শেখ মুজিবের জীবনে সবচেয়ে বেদনাদায়ক জন্মদিন সম্ভবত ৭৪ সালের ১৭ই মার্চ। এই দিনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করতে গিয়ে জাসদের ৬ কর্মী নিহত হয়, আহত হয় অসংখ্য। এছাড়া রবসহ জাসদের ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গুলি চালিয়েছিল পুলিশ ও রক্ষী বাহিনী। যেটা ১৯৭৪ রমনা গণহত্যা হিসেবে জাসদ দাবী করে। সরকারী প্রেসনোটে মাত্র ৩ জন দাবী করা হলেও জাসদ বলছে নিহত হয়েছে কম করে ৫০ জন।
মহিউদ্দীন আহমদ ‘জাসদের উত্থান ও পতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি’ বইতে ১১১ পৃ. ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন-“আ স ম আবদুর রবের অভিজ্ঞতা ছিল এরকম: আমাদের অনুমান ছিল মিছিলে পুলিশ বাঁধা দিতে পারে। তাই আমরা তিন ভাগ হয়ে তিনটি পথে যাই এবং পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলীর বাসার সামনে জড়ো হই। চারদিকে স্লোগান চলছে। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমরা একটা স্মারকলিপি দেব। কিন্তু তিনি বাড়িতে ছিলেন না। ওই দিন তিনি কেরানীগঞ্জে একটা জনসভায় ছিলেন। কয়েকজনকে দেখলাম বাড়ির গেটে আগুন দিচ্ছে। লোহার গেট কী আগুনে ধলে? হঠাৎ কোত্থেকে কয়েক ট্রাক পুলিশ আর রক্ষীবাহিনী এল। শুরু করল গুলি। জলিল ভাই, মমতাজ আর আমি একসঙ্গে ছিলাম। ইনু কমান্ড দিল, ‘সবাই শুয়ে পড়েন’। আমরা শুয়ে পড়লাম। বৃষ্টির মতো গুলি যাচ্ছে কানের পাশ দিয়ে, চুলের ভেতর দিয়ে। হঠাৎ দেখলাম, ইডেন কলেজের ছাত্রী মুকুল দেশাই গুলি খেয়ে পড়ে গেল। জাহাঙ্গীর আমার কাছেই ছিল। গুলি লেগে সঙ্গে সঙ্গেই মারা গেল।“
সরকারী প্রেস নোটে বলা হয়, তিনজন নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে জলিল, রব, মমতাজ বেগম ও মাঈনউদ্দিন খান বাদল ছিলেন। তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। মমতাজ বেগম তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ পরীক্ষার্থী। কোর্টে রিট করে তিনি প্যারালে মুক্তি পান। জাসদ দাবী করে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। মাঈনউদ্দিন খান বাদলের বাবা আহমদউল্লাহ খান ছিলেন পুলিশের ঢাকার তেজগাঁও অঞ্চলের ডিএসপি। বাদল পরে তাঁর কাছে শুনেছিলেন, ৪০-৫০টি লাশ রক্ষীবাহিনী ট্রাকে নিয়ে গেছেন।
