সুইডেনের ভীত-সন্ত্রস্ত ইহুদিরা

2572119403

ভূমিকা:

ভারতে বাবরি মসজিদে হামলা করে গুজরাটি হিন্দুরা। অথচ তার জন্যে খেসfরত দিতে হয়েছিল বাংলাদেশের হিন্দুদেরও। এক বাবরি মসজিদের বিপরীতে বাংলাদেশে ৩ হাজারেরও বেশি মন্দিরে হামলা করা হয়। অথচ গুজরাটি হিন্দুদের খাবার কিংবা ধর্মীয় বিষয়েও পশ্চিমবঙ্গ কিংবা বাংলাদেশী হিন্দুদের মিল নেই। গুজরাট হিন্দুরা মাছের গন্ধে বমি করে অন্যদিকে বাঙালি হিন্দুরা মাছ ছাড়া ভাত খেতে পারে না। এতো বিপরীত্য থাকলে কী হবে; যেহেতু ভারত একটি হিন্দু প্রধান দেশ সেহেতু এই বঙ্গের হিন্দুদের গুজরাটি হিন্দুদের দায় নিতে হবে। গুজরাট যেহেতু যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না সেহেতু প্রতিবেশী হিন্দু সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে তার সম্পদ দখল করাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রতিটি ধর্মীয় ঘৃণা কিংবা ধর্মীয় হামলার মধ্যে অর্থনৈতিক আধিপত্য কিংবা সম্পত্তি দখল হল মূল লক্ষ্য।

এতো কথা বলার কারণ জেরুজালেম ইস্যুতে সুইডেনের সাধারণ ইহুদিরা মুসলিমদের থেকে হুমকি-ধমকির শিকার হচ্ছে। ইউরোপে ইহুদি বিদ্বেষ নতুন কিছু নয় তবে এখন অর্থোডক্স মুসলিমদের উৎপাত নতুন ঝামেলা হিসেবে আর্বিভুত হয়েছে। বিশেষ করে এখানে জন্ম নেওয়া শিকড়হীন উগ্র তরুণ মুসলিমরা তাদের জন্যে এক আতঙ্কজনক বিষয়। সুইডেনের সবচেয়ে বেশি গোলাগুলি ও সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ যে শহরটি হয় তার নাম মালমো। সুইডেনের শেষ শহর বাল্টিক সাগর পাড়ে শহরটি দাঁড়িয়ে আছে, অন্যপাশে আছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন। এটি সুইডেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। যেখানে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের (১৭৭) মানুষের সন্ধান পাওয়া যাবে। আর এটিই এই শহরের বৈশিষ্ট্য।

ইউরোপে ইহুদি ও ইসরায়েল:

ইউরোপে ইহুদিদের প্রতি ঘৃণাটা ঐতিহাসিক। শুধু জার্মানি কিংবা নাৎসিরা নয় রাশিয়ানরাও ইহুদিদের প্রচণ্ড ঘৃণা করতো। রাশিয়া সমাজতান্ত্রিক দেশ হলেও ইহুদিদের প্রতি তাদেও ছিল বিশুদ্ধ ঘৃণা। খ্রিস্টান প্রধান দেশগুলোতে বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন ডাইমেনশনে ইহুদিদের প্রতি ঘৃণার চর্চা করা হতো। বর্তমানেও সুইডেনের নব্য নাৎসি ইহুদির সম্প্রদায়ের জন্যে এক আতংকের বিষয়। কারণ নাৎসিদের সবার আগে টার্গেট থাকে ইহুদিরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সুইডেনের নাৎসিরা সমাজে ঘৃণিত হলেও সমাজ থেকে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। কয়েক মাস আগে উত্তর সুইডেনে নাৎসি গ্রুপের উত্থানে উমিয়া শহরের ইহুদি সম্প্রদায় ভয় ও উদ্বেগ প্রকাশ করে। উমিয়া শহরের ইহুদি সম্প্রদায় বলছে প্রকাশ্যে নিজের ধর্মীয় পরিচয় দিতে তারা নিরাপদবোধ করছে না।

 

ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির মারফতে ব্যবসার প্রয়োজনে ইহুদিরা ব্যবসায়ীরা সুইডেনে আসা শুরু করে। স্যামসন এফরাম এবং তার পুত্র ১৭০২ সালে গোথেনবার্গ ও স্টকহোমের কাছাকাছি বসবাস করা শুরু করে। পরবর্তীতে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কারণে অসংখ্য ইহুদি ব্যবসায়ী সুইডেনে আসা শুরু করে। এরিন ইসাক ছিলেন প্রথম ইহুদি যিনি সুইডেনে বসবাস করার রাষ্ট্রীয় অনুমতি পেয়েছিলেন। তিনি জার্মানিতে সীল খোদাইয়ের কাজ করতেন। ধর্মগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হলে এরিক ইসাক জানান; পৃথিবীর সকল স্বর্ণের বিনিময়েও তিনি তার ধর্ম পরিবর্তন করবেন না। সুইডিশ রাজা পরবর্তীতে তিনি আরো কয়েকটি ইহুদি পরিবারকে সুইডেনের আসার অনুমতি দেন, যেন ইহুদিদের উপাসনায় কম করে ১০ জন ব্যক্তির অভাব না হয় (তাদের প্রার্থনায় তাদের কম করে দশ জন মানুষের প্রয়োজন হয়)। ১৭৭৫ সালে গোস্টবর্গের উপকূলে মারস্ট্যান্ড দ্বীপে ইহুদিদের সাথে বিদেশীদেরও বসবাসের অনুমতি ছিল। এর পাঁচ বছর এ গোথেনবার্গে প্রথম ইহুদি পরিবার বসবাস করা শুরু করে। ১৭৮২ সালে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত না হয়েও ইহুদিরা সুইডেনে বসবাসের অনুমতি লাভ করে।

১৮ শতকের দিকে সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের হিব্রু শিক্ষক হিসেবে ইহুদিরা শিক্ষক হিসেবে মর্যাদা লাভ করে তবে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার ছিল-তারা নিজেদের লুথারানিজমে (প্রোটেস্ট্যাটান্ট) কনভার্ট করবে। কারণ ১৬ শতক থেকে লুথেরান প্রোটেস্ট্যাটান্ট মতবাদ ছিল সুইডেনের রাষ্ট্রীয় ও একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্মীয় মতবাদ। রাস্তায় হাঁটার সময় ইহুদিরা হাতে হলুদ কিংবা লাল ফিতা পরবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয় তবে এমন কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত না হলেও ইহুদিদের উপর অনেক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যেমন; স্টকহোম, গোথেনবার্গ, নরশপিং, ল্যান্ডস্রোকন স্থানগুলোতে সম্পত্তি ক্রয় কিংবা বসবাস করতে পারত না। এই নিষেধাজ্ঞাটি প্রথম ১৮৫৪ সালে অপসারণ করা হয়। ১৮৭০ সালে ইহুদিরা প্রথম পূর্ণ নাগরিকত্ব লাভ করে। এবং ১৮৭২/৭৩ সালে সুইডেনের পার্লামেন্ট প্রথম ইহুদিরা (Aron Philipson and Moritz Rubenson) নির্বাচিত হয়।

জার্মানির হিটলারের শাসনামলে ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনী থেকে বাঁচার জন্যে অসংখ্য ইহুদি সুইডেনে আশ্রয় নেয়। এই কাজে যারা সহযোগিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সুইডিশ কূটনীতিক রাউল ওয়ালেনবেরি (Raoul Wallenberg)। পৃথিবীর আলোচিত নাম আনা ফ্রাঙ্ককেও ১৯৩৩ সালে জার্মানি ছেড়ে নেদারল্যান্ডে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিল। এর মূল কারণ ছিল, হিটলার ক্ষমতায় আসার পর জার্মানি ইহুদিদের জন্যে আর নিরাপদ ছিল না। ইসরাইল রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার আগ পর্যন্ত ইহুদিরা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। অতীতে তারা খ্রিস্টান ও মুসলিম শাসকদের নিষ্ঠুর অত্যাচারে দেশান্তরিত কিংবা ধর্ম পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। যেমন ইসলাম প্রতিষ্ঠার পূর্বে মদিনায় এক সময় ইহুদিরা বসবাস করতো কিংবা ১৪৯২ সালে স্পেনে খ্রিস্টান শাসকদের ইনকুইজিশনের শিকার হয়ে ইহুদিরা দেশান্তরিত ও ধর্মপরিবর্তনে বাধ্য হয়। যদিও সে সময় অনেকে ধর্ম পরিবর্তন করলেও গোপনে পিতার ধর্মটি পালন করতো। কারণ মাত্র আঠারো বছরে ১৪৮১ সাল থেকে ১৪৯৯ সাল পর্যন্ত ১০,২২০ জনকে পাদ্রীরা জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে এবং ৬,৮৬০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। স্পেনের ইনকুইজিশনের শিকার শুধু ইহুদি নয় মুসলিমরাও হয়েছিল। ইসরাইল সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে মুসলিম-দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইহুদি বাস করতো ইরানে। প্রায় এক লাখ ইহুদি ইরানে বসবাস করতো বর্তমানে যা মাত্র দশ হাজার।

যাই হোক এবার আসি ইসরায়েল প্রসঙ্গে। মধ্যপ্রাচ্যে দুইটি রাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটেন ও আমেরিকার দান; একটি সৌদি আরব অন্যটি ইসরায়েল। ইহুদিদের প্রতি যে ঘৃণা আজ আমরা দেখতে পাই তা শুধু ইসরায়েল রাষ্ট্রের কারণে নয় বরং ঘৃণার মূল স্তম্ভ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহামিক ধর্মগুলোর দাবী-দাওয়া কিংবা এক কথায় ধর্মীয় ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা। ইহুদি ধর্মের লেজ ধরেই খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের গোড়াপত্তন। আর এই কারণেই ঘৃণার মাত্রাটাও বেশি। সামাজিক অসযোগিতা ও বারে বারে বিতাড়িত হওয়ার যাতনা থেকে ইহুদিদের পুরাতন ধর্মীয় স্মৃতি আবার জীবিত হয়ে উঠে। তাই তো তাদের জাতীয় সঙ্গীতের নাম HaTikvah (“The Hope”) এবং সঙ্গীতে বলা আছে-

As long as the Jewish spirit is yearning
deep in the heart,

With eyes turned toward the East,
looking toward Zion,

Then our hope – the two-thousand-year-
old hope – will not be lost:

To be a free people in our land,
The land of Zion and Jerusalem.

রাষ্ট্র গঠনের এই তাড়না তাদের একদিনে আসেনি। ফিলিস্তিন ভূমিতে অতীতে ইহুদি খ্রিস্টানরাও মুসলিমদের সাথে একসাথে বসবাস করতো। তবে ইউরোপের সচ্ছল ইহুদিরা প্রথমে প্যালেস্টাইনে জমি কিনে সেখানে আবাসন গড়ার চিন্তা করলো। তবে জমি কেনার শর্তে ছিল তারা তাদের ইচ্ছে মতন জমিতে শ্রমিক নিয়োগ করতে পারবে। ইউরোপে যে শুধু ধনী ইহুদি বসবাস করতো তা নয় অসংখ্য নিন্মবিত্ত ইহুদি ছিল। যারা পরবর্তীতে শ্রমিক হিসেবে সচ্ছল ইহুদিদের প্যালেস্টাইনের জমিতে কাজ করা শুরু করে। হয়তো এখন মনে আসতে পারে কী কারণে সচ্ছল ইহুদিরা ইহুদিরা ফিলিস্তিনে অর্থ লগ্নি করা শুরু করল? এর মূল কারণ একটাই; ইউরোপে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার অভাব। ফিলিস্তিনদের ভূমি ক্রমের মাধ্যমেই ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের বীজ বপনের শুরু পরবর্তীতে যা জায়ানবাদ অনুসারে ইসরাইল নামক দখলদার রাষ্ট্রে সৃষ্টির মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে। কিছুদিন আগেও জেরুজালেম ইস্যুতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু ধর্মগ্রন্থের কথা বলেন, এমনকি বাইবেল দেখার পরামর্শ দেন তিনি। তবে মজার বিষয় হল জায়নিস্টবাদীরা কখনো ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হতে হবে এমন কোন কথা বলেনি। তবে জেরুজালেম শহরটি ইহুদিদের মূল ধর্মীয় স্থান যা ইহুদি নবীদের ইতিহাসের সাথেও জড়িত। ইউরোপে ইহুদিরা নির্যাতিত অন্যদিকে ইউরোপিয়ান চায়নি ইহুদিরা এখানে থাকুক তাই পশ্চিমাদের সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। তবে অনেকে ইসরাইল রাষ্ট্রকে তাই সেটেলার কলোনিয়ালিজম রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত করে। মনে রাখা দরকার পৃথিবীতে সেলটার কলোনিয়ালিজম রাষ্ট্র কিন্তু শুধু ইসরাইলই নয়। সেলটার কলোনিয়ালিজম রাষ্ট্রের ভাল উদাহরণ হচ্ছে-যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া। আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সাদা মানুষেরা সেখানে গিয়ে সেটেল হয়েছে এবং সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের তারা উৎখাত করেছে। পৃথিবীর ইতিহাস উৎখাত ও শোষণের ইতিহাস। বাংলাদেশের পাহাড়ে সেলটারের বিষয়ে আমরা বাঙালি মুসলিম জায়নিস্ট।

বর্তমানে সুইডেনে ইহুদিরা:

ফিলিস্তিন আব্রাহামিক ধর্মের পবিত্রস্থান। যেখানে মানুষ আবার জেগে উঠবে, যেখানে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের নবী সশরীরে ভ্রমণ করেছেন। অন্যদিকে মুসলিমদের নবী মুহাম্মদ ভ্রমণ করেছেন স্বপ্নে কিংবা আধ্যাত্ত্বিকভাবে। সুতরাং তিন ধর্মের কাছে জেরুজালেম গুরুত্বপূর্ণ। তারা বিশ্বাস করে শেষ বিচার দিনের মঞ্চও অনুষ্ঠিত হবে জেরুজালেমে। মুসলিমদের কেবলা প্রথম জেরুজালেমের দিকে মুখ করে ছিল, ইহুদিরা যখন শেষ পর্যন্ত মুসলিম ধর্মে কনভার্ট হয়নি তখন কেবলার মুখ ঘুরে মক্কা মুখি করা হয়। তবে মুসলিমরাও বিশ্বাস করে বিচারের দিন কেবলা আবার ঘুরে জেরুজালেমে ফিরে আসবে। ফলে জেরুজালেম শুধু ফিলিস্তিনদের স্বাধীনতার বিষয় নয় তার থেকে বেশি ধর্মীয় অনুভূতির বিষয় এখানে জড়িত।

ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে ইহুদিরা নিরাপত্তার জন্যে ইসরায়েল রাষ্ট্রে আসতে শুরু করে। তবে অনেক জ্ঞানী গুণী ও ধনী ইহুদি আছে যারা জায়ানবাদী রাষ্ট্র ধারণাটি সাপোর্ট করে না তারা জায়ানিজমের বিরুদ্ধে। উদাহরণ হিসেবে আব্রাম নোয়াম চমস্কি, থিঙ্কেল স্টাইন। তারা সুস্পষ্টভাবে জায়ানিজমের বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর ইসরায়েল ফিলিস্তিন ইস্যু আবার উৎতপ্ত হয়ে ওঠে। যদি ট্রাম্পের আগে বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা রাজধানী করার কথা বলেছে তবে তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস পায়নি। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেয়। যদিও ইসরায়েল অনেক বছর ধরে জেরুজালেমকে তার অঘোষিত রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠে তবে মূল লক্ষ্য ছিল সরাসরি ইহুদিদের বিরুদ্ধে স্লোগান। কারণ বেশির ভাগ মানুষ ইহুদি বিদ্বেষটা মূলত ইসরায়েল ইস্যুকে সামনে এনে আড়াল করতে চায়। বাস্তবতা হল ইহুদি ধর্ম ও জায়ানবাদ দুটি ভিন্ন মতবাদ। কিন্তু আমরা যতোটা জায়ানবাদ ঘৃণা করি তার থেকে বেশি ঘৃণা করি ইহুদি সম্প্রদায়কে। এর ঘৃণা চর্চার মূল কেন্দ্র হচ্ছে মসজিদ ও মাদ্রাসা নামক ঘৃণা কেন্দ্রগুলো। ইসরায়েল বিষয়ে অনেকে একটা অভিযোগ করেন যে ওখানাকার সব মানুষ ইউরোপ থেকে এসেছে। কথাটা সত্য নয় কারণ ইহুদিরা শুধু ইউরোপে নয় তারা আরব রাষ্ট্রগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। তারাও অন্যদের মতন আরব। এমনকি ফিলিস্তিনী ভূমিতেও ইহুদিরা হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছিল।

সুইডেনের মুসলিমরা অন্য কোন গ্রহের মানুষ নয় সুতরাং তারাও মালমোর রাস্তায় প্রকাশ্যে ইহুদির হত্যার ঘোষণা দিয়েছে। তারা স্লোগান দিচ্ছিল যে-“মোহাম্মদের সৈনিকরা আসছে, সকল ইহুদিকে হত্যা করা হবে।” এমন একটি ঘোষণা অসংখ্যবার দেওয়ার পর সুইডিশ মিডিয়া তা ফলাও ভাবে প্রচার করেনি। কারণ জিহাদি মুসল্লিদের কারণে ইতোমধ্যে মুসলিমদের সাথে মানুষ খুব একটা নিরাপদ বোধ করে না তার উপর এমন নিউজ আরও বেশি নেতিবাচক ফল বয়ে আনবে। তবে ইহুদিরা প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে। কারণ ইহুদিদের বিরুদ্ধে শুধু স্লোগানই হয়নি গোথেনবার্গের ইহুদিদের সিনেগগে হামলাও হয়েছে। দুইদিন আগে সুইডিশ ইহুদি মেয়ে সুইডেনের প্রথম সারির পত্রিকা অফটনব্যাডেট (www.aftonbladet.se) পত্রিকায় সরাসরি বলেছে যে; ভবিষ্যৎ ইহুদি পরিচয়ে কেউ প্রকাশ্যে কেউ সুইডেনে থাকতে পারবে না। মেয়েটি ইতোমধ্যে সুইডেন ত্যাগ করে ইসরায়েলে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে কেউকে ধর্ম জিজ্ঞেস করা খুব একটা ভদ্রতার পর্যায়ে পড়ে না; যদি সে খুব ঘনিষ্ঠ না হয়। তা স্বত্বেও ইহুদিরা নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস ওপেন কারতে চায় না। নাৎসি কিংবা ইহুদি বিদ্বেষের সাথে নতুন আপদ হিসেবে জোগ হয়েছে অর্থোডক্স মুসলিম কিংবা উগ্রবাদী মুসলমান। মেয়েটি সাক্ষাৎকারে বলছে; রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অনেক মুসলিম তরুণ তাকে থামিয়ে বলতো-আমরা তোমার বাসার ঠিকানা জানি। একদিন তোমার পরিবারের সবাইকে একসাথে মেরে ফেলবো। ইউরোপে নাৎসিরা প্রাণ ফিরে পাচ্ছে, ক্ষণিকের জন্যে নিভে যাওয়া বর্ণবাদ আবারো মাথা নাড়া দিচ্ছে আর তাতে মসলা হিসেবে নতুন যোগ হচ্ছে উগ্রবাদী মুসলিমরা। শুধু তরুণ ইহুদিরা নয় ইহুদি বিদ্বেষী উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছেন আশি-ঊর্ধ্ব বৃদ্ধা হেদি ফ্রেইড। তিনি প্রশ্ন করছেন; আবারো কী কিছু কিছু ঘটবে? আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে কী আমার চিন্তা করা উচিত? ইউরোপের নাৎসিরা মুসলিমদের ঘৃণা না করলে অর্থোডক্স মুসলিম হতো নাৎসিদের সবচেয়ে বড় সাহাবি! যাদের একমাত্র টার্গে থাকতো ইহুদিরা।

পরিশেষে:

পৃথিবীতে মানুষকে ভালবাসতে কারণ লাগে কিন্তু ঘৃণা করতে কখনো কারণ লাগে না। আমাদের অনুভূতি, হতাশা, ব্যর্থতার কারণের জন্যে আমাদের কাউকে দরকার হয় যাকে ঘৃণা করে আমরা ক্ষণিকের সুখ পেতে পারি। মানুষের নিজের জীবনে একজন প্রতিপক্ষ কিংবা শক্রর দরকার হয়, যেমনটি দরকার হয় ধর্ম কিংবা একটি রাষ্ট্রেরও। এই শক্রর প্রতি ঘৃণা করে মানুষ সাময়িকভাবে নিজের যন্ত্রণা ভুলতে চায়। যেমন-বাংলাদেশে প্রতিবছর ড্রাইভিং সেক্টরে দুর্নীতির কারণে ত্রিশ হাজারের বেশী মানুষ মারা যায়, পঙ্গু হয় কয়েক লাখ। এগুলো আমাদের নিজেদের অন্যায়ের ফল কিন্তু আমরা নিজেদের খারাপ জীবনের জন্যে দোষী হিসেবে খুঁজি অন্য কোন রাষ্ট্রকে। যাকে দোষ দিয়ে সাময়িক আরাম পাওয়া সম্ভব হবে আমাদের আর আড়াল করা যাবে নিজের অন্যায়কে। রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন, সাম্রাজ্যবাদ এগুলো কেউ অস্বীকার করছি না কিন্তু এগুলো দুর্দশার একমাত্র কারণ নয়।

সুইডেনের মুসলিমরা বর্ণবাদের শিকার হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। কিন্তু তাদের অনেকে আবার ঠিক একই কাজ অন্যদের সাথে করছে; নিজেদের অনুভূতি কিংবা স্বার্থের প্রয়োজনে। বর্তমান রেসিজমের শতাব্দীতে তারপরও মানুষ স্বপ্ন দেখে। সিনেগগে হামলার পর কয়েকজন মুসলিম ইমাম ইহুদিদের সাথে দেখা করতে গিয়েছেন কারণ তারাও ঘৃণা নয় সহাবস্থানে শান্তি কামনা করে। তারা ইহুদিদের হত্যা করে পুণ্য কামাতে চায় না। যদিও এই সংখ্যাটি খুব বড় নয় তারপরও মানুষ তার চেষ্টা করে যায়। ঘৃণার চর্চা বন্ধ না হলে সুইডেনেও হয়তো ইহুদিদের সংখ্যা কমতে থাকবে, ধর্মীয় পরিচয় গোপন রেখেই তারা জীবন-যাপন করবে। একদিন হয়তো ফিলিস্তিন-ইসরায়েল নামক দুইটি রাষ্ট্রের সহাবস্থান সৃষ্টি হবে তখনও প্রশ্ন থেকে যায় ধর্মের নামে কিংবা জাতীয়তার নামে আধিপত্যের জন্যে মানুষের ঘৃণার কী পরিসমাপ্তি হবে? কারণ আধিপত্যের মূল অস্ত্রই তো এই ঘৃণা।


সিনাগগে হামলার পর মুসলিম ইমামরা ইহুদি ধর্মীয় নেতার সাথে দেখা করেন।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.