।।দাউদকান্দিনিউজ.কম এ লেখাটি ছাপা হয়। কিন্তু লেখকের নাম দেয়নি ।।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। সে নির্বাচনে দাউদকান্দি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। একই আসনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশিদ। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী মোশতাকের বিতর্কিত ভূমিকা ও স্বাধীনতা পরবর্তী স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানামুখি প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থার কারণে সে নির্বাচনে মার্কা নৌকা হওয়ার পরও আব্দুর রশিদের কাছে বিপুলভোটে পরাজিত হন মোশতাক। নির্বাচনের দিন বিকেলে হেলিকপ্টারযোগে ভোটবাক্স ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পর- মোশতাককেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
বন্ধুকে পরাজয়ের লজ্জা থেকে বাঁচাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই এই উদ্যোগ নেন বলে সর্বমহলে একথা প্রচারিত। তখনকার স্থানীয় সব রাজনীতিকই এর সত্যতাও জানিয়েছেন।
কিন্তু সম্প্রতি পাওয়া গেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। তা হল- দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও মোশতাকের নিশ্চিত পরাজয় ঠেকান বঙ্গবন্ধু। এই তথ্য উঠে এসেছে বর্তমানে বৃহত্তর কুমিল্লার সবচেয়ে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আহমেদ আলীর স্মৃতিচারণমূলক ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস’ গ্রন্থে। কুমিল্লা থেকে ২০১৬ সালের আগস্টে প্রকাশিত গ্রন্থটিতে আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ ও কুমিল্লা আওয়ামী লীগের রাজনীতি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্যও রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহযোগী ও প্রবীণ এই রাজনীতিকের বর্তমান বয়স ৯১ বছর।
গ্রন্থে তিনি লিখেন-
… ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাস দুইয়েক আগে বঙ্গবন্ধু… টেলিফোন করে আমাকে ‘এক্ষণে রওয়ানা দিয়ে ঢাকায় আসো, বিশেষ কথা আছে’ বলেই ফোন রেখে দেন।…৫১ নং পুরানা পল্টনে অবস্থিত তখনকার আওয়ামী লীগ অফিসে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে তিনি বলে উঠেন, ‘সেই দশটা থেকে তোমার অপেক্ষা করছি।…গতরাতে একটা খবরে খুবই উদ্বিগ্নবোধ করছি। তাই তোমাকে ডেকে আনলাম।…অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পেলাম- মোশতাকের অবস্থা নাকি শোচনীয়। আর তার মূল হলো হাসানপুর কলেজ সংক্রান্ত বিষয়ে আব্দুস সামাদের সাথে তার বিরোধ।… অতি সত্বর উদ্যোগ নাও। কারণ দলে সহসভাপতি হিসেবে দাউদকান্দির আসনটির সাথে দলের মানসম্মান জড়িত।তাই আমি খবু উদ্বিগ্ন।’ [পৃষ্ঠা- ৯৫]
বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশে আহমেদ আলী দ্রুত কুমিল্লায় এসে মোশতাকের পরাজয় ঠেকাতে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বিভিন্ন কুশলী প্রচার-প্রচারণাসহ মোশতাকের নির্বাচনের জন্য লোকজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে অর্থসংগ্রহ করেন। কারণ মোশতাকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া আব্দুস সামাদ ছিলেন তখনকার দেশসেরা শিল্পপতি ও ধনী। এ বিষয়ে আহমেদ আলী লিখেন-
… এক সপ্তাহ ধরে অবস্থান করে আমার সংগৃহীত অর্থ দিয়ে খন্দকার মোশতাকের বাড়ি গিয়ে হস্তান্তর করার সাথে সাথে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলে উঠেন, তুমি আমাকে চিরঋণী করে ফেললে।’ [পৃষ্ঠা-৯৭]
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সংগৃহীত এই অর্থ নির্বাচনে ব্যয় করে বিজয় নিশ্চিত করেন মোশতাক। কিন্তু পরে আহমেদ আলীর এই ঋণের প্রতিদান মোশতাক কীভাবে দিলেন, তা জানা যাক লেখকের বক্তব্যেই। তিনি লিখেন-
[স্বাধীনতার পর]… অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক(বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাবা)… বলেন, বঙ্গবন্ধু আপনাকে ডেপুটি স্পিকার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খন্দকার মোশতাক পদত্যাগর হুমকি দেয়ার এখানে আপনার নাম কেটে বঙ্গবন্ধু মোহাম্মদ উল্লাহর নাম বসাতে বাধ্য হন।’ [পৃষ্ঠা-৯৫]
Note: মোশতাকের জন্য অনেক কিছুই করেছেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু প্রতিদানে মোশতাক কী করেছেন- সেই কলঙ্কিত ইতিহাস কমবেশি সবার জানা। তাই এখানে উল্লেখ করা হল না।