। মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ বলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ আপনি কি চান আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বলেন, হ্যা। তারপর মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ বলেন, তাহলে আমাকে অনুমতি দিন তার সাথে যে কোন ধরণের কথা বলার, তিনি বলেন, তুমি বল (যা তোমার বলা প্রয়োজন)।

এর পর ছলে বলে কৌশলে আফরাফকে হত্যা করা হয়। উপরের ঘটনা থেকে লেখক দুইটি বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝিয়েছে- এক. অবমাননার শাস্তি হত্যা। দুই. এর জন্যে যদি মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয় কিংবা ছলনার আশ্রয় নিতে হয় তা ধর্মীয়ভাবে জায়েজ। এটা আমার কথা নয় ইসলামিকদের কথা। এটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। যেমন-জামাত তাকিয়া ফলো করে। মানে তুমি ধর্ম-প্রতিষ্ঠার জন্যে তাকিয়া করতে পারবা। তাকিয়া হচ্ছে ইসলামের স্বার্থে মিথ্যা কথা বলার অনুমতি। যারা পুরো ঘটনাটি জানেন তারা নিশ্চয়ই জানেন যে, কবির সাথে মিথ্যা করে বলে ছল করেই হত্যা করা হয়েছে।

ঘটনা ২- আবু রাফে’ -এর হত্যার ঘটনা ঘটনা বর্ণনা

কা’ব বিন আশরাফকে শায়েস্তা করা ছিলো একটি ঐতিহাসিক কাজ যা আওস গোত্রের সাহাবায়ে কিরাম আঞ্জাম দিয়েছিলেন। মদীনার আনসারদের মধ্যে আরেকটি গোত্র ছিলো খাজরাজ। নেক ও সৎ আমলের ক্ষেত্রে আওস এবং খাজরাজ গোত্রের সাহাবায়ে কিরামগণ পরস্পর একে অপরের সাথে সব সময়ই পাল্লা দিতেন।

কাব ইবনে মালিকের পুত্র বলেন, আওস এবং খাজরাজ দু’টো গোত্রই ঘোড়া দৌড়ের মত আল্লাহর রসূলের সামনে প্রতিযোগিতা করত। যখনই তাদের কোন একজন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুশী করার মত কোন একটা কাজ করতেন, অপরজন তার চাইতেও ভালো কিছু করতে চাইত।

তাদের প্রতিযোগিতা ছিল না কোন উপাধির উপর, ছিল না কোন কোন সম্পত্তির উপর। কে ভালো বাড়ী পাবে তার উপর? না।

কে সুন্দরী স্ত্রী পাবে তার উপর?

কার কাছে অধিক পরিমাণ ভালো বাহন আছে এর উপরও নয়!

বরং তাদের প্রতিযোগিতা ছিল কিভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুশী করা যায়।

আওস গোত্রের লোকেরা যখন কা’ব ইবনে আশরাফের মতো নিকৃষ্ট ইহুদীকে হত্যা করতে সক্ষম হলেন তখন খাজরাজ গোত্রের সাহাবীরা এর চাইতেও উত্তম কিছু করার জন্য একটি সভা করলেন। তারা বলতে লাগলেন যে, আওস আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এক শত্রুকে হত্যা করতে সফল হয়েছে। আমাদেরও একই কাজ করতে হবে। কাব ইবনে আশরাফের পর কে আছে সবচেয়ে খারাপ?

তারা অনেক ভেবে চিন্তে দেখলেন যে কা’ব ইবনে আশরাফের মতই আরেকটি নিকৃষ্ট শয়তান আছে। আর সে হচ্ছে আবু রা’ফে।

তারা তাদের পরিকল্পনার কথা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে উপস্থাপন করলো এবং জানালো যে, তারা আবূ রাফে’র সাথে তারা কা’ব ইবনে আশরাফের অনুরূপ আচরণ করতে চায়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের পরিকল্পনায় সম্মতি জানালেন এবং তাদের সামনে অগ্রসর হতে বললেন।
.
.
.
.
ফজরের সময় খবর প্রকাশ হলো যে হিজাজের ব্যবসায়ী আবু রা’ফে খুন হয়েছে! আব্দুল্লাহ বিন আতিক কি (এমন কথা) বলেছিলেন, “আমরা এই ধরনের নৃশংস কাজে ঘৃণা প্রকাশ করছি। লোকটির ক্ষতি করা উচিত হয়নি এবং এটি অনৈসলামিক কাজ। এবং আমরা…

না, তিনি এ ধরনের কিছুই বলেননি?

তাহলে আব্দুল্লাহ বিন আতিক কি বললেন??!!

আব্দুল্লাহ বিন আতিক বললেন, “যখন অমি আবু রাফের খুন হওয়ার সংবাদ শুনলাম, আমি শপথ করে বলছি এর চেয়ে সুমিষ্ট কথা আমি আমার জীবনে আর কখনো শুনিনি।” -এটাই ছিলো আব্দুল্লাহ বিন আতিকের কথা।

তারা এভাবেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসতেন। তারপর তিনি মদীনার দিকে ছুটে গেলেন এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখে বললেন,

“সাফল্যে উদ্ভাসিত হোক তোমার জীবন!”

তিনি প্রতি উত্তরে প্রিয়-নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাফল্যে উদ্ভাসিত হোক আপনার জীবনও!

এভাবেই তারা সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তার সাহাবিদের এমন নিবেদিতপ্রাণ আনুগত্যে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। (সংক্ষেপে)

এখানেও একই ভাবে ছলাকলা করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তাকে খুন করা হল। এবং পাঠকদের এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবার আহবান জানানো হচ্ছে। এই জন্যে ব্লগার হত্যার সময় সংবাদ মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই অনেক হত্যাকারী বন্ধুর বেশে বাসায় গিয়ে হত্যা করে তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। এসব শিক্ষা তারা এসব ঘটনা থেকেই সংগ্রহ করেছে।

ঘটনা ৩- আব্দুল্লাহ ইবনে খাতাল প্রমুখ হত্যার ঘটনা

এদের অপরাধ সম্পর্কে বলা হচ্ছে-আব্দুল্লাহ ইবনে খাতাল এবং তার দুই মেয়ে ক্রীতদাসী আল্লাহ রসূলের বিরুদ্ধে গান গাইত। তারা আল্লাহর রসূলের বিরুদ্ধে গান গেয়ে মক্কায় কনসার্ট করতো।

ঘটনা ৪-উকবা ইবনে আবী মুয়িদ এবং নাদার ইবনে আবী হারিছের হত্যার ঘটনা

এখানেও অপরাধ আর কিছু নয় আল্লাহ ও নবীর প্রতি বিদ্বেষ ও অবমাননা। এবং এই অপরাধে তাদের হত্যার হুকুম দিচ্ছেন খোদ রসুল। আর এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের জিহাদি ভারা অমাননার কথা শুনলে জবাই করতে মাঠে নেমে যাচ্ছেন। (বই থেকে সংক্ষেপে)

ঘটনা৫- উম্মু ওয়ালাদ নামক এক দাসী হত্যার ঘটনা

এই দাসীর অপরাধ তিনি রসুলকে অপছন্দ করতেন ও অভিশাপ দিতেন। এর জন্যে নবীর এক অন্ধ সাহাবী নিজের দাসীকে ছুড়ির মাধ্যমে হত্যা করা হয়।

সকাল বেলা ঘটনা শুনে নবী বলছেন- জেনে রেখো যে তার রক্তের কোন মূল্য নেই। অর্থাৎ তার জন্য কোন ক্ষতিপূরণ নেই এবং যে তাকে হত্যা করেছে তারও কোন শাস্তি নেই। (বই থেকে সংক্ষেপে)

সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম যে এসব হত্যাকারীর বিচার করার বরং ইসলামিক দৃষ্টিতে আইনত অপরাধ।

এছাড়া আরো হত্যা ঘটনার উল্লেখ করা আছে। যেমন-আসমা বিনতে মারওয়ান নাম্নী এক মহিলাকে হত্যার ঘটনা, বনু বকর গোত্রের এক কবি হত্যার ঘটনা।

এরপর আলিমগণের মতামত নামে একটা অধ্যায় আছে যেখানে হত্যা করার পক্ষে অসংখ্য মতবাদ, ফতোয়া, ঘটনার হাজির হয়েছে। কেউ যদি অবমাননা করে কিংবা অস্বীকার করে তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া আছে। উদাহরণ হিসেবে, ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ, কথার বলা আছে-“যে কেউ আল্লাহ রসূলকে গালি দেবে-সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম হোক, তাকে হত্যা করতে হবে।”

ব্লগার হত্যার পেছনে কোন আদর্শ কাজ করছে তা আমাদের সরকার ও মাওলানা সাবরা জানেন না। প্রশ্ন হল, রাষ্ট্রীয় মদদ ও সামাজিক সম্মতি ছাড়া একুশে মেলায় খান প্রকাশনী এই বইটি কীভাবে বিক্রি করছে? অনলাইনে রকমারি ডট কম কীভাবে মানুষের ঘরে ঘরে এমন জিহাদি বই পৌঁছে দিচ্ছে? এছাড়া রাষ্ট্রীয় সমর্থন ছাড়া জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ “রসুল (সা.) ও ধর্ম অবমাননাকারীর শাস্তির বিধান” নামক হত্যা বৈধতা দেওয়ার মতন লেখা কীভাবে প্রকাশ হচ্ছে? বিষয়টি স্পষ্ট মৌলদাদের উত্থান, অবিশ্বাসীধের হত্যার পেছনে রাষ্ট্রীয় মদদ কাজ করছে। একদিকে অনুভূতির আঘাতের অভিযোগ শোনা মাত্র প্রকাশনী বন্ধ, প্রকাশক গ্রেফতার করছে অন্যদিকে প্রকাশ্যে এসব জিহাদি বই বাজারজাত করা হচ্ছে। বাংলার একাডেমি ও রাষ্ট্রের কাছে এর জবাব চাই, দিতে হবে।


নাস্তিক মুরতাদদের গাল মেরে বই লেখা যাবে এটা তাদের অধিকার কিন্তু দ্বি-মত প্রকাশ করার আমার অধিকার নেই!

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.