১০০ বছরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কী এক অদ্ভুত বিবর্তন

ব্রিটিশ আমলে বিএ পাশ করে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হলে বেতন হতো ৮০০-৮৫০ টাকা। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের দশ-পনের বছর ধরে বেতন পেত মাত্র ২০০ টাকা। শিক্ষকরা চাইলে চাকরি ছেড়ে ম্যাজিস্ট্রেট হতে পারতো কিন্তু এরা এমএ, পিএইচডি করেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে থাকতো। এই বেতন নিয়েও এদের তেমন অভিযোগ ছিল না। এই ধারাবাহিকতা ছিল পাকিস্তান আমলেও। শিক্ষকদের বেতন থেকে অনেক বেশি বেতন ছিল আমলাদের। তারপরও সেরারাই শিক্ষক হতে চাইতেন। যেমন, পাকিস্তান আমলে গোয়েন্দার সংস্থার প্রধান আওয়ার জাতীয় অধ্যাপক রাজ্জাক স্যারের প্রায় সময় বয়সী ছিলেন (ব্রিটিশ আমলে)। তিনি বিএ পাশ করে পুলিশে যোগ দেন পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে গোয়েন্দা প্রধান। অন্যদিকে রাজ্জাকের মতন অধ্যাপকরা খুব কম বেতনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন সম্ভবত ২০০ টাকার বেতনে ১০-১৫ বছর শিক্ষকতা করেছিলেন। বেতন নিয়ে তার অভিযোগও ছিল না।

ব্রিটিশ আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ আইসিএস (তৎকালীন বিসিএস আরকি) পাশ করতে পারে নাই। এই কথা আবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলায় বলা যাবে না। তবে একটা কথা উল্লেখ করলেই নয়, ব্রিটিশ আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অপেক্ষায় সম্ভবত কলকাতার প্রেসিডেন্সি (কলেজের নামটা ভুলও হতে পারে) কলেজের বাজেট ছিল বেশি। তারপরও অনেক শিক্ষক নিজের প্রচেষ্টায় গবেষণা ও লেখালেখি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করেছেন। এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিলেত থেকে অধ্যাপক নিয়ে আসা হতো। অদ্ভুত বিষয় হল কোন কোন শিক্ষক আনলে ভাল হয় সেই তালিকা তৈরিতে আবার সাহায্য করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তার কর্তৃত্ব কমে যাবে ভেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিলেন।

রাজ্জাক স্যার বলেন- “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি প্রধান অবদানের একটি হল পাকিস্তান আন্দোলনের মনস্তাত্ত্বিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ভিতটি তৈরি করা। দ্বিতীয় অবদান বাংলা ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বদান এবং তৃতীয় অবদান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংকল্প এবং কর্মপন্থার দিকনির্দেশনা। এই জনগোষ্ঠীর জীবনে ওই তিনটিই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কিন্তু জ্ঞানচর্চার যে আরও একটি বৈশ্বিক মানদণ্ড রয়েছে তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান বিশেষ কিছু নেই। বিশেষত পাকিস্তান সৃষ্টির পরে জ্ঞানচর্চার উত্তাপ আরও অবসিত হয়েছিল। পাকিস্তান-সৃষ্টির পরে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ মতো নিবেদিতপ্রাণ মানুষও নতুন কোনো গবেষণাকর্মে আত্মনিয়োগ করেননি। তিনি বিয়ে পড়ানো এবং মিলাদ শরিফ করে সময় কাটাতেন।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু এটা কখনো ভেবে দেখছেন জিন্নাহ মতন মানুষের সামনে নো নো বলে প্রতিবাদ করা সেই ঢাবি ও ঢাবি শিক্ষার্থীরা স্বাধীনতার পর ৭ মার্ডার (৭৪) থেকে শুরু করে, চাঁদাবাজি আবার ১৪ই ডিসেম্বরের ঢাবির সেই শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীর উত্তরসূরীরা এখন চমুচা সিঙ্গারা নিয়ে আছে। ১০০ বছরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কী এক অদ্ভুত বিবর্তন!

সূত্র:

যদ্যপি আমার গুরুআহমদ ছফাঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববঙ্গীয় সমাজসরদার ফজলুল করিম (রাজ্জাক স্যারের সাথে আলাপচারিতা)

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.