১৯৭২-এর ২৬শে মার্চ “দৈনিক বাংলা” ও “দ্য বাংলাদেশ অবজার্ভার” পত্রিকায় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে কয়েকটি বিজ্ঞাপন এখানে প্রকাশ করা হল। দিনটিকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু কথা, জিয়াউর রহমানের সাক্ষাৎকার, ভাষানীর বাণী, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দিবস: সভা মিছিল নিক্সনের কুশ পুত্তলিকা দাহ, রাষ্ট্রপতির বাণী: আজ এক নতুন সংগ্রামের দিন, দিনটির স্মরণে বঙ্গবন্ধুর বেতার ভাষণের সংবাদ সহ অসংখ্য সংবাদ প্রকাশিত হয়। দিনটি ছিল রবিবার। দৈনিক বাংলা পত্রিকার হেডলাইন ছিল “আজ রক্তরাঙ্গা স্বাধীনতা দিবস” এবং পত্রিকার হেডলাইন ছিল “INDEPENDENCE THRU Blood AND TEARS” নামে।
যেহেতু পোস্ট ২৬শে মার্চ নিয়ে তাই এবার একটু বাংলাদেশের জন্মদিন কবে সে প্রসঙ্গে আলাপ করা যাক। কারণ অনেকেই ১৬ই ডিসেম্বরকে বাংলাদেশের জন্মদিন হিসেবে মনে করে থাকেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার ডাক দেওয়া হয় ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালে। এর আগে ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। ২রা মার্চ থেকে পাকিস্তান সরকারের সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান, যোগাযোগ মাধ্যম বাঙালি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালায়। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়, অনেক স্থানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং অনেক স্থানে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এমতাবস্থায় বাঙালিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং অনেক স্থানেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা না করেই অনেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাবার পর আপামর বাঙালি জনতা পশ্চিম পাকিস্তানী জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশকে হানাদার মুক্ত করে। ২৬শে মার্চে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এবং সেই ২৬শে মার্চে প্রাণ হারায় ১০ হাজার বাঙালি। বাংলাদেশ ২৬শে মার্চ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হলেও দখলদার বাহিনী’কে সরাতে আমাদের সময় লাগে ৯ মাস। এখানে স্মরণ রাখা প্রয়োজন পাকিস্তানের ক্ষেত্রে আমরা কোন কোন শব্দ ব্যবহার করি। শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সচেতনভাবে। যেমন-হানাদার বাহিনী। হানাদার সে যে কিনা অন্যের সম্পত্তি কিংবা বাড়িতে হানা দেয়। সুতরাং আপনি যখন ভুল করে বলবেন ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্মদিন এই কথার সাথে সাথে আপনি আপনার অজান্তে যুদ্ধের নয় মাস বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল স্বাধীনতা বিরোধীদের এমন দাবীকে স্বীকার করে নিলেন। এছাড়া ১৬শে ডিসেম্বরকে ২৬শে মার্চের চেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার একটা হীন চেষ্টা আছে যার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য গভীর ছিল সবসময়। যারা এখনো ১৬ই ডিসেম্বরকে বাংলাদেশের জন্মদিন ভাবছেন তাদের জানা উচিত বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় সর্বপ্রথম এপ্রিল মাসে। দেশটি ছিল ইসরাইল।যদিও তৎকালীন সরকার তা গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে ১৬ই ডিসেম্বরের পূর্বে ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত। যাই হোক চলুন এবার দেখে নিই-বায়াত্তরের ২৬ মার্চ-এ সংবাদ পত্রের বিজ্ঞাপনগুলো।





























ছবি কৃতজ্ঞতায়- International Crimes Strategy Forum (ICSF) and Center for Bangladesh Genocide Research (CBGR)