ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাম শুনলেই সাধারণ মারামারি আর উগ্র মৌলবাদীদের ঘটনা স্মরণে আসে। বিশেষ করে যে কোন ঘটনায় সেখানকার মাদ্রাসার ছাত্ররা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র সংঙ্গীতায়নে হামলা করে পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হয়। অথচ এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক সময় সঙ্গীতের শহর ছিল।। কবি আল মাহমুদের জন্ম এই ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই। তিনি তার “আত্মজৈবনিক রচনাসমগ্র” ব্রাহ্মণবাড়িয়া সম্পর্কে যে স্মৃতিচারণ করেছে (পৃ.২৯) তা থেকে সঙ্গীতের শহরখ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অততী সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
“ আমাদের শহরটিকে বলা হতো সঙ্গীতের শহর। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে প্রাতঃভ্রমণে বেরুলে ঘরে ঘরে হারমোনিয়ামের শব্দের সাথে ছোট ছেলেমেয়েদের সরগম সাধার বিচিত্র কলরব কানে এসে বাজত। যদিও আমাদের বাড়িতে আমার বাপ ছাড়া আর কেউ সঙ্গীতের প্রতি তেমন উৎসাহী ছিলেন না। পরে অবশ্য আমার আব্বাও কী কারণে জানি না তাঁর মধ্যবয়সে পৌঁছে সঙ্গীতচর্চা ছেড়ে দেন। সম্ভবত অভাবে দারিদ্র্যে তাঁর পক্ষে আর গান-বাজনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কিংবা হয়তো তাঁর মধ্যে মানসিক এমন কোনো বেদনা বা অনুশোচনা ছিল যার ফলে গান তাঁকে ত্যাগ করেছিল। আমাদের খাটের নিচে বহুদিন যাবত একটা তারহীন এস্রাজ পড়ে ছিল। আমি মাঝে মাঝে যন্ত্রটির ধুলো ঝেড়ে সাজিয়ে রাখতাম। কিন্তু আব্বা এস্রাজটির দিকে ফিরেও তাকাতেন না। ঘরের সুন্দর দামি হারমোনিয়ামটা বহুদিন আলমারির ওপর অযত্নে পড়ে থাকার পর একবার আব্বা এই প্রিয় জিনিসটি তাঁর এক মামাত ভাই মুকুন্দপুরের আবু সর্দারকে দিয়ে দেন। আমার জোতদার চাচা যখন হারমোনিয়ামটা নিয়ে যান তখন আমি ও আমার মা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে আবার কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলাম। এটুকু মনে আছে, আব্বা হারমোনিয়ামটার জন্য দুঃখ না করতে আমাকে অনেক বুঝিয়েছিলেন। আব্বা আমাকে বলেছিলেন, “তিনি চান না আমি গান-বাজনা করি কিংবা সুরের প্রতি আমার কোনরূপ আসক্তি জন্মাক।“ হয়তো জীবনের নানা হতাশা ও ব্যবসায় ক্রমাগত অসাফল্য ও ব্যর্থতার পর তাঁর মধ্যে এমন ধারণা শিকড় গেড়ে বসেছিল, সুকুমার কলার প্রতি আসক্তি ও তার গায়কসুলভ নমনীয় মনের জন্যই তাঁর পক্ষে বড় সফল ব্যবসায়ী হওয়া হলো না। যখন তাঁর অন্যান্য ভাই ও পাড়া-প্রতিবেশীরা দিন দিন তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে শনৈঃশনৈঃ আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে।
এখানে বলে রাখা ভালো যে আমাদের গ্রামটির অধিকাংশ পরিবারই ছিল ব্যবসায়ী পরিবার। সারা শহরে এ গাঁয়ের লোকদের দোকানপাট ছড়িয়ে ছিল। দরিদ্র অর্থাৎ দিনমজুর ধরনের লোক বলতে গেলে গ্রামে কেউ ছিলই না। বেশ বর্ধিঞ্চু পাড়া ছিল আমাদের মৌড়াইল। সুখী, শক্তিশালী ও সংস্কৃতিবান।
আব্বা যখন গান গাইতেন, হারমোনিয়াম বাজিয়ে গলা সাধতেন, তখনকার একটি ঘটনা আমার খুন মনে পড়ে। অকস্মাৎ শুনলাম উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত-সাধক ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ আমাদের শহরে এসেছেন। তিনি শহরের একটি সিনেমা হলে তাঁর অসাধারণ বাদ্যযন্ত্র সারোদ বাজাবেন। সারা শহরে তাঁকে একনজর দেখার ব্যাকুলতা উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল।
আমি আমার আব্বার কাছে প্রথম জানতে পারি ওস্তাদ খাঁ সাহেব আমাদের আদি বাড়ি নবীনগর থানার কাইতলার কাছেই শিবপুরে জন্মেছেন। তিনি যে একজন সাধারণ বাদক থেকে নিজ অধ্যায়বসায়ে উপমহাদেশীয় সঙ্গীতের সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণ করেছেন তা জেনে আমি সেই শিশু বয়সেও তারুণ উজ্জীবিত বোধ করেছিলাম। অবশ্য আবার কাছে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁয়ের রূপকথার মতো বিচিত্র জীবনকাহিনি শুনে আমি বায়না ধরলাম আমি ওস্তাদ খাঁ সাহেবকে দেখব।
আব্বা আমাকে প্রথমে খুব বোঝাতে চাইলেন, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত এমন এক ধ্রুবপদকলা যা আমার মতো বাচ্চা ছেলে কিছুই বুঝতে পারবে না। তা ছাড়া হলে ভিড় হবে খুব, আমাকে নিয়ে বসার জায়গা পাওয়া মুশকিল হবে। আমি আব্বার কথা প্রায় মেনেই নিয়েছিলাম বলা যায়। কিন্তু সন্ধ্যায় আব্বা যাবার সময় হঠাৎ তার কী মনে হলো, তিনি বললেন, ‘চল তোমাকে নিয়া যাই।‘
আব্বার কথায় আমি লাফিয়ে উঠলাম। আব্বা তাড়াতাড়ি আমাকে সিল্কের পাঞ্জাবি আর একটা শাদা সুন্দর ধোপদুরস্ত পাজামা পরিয়ে দিলেন। চুল আঁচড়ে টেরি কেটে দেওয়া হলো। খুদে ফুলবাবুটি।
এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার, আমার বাল্যে বা কৈশোরে আমার কোন পোশাক-পরিচ্ছদের অভাব ছিল না। জুতো-মোজার অভাব তো ছিলই না। কারণ আমাদের ছিল কাপড়ের দোকান আর আমার নানার ছিল পোশাক ও ফ্ল্যাক্সের জুতোর বিরাট দোকান। আব্বা মাল কিনতে কলকাতায় গেলে সব সময় আমার ও মায়ের জন্যে লেটেস্ট ডিজাইনের জুতো-জামা এবং শাড়ি-ব্লাউজ নিয়ে আসতেন। কোনো সময়ই খালি হাতে ফিরতেন না। পরে অবশ্য বাকি জীবন আমি সেই কৈশোরের বাবুয়ানা স্বভাবটি ভুলতে পারিনি। আর আজকাল তো একটা ভালো শার্ট পরার পর্যন্ত সাধ্যে কুলোয় না।
আমরা যখন হলে গিয়ে পৌঁছলাম দেখি তেমন লোকারণ্যের মতো কিছু না জমলেও লোকজনেরও কমতি নেই। হিন্দু সম্ভ্রান্ত পরিবারের যুবক-যুবতিরাই বেশি। তবে সঙ্গীতরসিক মুসলমান পরিবারের ছেলেমেয়েরাও আছে। তাদের সংখ্যা একেবারে নগণ্য। আমি আব্বার সাথে হলের সামনে কয়েক সারি বেঞ্চ বাদ দিয়ে পেছনে বসলাম। আমাদের পাশে বসেছেন ক্রিশ্চান মিশনের এক ফাদার। আমার আব্বার বিশেষ বন্ধু। আমাদের পেছনের সারিতে বোরখা পরা দুই ভদ্র মহিলা। সারা হলে রঙ-বেরঙের অনেক মানুষ। সবারই চোখে মুখে অধীর অপেক্ষা কখন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এসে পৌঁছবেন। হলে নানা রকম কথাবার্তা ও গুঞ্জন থাকলেও সমগ্র হলটিই মোটামুটি শান্ত, সুশৃঙ্খল। এটা হলো এই শহরটির একটা অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। জানি না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কখন, কীভাবে এ গুণ অর্জন করেছিল। আমার জীবনে আমি এ দেশের কতো অনুষ্ঠানে যোগদান করেছি। গেছি এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। অক্লান্তভাবে ভ্রমণ করেছি গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। কতো মঞ্চে মাইকের সামনে দাঁড়ানোর সৌভাগ্য হয়েছে আমার। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মতো নিরূপদ্রব দর্শক আমি কমই দেখেছি। মঞ্চের ক্রুটি, মাইকের গোলযোগ কিংবা বক্তার একঘেয়েমি, একটি অনুষ্ঠানে সম্ভবপর যত অসুবিধাই ঘটুক না কেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের মতো রিজনেবল, নির্বিকার সাংস্কৃতিক শ্রোতা খুব কমই পেয়েছি। কেউ যেন না ভাবেন আমি নিজের শহরের গুণপনা জাহির করার জন্য আমি খানিকটা বাড়িয়ে বলছি। বরং নিজের শহর বলতে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকাকেই ভালোবাসি বেশি। যে শহর জন্ম দেয় কিন্তু জীবিকা দিতে পারে না, সে শহর থেকে জীবিকাদাত্রী শহরকেই মাতৃতুল্য আপন নগরী মনে করি আমি। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মে শুধু কৈশোরের কালটাই যাপন করেছি। কিন্তু ঢাকা আমাকে দিয়েছে যৌবনের বিস্ময়, প্রেম, খ্যাতি, ও কবিতা। দিয়েছে সাহিত্যিক ঈর্ষা ও অবাধে সর্বপ্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবার এবং কথা বলার অধিকার। সর্বোপরি সারা বিশ্বের আধুনিক সাংস্কৃতিক প্রবাহের সাথে নিজের আবেগকে যোজিত করার এক অভাবিত সুযোগ। তবুও বলব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সাধারণ মানুষেরাও উত্তরাধিকার সূত্রে এমন এক ধরনের সাংস্কৃতিক স্থৈর্যের পরিচয় দিয়ে থাকে যা সহজলভ্য নয়। সম্ভবত এ শহরের নর-নারীরা এটা অর্জন করছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সঙ্গীতকলার চর্চা সাধনার মধ্য দিয়ে। সঙ্গীতকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ এমন এক আধ্যাত্মিকতার বিকাশ বলে ধারূণা করে দিয়েছে যে, এর গূঢ় রহস্যের সন্ধান করতে হলে যোগ্য লোকের দ্বারা গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
আমি অকপটে স্বীকার করি, আমি গবেষক নই। একজন বিস্মিত কবি মাত্র। আর কবিদের যা হয়, কিছুটা দায়িত্বহীন বটে।
মঞ্চের দিকে তাকিয়ে দেখি মখমলের এক প্রমাণসাইজ বিছানার ওপর একজোড়া তবলাবোঁয়া ও কাপড়ে ঢাকা একটি বাদ্যযন্ত্র কারা যেন রেখে গেছে। আমি মনে মনে ধারণা করে নিলাম, ওই যন্ত্রটি সম্ভবত সরোদ হবে। তখনও সরোদ যন্ত্রটি চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। আব্বার দিকে একবার তাকালাম, আব্বা আমার ব্যাকুল প্রতীক্ষার উত্তেজনা টের পেয়ে চোখের ইশারায় জানালেন, এক্ষুনি আসছেন তিনি।
একটু পরেই কে একজন হাত ধরে ধবধবে শাদা পোশাক পরা দরবেশের মতো এক বৃদ্ধকে মঞ্চে নিয়ে এলেন। এলেন সমস্ত দর্শক তাঁর সম্মানার্থে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি হলে ঢুকেই খুব স্পষ্ট উচ্চারণে সবাইকে আসসালামু আলাইকুম বললেন। দর্শকগণ একবাক্যে তাঁর সালামের জবাব দিলে তিনি মঞ্চের ওপর মখমলের বিছানাটির ওপর বসলেন। আব্বা অনুচ্চকণ্ঠে আমাকে বললেন, ‘দ্যাখো ইনিই ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’। আমি তাঁর প্রতি অপলক তাকিয়ে রইলাম। উইংসের অন্য পাশ থেকে আর একজন অশীতিপর বৃদ্ধ হাতজোড় করে এগিয়ে এসে তাঁর পায়ে হাত দিয়ে কদমবুসি করতে গেলে তিনি সসঙ্কোচে লোকটির হাত টেলে দিয়ে বললেন, ‘আরে আরে করেন কী, আপনি আমাকে গোনাগার বানালেন।‘
লোকটি কিন্তু তাঁর কথায় কর্ণপাত না করেই তাঁর ছুঁয়ে দিয়ে একটুও দ্বিধান্বিত না হয়ে তবলাবাঁয়া নিয়ে বসে পড়লেন। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ কতক্ষণ তাঁর দিকে তাকিয়ে থেকে কী যেন বললেন। বৃদ্ধ লোকটি তাঁর দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে হেসে জবাবও দিলেন মনে হলো। তারপর একটি ছোট ঠুনকি হাতুড়ি দিয়ে তবলার গাঁট ঠিক করতে বসলেন। ততোক্ষণে খাঁ সাহেব শাদা কাপড়ের ভেতর থেকে তাঁর অপরূপ বাদ্যযন্ত্রটি বের করলেন। যন্ত্রটি মনে হলো আনকোরা নতুন। সখলের চোখের সামনে সেতারের স্বগোত্র তারযুক্ত পেট মোটা আরেক অতিকায় সেতার ঝলমলিয়ে উঠল। আব্বার আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন, ‘এই হলো সরোদ। দ্যাখ, এই যন্ত্রটি তিনিই আবিষ্কার করেছেন। তাঁর হাতেরই বানানো।‘ আমি অবাক হয়ে ওস্তাদের হাতে ঝকমকে বাদ্যযন্ত্রটির সাবধানী নড়াচড়া দেখতে লাগলাম।
অতিশয় নম্রহাতে তিনি যন্ত্রটির বইলা মুচড়ে বিন ঠিক করলেন। আর তবলাটিকে সাহায্যের জন্যে দু’একটা টুংটাং মিষ্টি শব্দ তুললেন। একবার যন্ত্রটি কোলের ওপর রেখে মাথার শাদা কিস্তি টুপিটা আঁটকরে পরে দিয়ে দর্শকদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বললেন, ‘আমার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ, আমার ভাইবোনেরা, আমি মূর্খ লোক। আমি কিছুই শিখিনি, কিছুই জানি না। আপনারা আমাকে এখানে বসিয়ে দিয়েছেন, কী বাজাব? আমি যে আল্লাহ নাম ছাড়া কিছুই জানি না। আমার আঙুল শুধু আল্লাহ আল্লাহ বাজিয়ে দিন কাটিয়ে দিয়েছে ভাইসব। ওস্তাদের কাছে এই একটা আওয়াজই শিখতে চাইলাম। আজও মনের মতো করে শিখতে পারলাম না। আপনাদের অনুমতি পেলে আল্লাহর নাম বাজিয়ে শোনাই।‘ সারাটা হল স্তব্ধ হয়ে থাকল। যেন প্রতিটি নিরুত্তর মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ আমার হৃদপিণ্ডে আছড়ে পড়ছে।
হঠাৎ সরোদের তারের ওপর ওস্তাদের শুদ্ধ আঙুলগুলো বিদ্যুৎ ঝলকের মতো নেচে বেড়াতে লাগল। তবলায় ঠেকা দেবার জন্য উন্মুখ হয়ে বসে আছে অশীতিপর বৃদ্ধটি। ওস্তাদ সেদিকে কিছুক্ষণ ফিরেও তাকালেন না। আপন মনে গভীর তন্ময়তার সাথে তার যন্ত্রটির ওপর আঙুল বুলিয়ে যেতে লাগলেন। যেন একটি সুরের মাকড়সা সমগ্র হলঘর, মানুষ ও আলোর ঝালরগুলোকে ঘিরে এক অদৃশ্য মায়াজালে বেঁধে ফেলতে চাইছে। সামান্য সময় মাত্র এ অবস্থাটি স্থায়ী হলো। তিনি তাঁর হাত সক্রিয় রেখেই তবলচির দিকে চোখ তুলে মৃদু হাসলেন। আর সাথে সাথে তবলা জোড়া এক অপার্থিব “আল্লাহু” শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে ডগমগিয়ে উঠল। সারা হলে সরোদ নামের এই অসাধারণ পেট মোটা অতিকায় সেতারটি ‘আল্লাহু’ জিকিরের তুফান তুলে উথাল-পাতাল করতে লাগল।
আমি ওস্তাদের মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলাম। আমার সেই বাল্য বয়সেই কেন জানি মনে হয়েছিল আলাউদ্দিন খাঁ এই পৃথিবীর যেন কেউ নন। তাঁর নির্মীলিত চোখ, তাঁর বিদ্যুতের মতো আঙুলের গতি সারাজীবন যেন একটি বাজনাকেই, একটিমাত্র ঐকতানকেই মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। সেই ঐকতান হলো ‘আল্লাহু’। পরবর্তীকালে বিশ্বব্যাপী তাঁর খ্যাতির পেছনে ছিল তাঁর এই নিরহঙ্কার ব্যাকুল বিশ্বাস। এই বিশ্বাসের জোরেই তিনি উপমহাদেশীয় সঙ্গীত স্রোতকে মন্দাকিনীর মতো সারা পৃথিবীর বৃকের ওপর দিয়ে বইয়ে দিতে পেরেছিলেন।
আকাল তাঁর ওপর কত অসংখ্য আলোচনা-সমালোচনা, বইপত্র ও ম্যাগাজিন দেখি, কই কেউ তো তাঁর সেই আল্লাহু আল্লাহু মহিমা কিংবা তাঁর আধ্যাত্মিক দিকটি নিয়ে আলোকপাত করেন না?