উলুঘ বেগের ধর্ম নিন্দার পরিণতি

ou8nlc

প্রমিথিউসের পথে বইটিতে উলুঘ বেগের ধর্ম নিন্দার ইতিহাসটা ও খুন হয়ে যাওয়ার বর্ণনা খুব ছোট আকারে আছে। সবার সাথে শেয়ারের উদ্দেশ্যে ইতিহাসটি ব্লগে টুকে রাখলাম।

চেঙ্গিস-তৈমুরের বংশধর জ্যোতির্বিদ উলুঘ বেগ (খ্রিঃ ১৩৭৪-১৪৪৯) লুণ্ঠন বা দিগ্বিজয়ী হয়ে বংশের ধারা বজায় রাখলেও হয়তো ইতিহাসে এতোটা অপরিচিত থাকতেন না। কিন্তু উলুঘ ছিলেন অন্য পথের পথিক। পিতৃসূত্রে সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হয়েও রাজ্য শাসনের চাইতেও অনেক বেশি আকর্ষণীয় ছিল তাঁর কাছে জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা। সমরখন্দের উপকণ্ঠে একটা পাহাড়ের উপর উলুঘ এক অসাধারণ মানমন্দির স্থাপন করেছিলেন। যদিও ধর্মান্ধরা একে ‘শয়তানের বাক্স’ নামে অভিহিত করে এবং সুযোগ খুঁজতে থাকে ভেঙ্গে ফেলার। এই মানমন্দিরে বসেই তাঁর পর্যবেক্ষণ, গবেষণা এবং “জিজ উলুঘ বেগ” গ্রন্থটির রচনা। মধ্যযুগের এই মানুষটি চিন্তাভাবনায় ছিলেন আশ্চর্য রকমের এগিয়ে থাকা। তিনি বলতেন, ধর্মমত একদিন অসার প্রতিপন্ন হতে পারে কিন্তু বৈজ্ঞানিক সত্য ধ্রুব, অবিনশ্বর।

সমসাময়িক কালের ক্ষমতাশালী সমাজপতিরা অবশ্যই উলুঘের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সুনজরে দেখেননি। জঘন্য কুটিল এক চক্রান্তে তাঁকে সিংহাসনচ্যুত করা হয়, আদেশ দেওয়া হয় মক্কায় গিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করে আসতে হবে। কেননা তাঁর বিজ্ঞানবোধ, তাঁর নব্যচিন্তাই ছিল পাপ! উলুঘ সে-দণ্ড শিরোধার্য করেও রেহাই পাননি। মক্কা যাবার পথেই গুপ্তঘাতকের খড়গ এই বিজ্ঞানসাধককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। তাঁর প্রাণস্বরূপ সেই মানমন্দিরটিও ধ্বংস করে ফেলা হয়।

জোর করে গ্যালিলিওর মুখ বন্ধ রাখলেও পৃথিবী ঘুরছে, ঘুরছে, ঘুরবেই। বৈজ্ঞানিক সত্যকে দাবিয়ে রাখা যায় না, সে নিজের জোরেই আত্মপ্রকাশ করে। উলুঘকে হত্যা করা হলেও তাঁর গবেষণাকর্ম সম্পূর্ণ লুপ্ত করা যায়নি। উলুঘের এক দুঃসাহসী শিষ্যের চেষ্টায় উলুঘ-রচনাবলী কনস্তানতিনোপল, কায়রো এবং দামাস্কায় থেকে প্রকাশিত হয়। ইউরোপে আসে সপ্তদশ শতাব্দীতে। গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান ও গতিবিধির সূক্ষ্ম বিবরণ, বহু জটিল পরীক্ষালব্ধ সিদ্ধান্তে ভরা উলুঘ-রচনাবলী আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিচারে এক মহান গবেষণা কর্ম।

সূত্র:বিশ্বকোষ (৫ম খণ্ড): রমাতোষ সরকারের নিবন্ধ

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.