
“আগে কাননবালারা আসতো পতিতালয় থেকে আর এখন আসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।” – হুমায়ুন আজাদ
এই প্রবচনটি নিয়ে ৯০ দশকে প্রচুর পরিমাণে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়, সমালোচিত ও বিতর্কিত হয়। হুমায়ুন আজাদ নিজেই ব্যাখ্যা করেছিলেন-
“কাননবালা ছিলেন এক সময়ের বিখ্যাত অভিনেত্রী; প্রখ্যাত নায়িকা। আমাদের বাঙলায় অভিনয়ের যে ইতিহাস, তাতে দেখা যায় পতিতা পল্লী থেকেই প্রথম নায়িকাদের মঞ্চে নেয়া হয়েছে। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েদের অভিনয় করতে দেয়া হতো না। কিন্তু আজকালতো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেয়েরা চলচ্চিত্রে যাচ্ছে, অভিনয় করছে এবং সারা পৃথিবীতে এখন প্রায় সবাই অভিনেত্রী হওয়ার জন্য পাগল। অনেকে কাননবালা কথাটির অর্থই বোঝেনি, তারা ভেবেছে কাননবালা বলতে আমি সরওয়ার্দি উদ্যানের রাতের মেয়েদের বুঝিয়েছি- মূর্খদের নিয়ে এই বিপদ। কানন বালা বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল, তার অর্থ যারা বিভ্রান্ত হয়েছিলেন তারা ভুল অর্থ করেছিলেন। আমি বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পন্ডিতেরাও কাননবালা কথাটির অর্থ বোঝেননি। প্রবচনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণীদের সম্পর্কে ছিল না, ছিল তাদের সম্পর্কে যারা অভিনেত্রী হওয়াকেই মনে করে জীবনের স্বার্থকতা। এমন একটা সাংস্কৃতিক রোগ ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে যে অভিনেত্রী হতে না পারলে সব বৃথা। আমাদের অসুস্থ বুর্জোয়া শ্রেণীটি অর্থের মূল্যের থেকে বাহ্যিক ঝলসানোকেই বেশি দাম দেয়; মেধাবী ছাত্রীটির থেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে অভিনেত্রী ছাত্রীটিকে। আমি এর বিরুদ্ধে। অভিনেত্রী হওয়ার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দরকার পড়ে না, যে অভিনেত্রী হতে চায় তার সরাসরি অভিনেত্রী হওয়ার চেষ্টা করাই উচিত, এতে গরীব দেশের অর্থের অপচয়ও কমে। বিশ্ববিদ্যালয় অভিনেত্রী তৈরির স্থান নয, জ্ঞানী তৈরির স্থান। অভিনেত্রী হচ্ছে পুরুষতন্ত্রের ভোগ্যপন্য, আমি চাই না আমার ছাত্রী ভোগ্যপন্য হোক।”
আমি একজন মুক্তমনা লেখক।আপনার সাথে কথা বলার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করছি।কিভাবে বলতে পারি?
LikeLike