
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে প্রধানত দুই শ্রেণির রাজনীতি বিদ্যমান; ১. আওয়ামী লীগ ২. আওয়ামী বিরোধী। বিএনপি নামক দলটি দেখতে দলের মতন দেখায় কিন্তু কখনো দল হয়ে উঠতে পারে নি। আওয়ামী লীগের শাসন আমলে কিংবা আওয়ামী লীগ থেকে যারা অত্যাচারিত হয়েছে তারাই বিএনপি নামক দলটিতে যোগ দিয়েছে। দলটি বৃদ্ধাশ্রমের মতন বলা যেতে পারে। যারা আওয়ামী লীগে জায়গা পায়নি কিংবা আওয়ামী লীগ যাদের ত্যাজ্য করেছে তাদের বেশির ভাগই বিএনপি নামক দলে যোগ দিয়েছে। বিএনপি রাজনীতির এক মাত্র আদর্শ হল আওয়ামী লীগ বিরোধিতা। বর্তমান আওয়ামী লীগ নীতি নৈতিকতার বালাই না রাখলেও এর একটি আদর্শ ছিল যা বিএনপি’রও ছিল না। এছাড়া বাংলাদেশে বাম দলগুলো আসলে বিভিন্ন দলের বি টিম হিসেবে কাজ করে। যেমন স্বাধীনতার পর এরা অনেকেই আত্মহত্যা করে আওয়ামী লীগে মিশে গেছে। ছাত্র ইউনিয়ন কিংবা রাশিয়ান-পন্থী দলগুলো আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতা সাপ্লাই দিয়ে থাকে। বিএনপি পন্থীতে ঝুঁকে চীনপন্থি বাম দলগুলোর কর্মীরা। এই এক অদ্ভুত কাণ্ড আমাদের দেশে। এই বাম দলের নেতাদের শেষ গন্তব্য আওয়ামী কিংবা আওয়ামী বিরোধী শিবিরে। একটা বিষয়ে সব দল এক তাহলো শাসনতন্ত্রে! উচ্চশ্রেণির স্বার্থ রক্ষায় এরা কাজ করে যায়। আওয়ামী লীগের সব কিছুর বিরোধীতা বিএনপি জামাত করলে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বেতন বাড়ানোর সময় কেউ প্রতিবাদ করে না কারণ এই ফল তারাও খাবে তারা সেটা জানে
রাজনৈতিক মাঠে রাজনৈতিক দলগুলো নাটক করে। আর আমরা সাধারণ জনগণ সেই নাটকের মাদকে বুদ হয়ে বসে থাকি। যারা প্রতিনিয়ত বিএনপি-জামাতের গুষ্ঠি উদ্ধার করে বক্তব্য রাখে তারা যেমন অসৎ তেমনি যারা সারা জীবন আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে আসছে তারাও সামাজিকভাবে অসৎ। এরা রাজনৈতিক মাঠে একেক জন একেক জনের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখলেও রাতের বেলায় খাবারটা এক সাথেই খায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মৌলবাদ সব কিছু জবাই হয় এক টেবিলে। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা কে কার আত্মীয় এই নিয়ে মানব জমিন থেকে শুরু করে কয়েকটি পত্রিকা রিপোর্ট করে। তবে ফেসবুকে সুন্দর করে ধাপে ধাপে পোস্ট করেন তানজির ইসলাম বৃত্ত। শাসক শ্রেণির প্রতারণার প্রমাণ হিসেবে ব্লগে রেখে দিলাম।
মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা।
একমাত্র মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তার স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতু বর্তমান সরকারের এলজিআরডি মন্ত্রী এবং ফরিদপুর-৩ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে। ফলে শেখ হাসিনা ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ সম্পর্কে বেয়াই-বেয়াইন।
পুতুলের দাদাশ্বশুর খন্দকার নুরুল হোসেন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ফুফাতো ভাই।
খন্দকার মোশাররফের ছোট ভাই খন্দকার মোহতাশিম হোসেন হলেন ফরিদপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান।
শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ননদের স্বামী হলেন সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. ওয়াজেদ মিয়ার বড় বোনের নাতনি হলেন আওয়ামী লীগ সরকারের হুইপ গাইবান্ধা-২ আসনের এমপি মাহবুব আরা গিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে হলেন শেখ রেহানা। তার মেয়ে হলেন টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। যিনি বৃটেনের ৫৬তম জাতীয় নির্বাচনে হ্যামপস্টেড এবং কিলবার্ন আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন লেবার দলীয় এমপি।
আইভী রহমান হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার খালা শাশুড়ি। সে হিসেবে জিল্লুর রহমান হলেন শেখ হাসিনার তালই। আবার জিল্লুর রহমান ও আইভী রহমানের সন্তান হলেন ভৈরব-কুলিয়ারচর আসনের আওয়ামী লীগদলীয় এমপি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
বঙ্গবন্ধুর বোন আছিয়া বেগমের দুই ছেলে হলেন শেখ ফজলুল হক মণি ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সম্পর্কে তারা শেখ হাসিনার আপন ফুফাতো ভাই।
যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস ঢাকা-১০ আসন-এর এমপি।
বঙ্গবন্ধুর আরেক ভাগনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম হলেন সাবেক মন্ত্রী ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের এমপি।
শেখ সেলিমের বোনের স্বামী হলেন বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা ও এরশাদ সরকারের সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জুর। যিনি পরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে যোগ দেন। মঞ্জুর সম্পর্কে শেখ হাসিনার ফুফাতো বোনের স্বামী।
আবার মঞ্জুর দুই ছেলে বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ ও ড. আশিকুর রহমান শান্ত। বর্তমানে তারা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয়। শেখ হাসিনা সম্পর্কে তাদের খালা।
আবার শেখ সেলিমের ছেলে বিয়ে করেছেন বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মেয়েকে। অবশ্যই ইকবাল হাসান টুকু ছাত্র জীবনে বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ্য পুত্র শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহপাঠি ছিলেন।
শেখ সেলিমের আরেক ছেলে বিয়ে করেছেন আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের মেয়েকে। এই মুসা বিন শমসেরের ছেলে ববি হাজ্জাজ হলেন এরশাদের সাবেক মুখপাত্র ও জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা।
বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসের। তার ছেলে হলেন বাগেরহাট-১ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় এমপি শেখ হেলাল। তার মেয়ের জামাই হলেন ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। শেখ সেলিম ব্যারিস্টার পার্থের মামা ও শেখ হেলাল পার্থের শ্বশুর।
আবার শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ মণি ও শেখ সেলিমের আরেক ছোট বোনের জামাই হলেন যুবলীগের বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। আর শেখ সেলিমের ভায়রা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী জামালপুর-১ আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ।
বঙ্গবন্ধুর বড় বোনের জামাই হলেন আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আবদুর রব সেরনিয়াবাত। সেরনিয়াবাতের ছেলে হলেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ বরিশাল-১আসনের আওয়ামী লীগদলীয় এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। শেখ হাসিনা ও হাসানাতআবদুল্লাহ পরস্পরের মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোন।
আবার হাসানাত আবদুল্লাহর ছোটবোনের দেবর হলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি মাহবুবুল আলম হানিফ। তিনি সম্পর্কে শেখ হাসিনার বেয়াই।
আবার হাসানাত আবদুল্লাহর সম্পর্কে চাচাতো ভাই হলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।
শেখ হাসিনার আরেক ফুফাতো ভাই হলেন মাদারীপুরের সাবেক এমপি প্রয়াত ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী। ইলিয়াস চৌধুরীর বড়ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী) আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক হুইপ ও মাদারীপুর-১ আসনের এমপি। ইলিয়াস চৌধুরীর ছোট ছেলে মজিবুর রহমান চৌধুরী(নিক্সন চৌধুরী) ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র এমপি। সে হিসেবে লিটন ও নিক্সন চৌধুরী সম্পর্কে শেখ হাসিনার ভাতিজা।
শেখ হাসিনার সম্পর্কে আরেক ফুফাতো ভাইহলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাদারীপুর-৩ আসনের এমপি বাহাউদ্দিন নাছিম।
শেখ হাসিনার চাচা সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লি. এর চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের বেয়াই হলেন বিএনপির দীর্ঘ সময়ের মহাসচিব এবং ওয়ানইলেভেনের সংস্কারপন্থি শীর্ষ নেতা প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। মান্নানভূঁইয়ার ছেলের সঙ্গে পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়েছে শেখ কবিরের মেয়ের। সে হিসেবে শেখ হাসিনার সম্পর্কে তালই হলেন মান্নান ভূঁইয়া।
এছাড়া শেখ হাসিনার সম্পর্কে ফুফা হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যও সাবেক মন্ত্রী ঝালকাঠি-২ আসনের এমপি আমির হোসেন আমু। তার স্ত্রী প্রয়াত ফিরোজা হোসেন সম্পর্কে শেখ হাসিনার ফুফু।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব প্রয়াত শেখ শহীদুল ইসলাম আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার খালাতো ভাই। শেখ শহীদুল ইসলাম ছিলেন এরশাদ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী। শেখ হাসিনার দূর সম্পর্কের ফুফা হলেন লে. জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান বীরবিক্রম।
জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন।পুরানো সম্পর্কে তারা পরস্পরের দূরসম্পর্কীয় খালাতো ভাই-বোন।
জিয়া পরিবারের দুই সন্তান তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো। তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান।
তারেক রহমানের শ্বশুর হলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান মাহবুব আলী খান। মাহবুব আলী খানের পিতা আহমেদ আলী খান ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলিম ব্যারিস্টার।
জিয়াউর রহমানের বড় ভাই রেজাউর রহমান নৌবাহিনীতে মাহবুব আলী খানের সহকর্মী ছিলেন।
তারেক রহমানের শ্বশুর মাহবুব আলী খান ছিলেন ‘জাগদল’ সদস্য ও জিয়া সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী।
তারেক রহমানের জেঠাশ্বশুর হলেন মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ও পরে জনতা পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী।
তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের খালু হলেন ফরিদপুরের বিখ্যাত খন্দকার পরিবারের সন্তান হিরু মিয়া। আর হিরু মিয়া হলেন বঙ্গবন্ধুর ফুফাতো ভাই এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের চাচাতো দাদা শ্বশুর। আবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক মহাসচিব আইরিন খান হলেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের আপন জেঠাতো বোন।
খালেদা জিয়ার বড় বোন প্রয়াত খুরশিদ জাহান হক ছিলেন দিনাজপুর সদর আসনেরসাবেক এমপি ও বিএনপি সরকারের মন্ত্রী।
খালেদা জিয়ার দুই ভাগনে ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম তুহিন নীলফামারী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি।
আরেক ভাগনে সাইফুল ইসলাম ডিউক সাবেক সামরিক কর্মকর্তা।
খালেদা জিয়ার ভাইপ্রয়াত মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দার ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপিকেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন।
ওয়ান ইলেভেনের ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ে আলোচিত সেনাকর্মকর্তা লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী সম্পর্কে সাঈদ এস্কান্দার ভায়রা ভাই।
আবার সাঈদ এস্কান্দারের বেয়াই হলেন আওয়ামী লীগ নেতা ওহোটেল রাজমণি ঈশা খাঁর মালিক আহসান উল্লাহ মণি। সাঈদ এস্কান্দারের ছেলেরকাছে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন মণি।
আবার বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রীব্যারিস্টার নাজমুল হুদার স্ত্রী সিগমা হুদার বড় ভাই দারা কবির বিয়ে করেছেন জিয়াউর রহমানের খালাতো বোন আতিকা শিরিনকে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানলে. জেনারেল (অব.) হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার আপন ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদেরজাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী।
এরশাদের আরেক ভাই প্রয়াত মোজাম্মেল হোসেন লালু ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি। এরশাদের ভাতিজা হলেন রংপুর-১ আসনের এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। এরশাদের বোন মেরিনা রহমান সাবেক এমপি এবং ভগ্নিপতি প্রয়াত ড. আসাদুর রহমান রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।
আবার এরশাদেরসম্পর্কে মামা ছিলেন বঙ্গবন্ধু, জিয়া ও এরশাদ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়েরমন্ত্রী রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের সহধর্মিণী রওশন এরশাদ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১০ম সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী। তিনি ময়মনসিংহ সদর ও গাইবান্ধা থেকে একাধিকবারনির্বাচিত এমপি।
এরশাদের শ্যালক হলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ীপ্রতিনিধি কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ। তার শ্বশুর হলেন বিএনপির প্রথমদিকেরঅন্যতম শীর্ষ নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া। যাদু মিয়ার মেয়ে মুক্তি রহমানরহমানকে বিয়ে করেছেন এরশাদের শ্যালক মহিউদ্দিন আহমেদ। সে হিসেবে এরশাদ এবং২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গানি পরস্পরেরআত্মীয়। আবার রওশন এরশাদের বড় বোন মমতা ওয়াহাব ছিলেন এরশাদ সরকারেরমন্ত্রী।
বিকল্পধারার সভাপতি প্রফেসর ডা. এ কিউ এমবদরুদ্দোজা চৌধুরী। তার পিতা ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্টেরমন্ত্রী কফিলউদ্দিন চৌধুরী। বদরুদ্দোজা রাজনীতিতে আসেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাশহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। বিএনপির প্রথম মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করেন প্রফেসর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। বি. চৌধুরীর ছেলে হলেনবিএনপি সরকারের সাবেক এমপি ও বর্তমানে বিকল্পধারার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবমাহী বি. চৌধুরী।
বি. চৌধুরীর শ্যালিকা হলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিপান্না কায়সার। বি. চৌধুরী হলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের ভায়রাভাই। শহীদুল্লাহ কায়সার ও জহির রায়হানের কাজিন হলেন ঘাতক দালাল নির্মূলকমিটির অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব শাহরিয়ার কবির।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের মেয়ের ভাসুরহলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। আরেকসাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহমেদের আপন ভাতিজা হলেন কৌতুকঅভিনেতা টেলিসামাদ। আর টেলিসামাদের শ্বশুরের পরিবার হচ্ছে মুন্সীগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রাণকেন্দ্র। টেলিসামাদের স্ত্রীর বড় ভাই হলেন মো.মহিউদ্দিন। যিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বডিগার্ড ও সাবেক এমপি। অন্যজন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুজ্জামান। বিএনপি সরকারের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিএনপির স্বল্পকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি আবদুসসাত্তার। তার সম্পর্কে ভাগনে হলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগেরসাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এছাড়া সাবেকপ্রেসিডেন্ট ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত জিল্লুর রহমানের সঙ্গেদূরসম্পর্কীয় আত্মীয় হলেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও বিএনপি সরকারেরসাবেক মন্ত্রী মে. জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী বীরউত্তম। মীর শওকতের আপনফুফাতো ভাই হলেন ভোলার চরফ্যাশন আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি প্রয়াতজাফরউল্লাহ চৌধুরী।
মানববজমিন
আত্মীয়তার বন্ধনে রাজনীতি-৪
-কাফি কামাল
ভারতীয় উপমহাদেশে আরেকটি প্রভাবশালী উপাধি খান বা খাঁ। মঙ্গোলীয় ও তুর্কি ভাষা থেকে উৎপন্ন এ উপাধির আভিধানিক অর্থ সেনানায়ক, নেতা বা শাসক। মোগল আমলে নজিরবিহীনভাবে বিশিষ্টতা অর্জন করে খান উপাধি। বৃটিশ ও পাকিস্তান আমল পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতেও ব্যাপক প্রভাবশালী কিছু খান পরিবার।
বাংলাদেশের রাজনীতি ও ব্যবসায়িক জগতে অন্যতম বিখ্যাত চট্টগ্রামের খান পরিবার। আবুল কাসেম খান (এ কে খান) ছিলেন অবিভক্ত ভারতের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি মেম্বার ও পাকিস্তানের ফেডারেল মিনিস্টার। পরবর্তীকালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বিখ্যাত একে খান গ্রুপ অব কোম্পানি। একে খানের ছেলে প্রয়াত জহিরউদ্দিন খান ছিলেন জিয়া সরকার ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ৫ম সংসদের পরিকল্পনা ও শিল্পমন্ত্রী। একে খানের ভাগনে হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। তিনি এরশাদ সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। জহিরউদ্দিন খান ও মোরশেদ খান আপন মামাতো-ফুফাতো ভাই। মোরশেদ খানের বেয়াই হলেন আওয়ামী লীগের বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সালমান এফ রহমানের ছেলে সায়ান রহমানের কাছে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন মোরশেদ খান। আবার এ কে খানের ভাগনি জামাই হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমান। একে খান পরিবারের আরেক জামাতা বিএনপি নেতা সাবেক সচিব ও মন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন। এছাড়া খান পরিবারের আরও দুই জামাই হলেন বঙ্গবন্ধু হত্যায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কর্নেল (অব.) ফারুক ও কর্নেল রশীদ।
পাকিস্তানের স্পিকার ছিলেন মুসলিম লীগের জাঁদরেল নেতা ও বিচারপতি বরিশালের আবদুল জব্বার খান। তার ছেলে রাশেদ খান মেনন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী। তার আপন বোন হলেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী সেলিমা রহমান। জব্বার খানের এক ছেলে প্রয়াত এনায়েতুল্লাহ খান ছিলেন জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী। আরেক ছেলে কবি ও সাবেক সচিব প্রয়াত আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন এরশাদ সরকারের কৃষিমন্ত্রী। সেলিমা রহমানের বোন জামাই হলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ্বাস। আবার শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে আবদুল জব্বার খানের রয়েছে আত্মীয়তা। আবদুল জব্বার খানের শাশুড়ি হলেন শেরেবাংলার আপন ফুফাতো বোন।
উপমহাদেশের বিখ্যাত রাজনীতিক আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তার ছেলে আবু নাসের খান ভাসানী ছিলেন এরশাদ সরকারের মন্ত্রী। মওলানা ভাসানীর মেয়ের জামাই চৌধুরী মোতাহের হোসেন ছিলেন জিয়াউর রহমান সরকারে বিএনপি দলীয় এমপি। এছাড়া, টাঙ্গাইলের খান পরিবারের সন্তান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রয়াত হাবিবুর রহমান খান। তার ছেলে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ। আজাদের চাচা হলেন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান খান শাহজাহান। লুৎফর রহমান আজাদের সম্পর্কে চাচাতো ভাই হলেন ঘাটাইলের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি আমানউল্লাহ খান। তার আরেক চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ও টাঙ্গাইল পৌর মেয়র মুক্তি। জামালপুরের বিখ্যাত খান পরিবারের সন্তান বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খান। তার চাচাতো ভাই হলেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা মঞ্জুরুল আহসান খান। মঞ্জুরুল আহসান খানের শ্যালক হলেন সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। নজরুল ইসলাম খানের সম্পর্কে ভাতিজা হলেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল। অন্য খান পরিবারের মধ্যে গোপালগঞ্জের খান পরিবারের সন্তান হলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। তার বড় ভাই আজিজ খান বিখ্যাত ব্যবসায়ী। ফারুক খানের চাচা প্রয়াত অ্যাডভোকেট সালাম খান খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ ছিলেন। ফারুক খানের স্ত্রীর বড় ভাই হলেন সেক্টর কমান্ডার ও বিএনপির সাবেক মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতীক। আরেক ভাই আতিকুল্লাহ খান মাসুদ গ্লোব শিল্প গ্রুপের মালিক ও দৈনিক জনকণ্ঠের প্রকাশক। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান। তার পিতা আতাউর রহমান খান ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন এমআর সিদ্দিকী। তিনি বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের ভায়রা। এম আর সিদ্দিকীর ছেলের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন সাইফুর রহমান। সে হিসেবে সাইফুর রহমান ও এম আর সিদ্দিকী একই সঙ্গে ভায়রা ও বেয়াই। আবার এম আর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই হলেন বিএনপি সরকারের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক স্পিকার প্রয়াত এলকে সিদ্দিকী। তার ছোট ভাই এওয়াইবি সিদ্দিকী ছিলেন সাবেক আইজিপি। আবার আওয়ামী লীগের এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসি ও এম আর সিদ্দিকী সম্পর্কে ভায়রা। বাংলাদেশের আরেক বিখ্যাত সিদ্দিকী পরিবার হচ্ছে টাঙ্গাইলের। মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এই এমপি বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি। তার বড় ভাই হলেন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তার স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী নিজেও একজন সাবেক এমপি। সিদ্দিকী পরিবারের আরও দুই সন্তান আজাদ সিদ্দিকী ও মুরাদ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়ে বর্তমানে কাদের সিদ্দিকীর রাজনৈতিক দলে সক্রিয়। গাজীপুরের বলিয়াদীর জমিদার পরিবারের সন্তান চৌধুরী লাবিব আহমেদ সিদ্দিকী। তার ছেলে চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী। তানভীর সিদ্দিকীর ছেলে চৌধুরী ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
অবিভক্ত বাংলা ও পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কিংবদন্তির জনদরদী রাজনীতিক শেরেবাংলা একে ফজলুল হক। তার ছেলে ফায়জুল হক ছিলেন জিয়া সরকারের বিএনপি দলীয় এমপি। পরে তিনি জাতীয় পার্টির টিকিটে এরশাদ সরকারের ও আওয়ামী লীগের টিকিটে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তার বড় ছেলে একে ফাইয়াজুল হক রাজু আওয়ামী লীগ নেতা। তবে তার মেয়ের জামাই আখতারুল আলম ফারুক ময়মনসিংহ জেলা বিএনপি নেতা। শেরেবাংলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা রয়েছে বরিশালের আবদুল জব্বার খানের।
বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত কেএম ওবায়দুর রহমান। তার মেয়ে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সভাপতি ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ। শামা ওবায়েদের স্বামীর আপন বড় ভাই হলেন সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শিক্ষাবিদ প্রফেসর মাজহারুল ইসলামের পুত্র চয়ন ইসলাম। আবার ওবায়দুর রহমানের স্ত্রী ড. শাহেদা ওবায়েদ গড়ে তুলেছেন ‘গড়বো বাংলাদেশ’ নামে একটি রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে ওবায়দুর রহমানের বড় ভাই খন্দকার হাবিবুর রহমান ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ। তার ছেলে জুয়েল বর্তমানে ঢাকা মহানগর যুবলীগ নেতা।
আত্মীয়তার যত বন্ধনে বিএনপি আওয়ামী লীগ- বাংলাদেশ প্রতিদিন
মাঠপর্যায়েও বিয়ের হিড়িক
রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেও আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধা আওয়ামী লীগ-বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের অনেক নেতা। সামাজিক সম্পর্কের পাশাপাশি উভয় দলের অনেক নেতার মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়িক সম্পর্কও। তারা প্রকাশ্যে বৈরী মনোভাব দেখান, তির্যক রাজনৈতিক বক্তব্য দেন বটে, কিন্তু আত্মিক কারণে সুখে-দুঃখে পরস্পরের পাশে দেখা যায় তাদের। জানা গেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনেও বিএনপির অনেক নেতা আত্মিক সম্বন্ধের কারণে হয়রানি থেকে রেহাই পান। অন্য দলের সঙ্গেও কম-বেশি সম্পর্ক রয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের। এদিকে মাঠপর্যায়েও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনে জড়াচ্ছেন বিএনপি নেতা-কর্র্মীরা। সর্বশেষ পাবনা পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট তসলিম হাসান সুমনের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান যিনি ‘শিমুল বিশ্বাস’ নামে সমধিক পরিচিত। তার বড় ছেলে তানভীর রহমান বিশ্বাস ওরফে মিথুন বিশ্বাসের সঙ্গে তসলিম হাসান সুমনের মেয়ে তাহ্জিদ হাসান তরণীর বিয়ে হয়েছে। এ উপলক্ষে গত শনিবার পাবনা আহেদ আলী বিশ্বাস কলেজ মাঠে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বউভাতের ওই অনুষ্ঠানটি হয়ে যায় সর্বদলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর সম্প্রীতির মিলনমেলা। অনুষ্ঠানে প্রায় ২৫ হাজার লোক সমাগম হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই-ইলাহী সম্পর্কে ভায়েরা। বেশ কিছুদিন আগে ব্যারিস্টার মওদুদ যখন অসুস্থ হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তখন তাকে নিয়মিত সপরিবারে দেখতে যেতেন তৌফিক ই-ইলাহী। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সম্পর্কে বেয়াই। সালমান এফ রহমানের ছেলের সঙ্গে মোর্শেদ খানের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আবার বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সঙ্গে সালমান এফ রহমানের চাচা-ভাতিজার সম্পর্ক। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সম্পর্কে বেয়াই। শেখ সেলিমের ছেলের সঙ্গে টুকুর মেয়ের বিয়ে হয়েছে। অন্যদিকে, শেখ সেলিম সম্পর্কে মামা হন বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থর। পার্থর শ্বশুর হলেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হেলাল এমপি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কামাল ইবনে ইউসুফ ও আওয়ামী লীগ নেতা সুবিদ আলী ভূঁইয়া এমপি সম্পর্কে বেয়াই। সুবিদ আলী ভূঁইয়ার ছেলের সঙ্গে কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন কামাল ইবনে ইউসুফের আপন ভাগ্নে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আওয়াল মিন্টুও সম্পর্কে বেয়াই। মিন্টুর ছেলের সঙ্গে গওহর রিজভীর মেয়ের বিয়ে হয়েছে। একইভাবে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার এস্কান্দারের সঙ্গেও মিন্টুর সম্পর্ক রয়েছে। মিন্টুর ছেলের সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার এস্কান্দারের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম এম আর সিদ্দিকীর ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম সাইফুর রহমানের মেয়ের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবিরের সঙ্গে বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সম্পর্ক বেয়াইয়ের। মান্নান ভূঁইয়ার ছেলের সঙ্গে শেখ কবিরের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জেলে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী সম্পর্কে মামাতো ফুফাতো ভাই। আবার আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এম আশিকুর রহমানের সঙ্গেও সাকা চৌধুরীর আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। সালমান এফ রহমান ও সাকা চৌধুরী সম্পর্কে খালাতো ভাই। রাউজানে আওয়ামী লীগের এমপি ফজলে করীম সাকা চৌধুরীর চাচাতো ভাই।
এ ছাড়া সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গেও সাকা চৌধুরীর সম্পর্ক চাচা-ভাতিজার। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ভাই মরহুম আবদুল্লাহ আল হারুন ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। তার আরেক ভাই আবদুল্লাহ আল মামুন জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সিপিবির উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান সম্পর্কে চাচাতো ভাই। আবার ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের বড় ভাই। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাই মরহুম সাইদ এস্কান্দার এবং আওয়ামী লীগ নেতা হোটেল রাজমনি ঈশা খাঁর মালিক মনি সম্পর্কে বেয়াই। মনির মেয়ের সঙ্গে সাইদ এস্কান্দারের ছেলের বিয়ে হয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের আলোচিত লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসউদ উদ্দিন চৌধুরী ভায়রা হন সাইদ এস্কান্দারের। জানা যায়, জেনারেল মাসউদ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহভাজন। যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বড় ভাই সৈয়দ দুলাল বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের নাট্য ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক। আরেক ভাই মরহুম সৈয়দ হেলাল জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। জানা যায়, এলজিআরডিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে বিএনপি নেতা আশরাফ উদ্দিন নিজানেরও আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম বসাত উল্লাহ চৌধুরীর মেয়ের জামাই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর চাচা শ্বশুর বলেও জানা গেছে।
আত্মীয়তার বন্ধনে রাজনীতি-কাফি কামাল
কাফি কামাল:রাজনীতিতে তারা বিপরীত আদর্শে বিশ্বাসী। জাতির ক্রান্তিকাল ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তাদের অবস্থান পরস্পরবিরোধী। কিন্তু সামাজিকভাবে তারা জড়িয়ে আছেন আত্মীয়তার বন্ধনে। রাজনীতিকদের আত্মীয়তার এ বন্ধন নতুন নয়। বৃটিশ আমল থেকেই এ সম্পর্ক বহমান। ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে বিখ্যাত কিছু রাজনৈতিক পরিবারের সম্পর্ক শেকড়ের মতো ছড়ানো। রাজনীতির ইতিহাসে এসব পরিবারের সদস্যরা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু থাকেন সবসময়। জাতীয় রাজনীতির অনেকখানিই এখন আত্মীয় রাজনীতিকদের নিয়ন্ত্রণে।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তারাই নিয়ন্ত্রণ করেন বাংলাদেশ। তাদের হাতেই হাতবদল হয় দেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রক্ষমতা। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পরিবার, বগুড়ার জিয়া পরিবার, রংপুরের এরশাদ পরিবার, চট্টগ্রাম ও সিলেটের কয়েকটি চৌধুরী পরিবার, বরিশালের খান ও সেরনিয়াবাত পরিবার, চট্টগ্রামের খান ও সিদ্দিকী পরিবার, ফরিদপুরের চৌধুরী ও কবির পরিবার, রাজশাহীর জামান পরিবার, টাঙ্গাইলের সিদ্দিকী, খান ও পন্নী পরিবার, পাবনার মির্জা পরিবার, সিরাজগঞ্জের মাহমুদ পরিবার ও নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারই এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। সাম্প্রতিক রাজনীতিতে বিপরীত আদর্শের প্রতি অসহিষ্ণুতা বাড়লেও তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন আত্মীয়তার বন্ধন।
মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি ও নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে ওঠা শেখ মুজিবের পারিবারিক আত্মীয়তা ছিল গোটা দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে। পরে তা বিস্তৃত হয়েছে গোটা বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা। একমাত্র মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তার স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতু বর্তমান সরকারের শ্রম ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ফরিদপুর-৩ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে।
ফলে শেখ হাসিনা ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ সম্পর্কে বেয়াই-বেয়াইন। এ সম্পর্কের মাধ্যমে শেখ ও খন্দকার পরিবারের মধ্যে পুরানো সম্পর্ক পেয়েছে নতুন মাত্রা। পুতুলের দাদা শ্বশুর খন্দকার নুরুল হোসেন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ফুফাতো ভাই। খন্দকার মোশাররফের ছোট ভাই খন্দকার মোহতাশিম হোসেন হলেন ফরিদপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান। শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ননদের স্বামী হলেন সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগদলীয় এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না।
আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. ওয়াজেদ মিয়া। ওয়াজেদ মিয়ার বড় বোনের নাতনি হলেন আওয়ামী লীগ সরকারের হুইপ গাইবান্ধা-২ আসনের এমপি মাহবুব আরা গিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে হলেন শেখ রেহানা। তার মেয়ে হলেন টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। যিনি বৃটেনের ৫৬তম জাতীয় নির্বাচনে হ্যামপস্টেড এবং কিলবার্ন আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন লেবারদলীয় এমপি। বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক আত্মীয় হলেন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী ও জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।
আইভী রহমান হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার খালা শাশুড়ি। সে হিসেবে জিল্লুর রহমান হলেন শেখ হাসিনার তালই। আবার জিল্লুর রহমান ও আইভী রহমানের সন্তান হলেন ভৈরব-কুলিয়ারচর আসনের আওয়ামী লীগদলীয় এমপি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
বঙ্গবন্ধুর বোন আছিয়া বেগমের দুই ছেলে হলেন শেখ ফজলুল হক মণি ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সম্পর্কে তারা শেখ হাসিনার আপন ফুফাতো ভাই। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকদের হাতে শহীদ হন। তার ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস ঢাকা-১০ আসন-এর এমপি। বঙ্গবন্ধুর আরেক ভাগনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম হলেন সাবেক মন্ত্রী ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের এমপি।
শেখ সেলিমের বোনের স্বামী হলেন বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা ও এরশাদ সরকারের সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জুর। যিনি পরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে যোগ দেন। মঞ্জুর সম্পর্কে শেখ হাসিনার ফুফাতো বোনের স্বামী। আবার মঞ্জুর দুই ছেলে বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ ও ড. আশিকুর রহমান শান্ত। বর্তমানে তারা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয়। শেখ হাসিনা সম্পর্কে তাদের খালা। আবার শেখ সেলিমের ছেলে বিয়ে করেছেন বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মেয়েকে।
ওয়ান ইলেভেনের সময় তাদের পরিচয়পর্ব আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পারিবারিক আয়োজনে পরিণয়ে পরিণত হয়। অবশ্যই ইকবাল হাসান টুকু ছাত্র জীবনে বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ্য পুত্র শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহপাঠি ছিলেন। শেখ সেলিমের আরেক ছেলে বিয়ে করেছেন আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের মেয়েকে। এই মুসা বিন শমসেরের ছেলে ববি হাজ্জাজ হলেন এরশাদের সাবেক মুখপাত্র ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা।
বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসের। তার ছেলে হলেন বাগেরহাট-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি শেখ হেলাল। তার মেয়ের জামাই হলেন ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। শেখ সেলিম ব্যারিস্টার পার্থের মামা ও শেখ হেলাল পার্থের শ্বশুর। আবার শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ মণি ও শেখ সেলিমের আরেক ছোট বোনের জামাই হলেন যুবলীগের বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। আর শেখ সেলিমের ভায়রা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী জামালপুর-১ আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ।
বঙ্গবন্ধুর বড় বোনের জামাই হলেন আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আবদুর রব সেরনিয়াবাত। সেরনিয়াবাতের ছেলে হলেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ বরিশাল-১ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। শেখ হাসিনা ও হাসানাত আবদুল্লাহ পরস্পরের মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোন। আবার হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট বোনের দেবর হলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি মাহবুবুল আলম হানিফ। তিনি সম্পর্কে শেখ হাসিনার বেয়াই।
আবার হাসানাত আবদুল্লাহর সম্পর্কে চাচাতো ভাই হলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। শেখ হাসিনার আরেক ফুফাতো ভাই হলেন মাদারীপুরের সাবেক এমপি প্রয়াত ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী। ইলিয়াস চৌধুরীর বড় ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী) আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক হুইপ ও মাদারীপুর-১ আসনের এমপি। ইলিয়াস চৌধুরীর ছোট ছেলে মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী) ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র এমপি। সে হিসেবে লিটন ও নিক্সন চৌধুরী সম্পর্কে শেখ হাসিনার ভাতিজা।
শেখ হাসিনার সম্পর্কে আরেক ফুফাতো ভাই হলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাদারীপুর-৩ আসনের এমপি বাহাউদ্দিন নাছিম। শেখ হাসিনার চাচা সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লি. এর চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের বেয়াই হলেন বিএনপির দীর্ঘ সময়ের মহাসচিব এবং ওয়ান ইলেভেনের সংস্কারপন্থি শীর্ষ নেতা প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। মান্নান ভূঁইয়ার ছেলের সঙ্গে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়েছে শেখ কবিরের মেয়ের। সে হিসেবে শেখ হাসিনার সম্পর্কে তালই হলেন মান্নান ভূঁইয়া।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে ফরিদপুরের বিখ্যাত লাল মিয়া-মোহন মিয়া পরিবারের। ফরিদপুরের আবাদ আল্লা জহিরউদ্দিন লাল মিয়ার পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধন ছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারের। বঙ্গবন্ধুর ফুফাতো বোন মোসাম্মাৎ বেগমের মেয়ে বিয়ে করেছেন লাল মিয়ার বড় ছেলে চৌধুরী মমতাজ হোসেন রাজা মিয়া। বঙ্গবন্ধুর ফুফাতো ভগ্নিপতি গোলাম গফুর চৌধুরী ছিলেন ফরিদপুরের খ্যাতিমান আইনজীবী।
সেই সঙ্গে শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের সঙ্গে দ্বিমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে এ লাল মিয়া-মোহন মিয়া পরিবারের। পুতুলের শ্বশুর খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আপন বোন বিয়ে করেছেন পাকিস্তান আমলের ডাকসাইটে নেতা মন্ত্রী মরহুম ইউসুফ আলী চৌধুরী মোহন মিয়ার ছেলে।
এছাড়া শেখ হাসিনার সম্পর্কে ফুফা হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ঝালকাঠি-২ আসনের এমপি আমির হোসেন আমু। তার স্ত্রী প্রয়াত ফিরোজা হোসেন সম্পর্কে শেখ হাসিনার ফুফু। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব প্রয়াত শেখ শহীদুল ইসলাম আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার খালাতো ভাই। শেখ শহীদুল ইসলাম ছিলেন এরশাদ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী। শেখ হাসিনার দূরসম্পর্কের ফুফা হলেন লে. জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান বীরবিক্রম।