বাংলাদেশে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে গ্রেফতারের খণ্ড-চিত্র ও অনুভূতিনামা

(ব্লগটি চিন্তিত সৈকত ও আমার যৌথভাবে প্রয়াস।)

হেফাজতের সমাবেশে শান্তি প্রিয় ধার্মিকদের একটি নিষ্পাপ পোস্টার।

হেফাজতের সমাবেশে শান্তি প্রিয় ধার্মিকদের একটি নিষ্পাপ পোস্টার।
হেফাজত ইসলামের সমাবেশে শান্তি প্রিয় ধার্মিকদের একটি নিষ্পাপ পোস্টার।

বর্তমান পৃথিবীতে ধর্মীয় কটূক্তি ও অনুভূতির ঘটনা দেখলে মনে হবে পৃথিবীতে ধর্ম আছে শুধু ইসলাম। যেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানেও তেমন তাদের কোমল অনুভূতিটি আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে তেমনি যেখানে তারা সংখ্যালঘু সেখানে তাদের কোমল অনুভূতিটি ধ্বংসের মুখে পড়ছে। ফলে উন্নত রাষ্ট্রগুলোও প্রতিনিয়ত অর্থ ব্যয় করে মাকড়সার বাসায় ন্যায় অনুভূতিটি প্রতিনিয়ত হেফাজত করছে। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে-কানাডায় নাগরিকত্ব নেওয়ার সময় মুখ দেখানো বাধ্যতামূলক। লক্ষ্য করুন শুধু নাগরিকত্ব নেওয়ার সময় মুখ দেখাতে হবে কিন্তু এই সামান্য রাষ্ট্রীয় আইন তারা মানতে নারাজ। তারা এর বিরুদ্ধে মামলা করল। এবং কয়েক লক্ষ্য টাকা সরকার ব্যয় করছে এই মামলা পরিচালনার জন্যে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ জন নারী নাগরিকত্ব নেওয়ার সময় মুখ দেখাতে অমত হয়েছেন। মুসলিম দেশ চাদসহ মোট তিনটি মুসলিম দেশে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মূল কারণ নিরাপত্তা। আত্মঘাতী বোমা হামলা রোধ করার জন্যে দেশগুলো এই পদক্ষেপ নেয়। মুসলিম দেশ যখন নিষিদ্ধ করল তখন কোন প্রতিবাদ হয়নি কিন্তু কোন খ্রিস্টান কিংবা অমুসলিম দেশ যদি নিরাপত্তার খাতিরে মুখ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয় সেখানে বাক-স্বাধীনতা থেকে শুরু করে ব্যক্তিস্বাধীনতার তাণ্ডব শুরু হয়। কিন্তু আমরা সবাই জানি মুসলিম দেশগুলো’তে কী পরিমাণ বাক-স্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া হয়। পৃথিবীতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সংখ্যা হচ্ছে ৪৯টি। প্রতিনিয়ত মুসলিম-দেশগুলো’তে বিভিন্ন অভিযোগে অমুসলিমদের রাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে। সৌদি আরবের মতন দেশে যেখানে কোন অমুসলিমদের উপাসনালয় নেই সেখানে স্বাভাবিকভাবে সৌদি প্রেমী ইমানি জনতা নিজের রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অবস্থান সহ্য করতে নারাজ। মুসলিম বিশ্বের উগ্রতা শুধু দেশের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয় বরং স্থান-কাল পাত্র ভেদে সব জায়গায় উগ্রতা সমানভাবে কাজ করে। এমনকি ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে রিফিউজি ক্যাম্পেও তারা দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধিয়ে দেয়। মুসলিমদের এই চারিত্রিক ও সামাজিক অসহিঞ্চুতার কারণ; প্রকৃত শিক্ষার অভাব, ধর্মীয় সংস্কারের অভাব, জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়া, নিজের ধর্মীয় গণ্ডির বাহিরে অন্য কিছু ভাবার অক্ষমতা, ১৫’শ বছরের কুসংস্কার ও ধর্মীয় উগ্রতাকে ইমানি দায়িত্ব হিসেবে মেনে চলাসহ অসংখ্য কারণ বিদ্যমান।

২০১৩ সালে শাহবাগ সৃষ্টি হওয়ার পর বাংলাদেশে ব্লগার ইস্যুকে কেন্দ্র করে হেফাজতের উত্থানের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের লেখক, ব্লগার সমাজ যে সংকটে পড়েছে সেই সংকট দিনদিন আরও আঁকড়ে ধরছে আমাদের। বিষয়টি ব্লগার ইস্যু কিংবা নাস্তিক ইস্যু হলেও এই সংকটে প্রকৃত অর্থে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকার যেহেতু বিতর্কিতভাবে ক্ষমতায় পুনরায় ক্ষমতা-গ্রহণ করেছে সেহেতু তারা প্রতিনিয়ত মৌলবাদীদের স্বার্থের সাথে আপোষ করে যাচ্ছে। টিভি মিডিয়ায় ধর্ম শেখানোর নামে কাউকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও সরকার এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় নি। কয়েকটা উদাহরণ উল্লেখ করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। যেমন-

# ১৯ এপ্রিল ২০১৪ সালে আল্লামা শফি ঘোষণা করিলেন- নাস্তিকদের কতল করা ওয়াজিব হইয়া গেছে! হত্যার ঘোষণা ও উস্কানি দেওয়ার পরও সরকার কোন ব্যবস্থা নেয় নি। ব্লগার হত্যার পেছনে শফির এই ঘোষণা ইন্ধন জুগিয়েছে। (দৈনিক প্রথম আলো)

# লতিফ সিদ্দিকীকে যেখানে যাওয়া যাবে সেখানেই কতল- ঢাকা মহানগর হেফাজতের সদস্য সচিব জুনায়েদ আল হাবীব। সাল ২০১৫। কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি। (সূত্র-পূর্ব-পশ্চিম ডট কম)

# ২০১২ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক সভায় দিগন্ত ও পিস টিভি’র উপস্থাপক কাজী ইব্রাহীম প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিল ফারুকীকে মেরে ফেলার। অন্য কোন রাষ্ট্রে এমন ঘোষণা দেওয়া মাত্র পাছার ছাল তুলে ফেলত। কিন্তু এসব ইসলামিক নেতাদের সবাই খাতির করে চলে। শুক্রবার আসলে ধর্ম শেখানোর নামে ওহাবীমতবাদ কিংবা সালাফি মতবাদ প্রচারই এদের মূল উদ্দেশ্য।

# মাওলানা ফারুকীকে হত্যার ঠিক দুইদিন আগে এটিএন বাংলা স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এনটিভি’র উপস্থাপক তারেক মনোয়ার বলেছিল ফারুকীর মতো শিরকী ও বিদআতিকে পুড়িয়ে মারা উচিত। তার বক্তব্যে সায় দিয়েছিল আর টিভি ও রেডিও টুডে’র উপস্থাপক খালিদ সাইফুল্লাহ বক্সী ও বাংলা ভিশনের মোক্তার আহমেদ।

সমাবেশে জনসম্মুখে নাস্তিক হত্যা ওয়াজিব কিংবা টিভি অনুষ্ঠানে মাওলানা ফারুকীকে পুড়িয়ে মারার মতন বক্তব্য দিলেও সরকার এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়া সারা বছর অমুসলিমদের মন্দিরে হামলা প্রতিমা ভাঙচুর করা হলেও পত্রিকায় পাতায় এসব উগ্র মুসলিম চরিত্রটি আড়াল করে লিখা হয়-দুর্বৃত্ত কিংবা জামাত-শিবির পরিচয়। অথচ ভিন্ন রাষ্ট্রে এমন কোন ঘটনা হলে সেখানে বলা হয় উগ্রবাদী হিন্দু কিংবা উগ্রবাদী খ্রিস্টানদের হামলা। এখানেই আমাদের মিডিয়ার সাম্প্রদায়িকতা। তারা প্রতিনিয়ত উগ্রবাদী মুসলিম পরিচয়টি আড়াল করে রাখতে চায়। বাংলাদেশের মতন সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে একমাত্র অনুভূতি কথা বলার ও অনুভূতি আহত হওয়ার অধিকার শুধু মুসলিমদের আছে। শিশু ধর্ষক থেকে শুরু করে ঘুষখোর অফিসারটির অনুভূতি খুবই নাজুক। অনুভূতির কথা শোনামাত্র তারা অনুভূতি হেফাজত কিংবা মৃত নবীর ইজ্জত রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে অবশ্য মৃত নবীর ইজ্জত রক্ষা হয় কিনা জানা নেই তবে মুসলিমদের উগ্রতা পুরো পৃথিবীর সামনে প্রকাশ পায়।

কটূক্তির অভিযোগে হামলার ইতিহাস একবিংশ শতাব্দীর নতুন কোন বিষয় নয়। অতীতকাল থেকেই অনুভূতিতে আঘাত লাগার সাতে সাথে হামলার ঘটনা ঘটে আসছে। আরবের তিন কবি হত্যার ইতিহাস হাদিসেই আছে আমরা বরং বাগদাদের ঘটনায় যাই। ১২৮০ সালে বাগদাদের কোন এক শুক্রবার। ইহুদি দার্শনিক ও চিকিৎসক ইবনে কামমুনা’কে হত্যা করার জন্য তাঁর বাড়িতে অসংখ্য বিশ্বাসী হামলা করে বসে। অপরাধ একটাই তিনি একটি চমৎকার বই লিখেছেন। বইটির নাম-Examination of the three faiths। বইটিতে ইহুদীবাদ,ক্রিশ্চানত্ব এবং ইসলাম নিয়ে আলোচনা করা হয়।এই বই লেখার জন্যে মুসলিম সম্প্রদায় তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার বাড়ি হামলা করে। তবে তিনি আগেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রাণে বেঁচে যান। এতেও জনতা শান্ত হয় নি। তারা আমির’কে ডেকে আনত। আমির এসে জনতাকে প্রথমে শান্ত করার চেষ্টা করেন কিন্তু জনতা শান্ত না হয়ে উল্টো আমির’কে ইবনে কামমুনা’র পক্ষে থাকার ও তাকে রক্ষা করার জন্য অভিযুক্ত করে। ফলে আমির বাধ্য হয়ে আদেশ জারী করেন যে পরদিন (শনিবার) ইবন কামমুনাকে শহর প্রাচীরের বাইরে জ্বলন্ত আগুনে পোড়ানো হবে। সমস্ত বাগদাদে এ খবর প্রচারিত হল। জনতাও শান্ত হয়ে বাড়ী ফিরল। অন্যদিকে ইবনে কামমুনা একটি চামড়ার বাক্সে করে ‘হিল’এ তার ছেলের কাছে পলায়ন করলেন। এবং মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন।

শুধু মৌলবাদীরাই নয়,সাধারণ মুসলিম জনতাও ইসলামের প্রতি সামান্য বিরূপ সমালোচনাকেও কিভাবে আক্রমণাত্মক ভাবে গ্রহণ করে। দুটো ছোট্ট উদাহরণ, আমেরিকান অর্থনীতিবিদ জন কেনেথ গ্যালব্রেরেথ যখন ভারতে রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন (১৯৬১-৬৩) প্রচার হয় যে তার বিড়ালের নাম “আহমেদ”,যা কিনা আবার পয়গম্বর মুহম্মদের আরেক নামও বটে।তখন তিনি মারাত্মক প্রতিবাদের মুখে পড়েন। যখন ‘ডেকান হেরাল্ড’ পত্রিকা একটি ছোট গল্প ছাপে যার শিরোনাম ছিল “বোকা মোহাম্মদ”, মুসলমানেরা পত্রিকা অফিসটি পুড়িয়ে ফেলে। গল্পটিতে নবীর কোনও উল্লেখও ছিল না, শুধুমাত্র গল্পের নায়কের নাম ছিল মুহাম্মদ। এছাড়া সাম্প্রতিক কালে দশজন ভারতীয়কে আরব আমিরাতে জেল দেওয়া হয় ,কারণ তারা একটি মালয়ালম নাটক মঞ্চস্থ করছিলো,যার নাম ছিল “মড়া খাওয়া পিঁপড়েগুলো”,যার বিরুদ্ধে অভিযোগ হল এটিতে মুহম্মদের বিরুদ্ধে ইঙ্গিত ছিল।

এছাড়াও সালমান রুশদির কল্লা চাওয়া ফতোয়া। স্যাটানিক ভার্সেস বইটির অনুবাদকদের হত্যা, রুশদি যে ট্রেনে যাচ্ছিলেন সেই ট্রেনে হামলা, ‘নবী মুহাম্মদের ২৩’ বইয়ের লেখক আলি দস্তি সহ অসংখ্য লেখককে হামলা, হত্যার সংস্কৃতি আস্তিক মুসলিম সমাজে আছে। ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কারণে প্রথম হত্যাটি হয় ‘রঙ্গিলা রসূল’ নামে একটি বইকে কেন্দ্র করে। খুনি কে তা নিয়ে মতভেদ আছে কেউ কেউ বলেন-বেশ্যা পড়ার কোন এক দালাল লেখককে হত্যা করেন। “রঙ্গিলা রসুল” লেখার বিপরীতে হিন্দুদের কৃষ্ণকে নিয়ে দুইটি বই রচনা করা হয়। কিন্তু তাতে লেখক সালে আহত কিংবা নিহত হওয়ার মতন ঘটনা ঘটেনি। পাকিস্তানে কিছুদিন পরপর সিজোফ্রেনিয়া রোগীর মতন কোরান অবমাননার গুজব ছড়িয়ে ভিন্ন সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা ও মানুষকে পুড়িয়ে মামার মতন ঘটনা ঘটেছে। অদ্ভুত বিষয় হল ইউটিউবে ‘ইনোসেন্স অব ইসলাম’ নামক তথাকথিত সিনেমার নাম শুনে দাঙ্গা-হাঙ্গা করে ২৫ জন নিহত হয়। বাংলাদেশেও কিছুদিন ধরে কোরান অবমাননার ধোয়া তুলে হামলার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেমন- রামপুরায় কালী মন্দিরের সেবক কোরান পুড়িয়ে এমন গুজব সৃষ্টি করে মন্দির হামলার চেষ্টা, চট্টগ্রামে কোরানের পাতা ছিঁড়ে হিন্দু পাড়ায় ছড়িয়ে দিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামার চেষ্টায় দুই শিবির কর্মীকে গ্রেফতারসহ ইত্যাদি। ২০১২ সালে প্রথম আলো’তে রিপোর্ট হয় মাতালকে ৫০ টাকা দিয়ে মসজিদে ঢিল ছুড়ে হিন্দুরা মসজিদ আক্রমণ করেছে এমন গুজব ছড়িয়ে হিন্দুদের ব্যবসা বাণিজ্যে হামলা ও লুটের ঘটনা সৃষ্টি করা হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে সবকিছুর মূল উদ্দেশ্যে জমি সম্পদ দখল ও এই দেশকে ১০০% মুসলিমদের দেশ তৈরি করা। এবার দেখা যাক বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে কটূক্তির কথা বলে বিভিন্ন গ্রেফতার গ্রেফতারের চিত্র।

বিভিন্ন সময় কটূক্তির বিষয় দেখলেও কোরানের আয়াত পরিবর্তনে আদালতে রিট করার বিষয়টি বাংলাদেশে প্রথম করেন বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্ট দেবনারায়ণ মহেশ্বর। ২০১০ সালে তিনিই প্রথম কোরআন শরিফের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। রিট আবেদনে তিনি দাবি করেন, হজরত ইব্রাহীম তাঁর বড় ছেলে ইসমাইলকে কোরবানির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন বলে যে আয়াত পবিত্র কোরআন শরিফে রয়েছে, তা সঠিক নয়। তিনি দাবি করেন, হজরত ইব্রাহীম তাঁর ছোট ছেলে হজরত ইসহাককে কোরবানি করতে নিয়ে যান। এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা ও কোরআনের আয়াত শুদ্ধ করার জন্য দেবনারায়ণ মহেশ্বর আদালতের কাছে প্রার্থনা করেন।“ কোরান আয়াত পরিবর্তনের মত রিটের ঘটনার কয়েকবছর পর অন্য আরেকটি কারণে ধর্মে আঘাত দেওয়ায় অভিযোগে তিনি গণধোলাইের শিকার হয়েছিলেন, এবং তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। এখন এক নজরে দেখবো বিগত কয়েক বছরের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে কটূক্তির অভিযোগে মামলা হামলার বিষয়গুলি। এগুলো ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংরক্ষণ করা হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনার বাহিরে ঘটে যায় অসংখ্য ঘটনা। তাই আমরা বলতে পারি এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া খণ্ড-চিত্র মাত্র।

১# ২০১১ সালে সেপ্টেম্বরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের আলমডাঙ্গায় আব্দুল আজিজ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি মুসলমান ঘরে জন্ম নিয়ে ইঞ্জিলকেই ধর্মীয় গ্রন্থ হিসাবে মানে এবং নবীর পত্নী ও উপপত্নীর সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন।

২# নামাজ না পড়ে দিন দু ঘণ্টা করে ইংরেজি পড়তে বলায় ২০১৩ সালের মার্চে গোপালগঞ্জে কোটালিপাড়ার একটি স্কুলে দেবব্রত রায় নামের এক শিক্ষক গ্রেপ্তার করা হয়।# ২০১৪ সালের জুনে ইন্দ্রজিৎ পাণ্ডে নামে স্নাতকোত্তরের এক ছাত্রকে কটূক্তির কারণ দেখিয়ে গ্রেফতার করা হয়। রাতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় ইন্দ্রজিৎ নিজের মত প্রকাশ করতে গিয়ে বন্ধুদের সাথে বাকবিতণ্ডায় হলে, পরের দিন বন্ধুরা তাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়।

৩# ২০১৪ সালে কমলগঞ্জে কটূক্তির অভিযোগে প্রসেনঞ্জিৎ চন্দ্র শীল নামে এক শিক্ষকের উপর মামলা-হামলার অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে তিনিও গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন।

৪# সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুশান্ত কুমার ঢালী, তিনিও পুলিশে হাতে কটূক্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার আছেন। ক্লাস চলাকালে তিনি বলেছিলেন “এক জায়গায় একজন হিন্দু সাধু, একজন মুসলমানদের মৌলভী ও একজন বিদেশী ভদ্রলোক ছিলেন। এদের মধ্যে প্রথমে হিন্দু সাধু বলে যে কৃষ্ণচূড়া নামটি আমাদের কৃষ্ণের নামের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে। তখন মৌলভী বলে যে, এটি মোহাম্মদ চূড়া হলে ভাল হতো। এরপর হিন্দু সাধু একইভাবে কৃষ্ণনগর এবং গোপালগঞ্জ এর কথা উল্লেখ করলে মৌলভী বলল এই জায়গার নাম মোহাম্মদনগর এবং মোহাম্মদগঞ্জ হলে ভাল হতো। অত:পর সেখানে একটি রামছাগল আসার পর বিদেশী ভদ্রলোকটিও একই ভঙ্গিতে বলল, রামছাগলের পরিবর্তে মোহাম্মদ ছাগলও রাখা যায়।”

৫# সিলেটে কটূক্তি নিয়ে অনেক ঘটনায় অনেক, যেমন- মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের শিক্ষক আব্দুর রউফ খান কবি কাজি নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী কবিতার সারাংশ বুঝাতে গিয়ে ইসলাম ধর্মের কিছু বিষয় নিয়ে ব্যাঙ্গাত্বক মন্তব্য করায় তার বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগ স্কুল ছাড়া করা হয়।

৬# ২০১৩ সালে মুক্তমনা ফেইসবুক পেইজে লাইক দেওয়ায় বিজয় চন্দ্র ও পার্থ সারথি দাস পাপ্পু নামে দুজনকে গ্রেপ্তার ঘটনাটিও বহুল আলোচিত হয়।

৭# ২০১৩ সালে ১ এপ্রিল ৩ জন ব্লগারসহ এপ্রিল মাসে মোট ৪ জন ব্লগারকে গ্রেফতার করা হয়।

৮# ২০১৫ ফেব্রুয়ারিতে মাইকেল হাসান নামের উপর এক ব্যক্তির উপর মামলা ও ফাঁসি চেয়ে আন্দোলন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় ‘মাইকেল হাসান ফ্রম ইসলাম খ্রিস্টিয়ানারি’ শিরোনামে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করে, যার মাঝে ইসলাম সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য ছিল।এছাড়া সুনামগঞ্জে অজিত কুমার দাস এক ব্যক্তিকেও কটূক্তির অভিযোগে নাজেহাল হতে হয়েছে।

৯# ২০১৪ এর জুলাই মাসে ফেসবুকের স্ট্যাটাস থেকে সিলেটের হবিগঞ্জে কৃতান্ত দাস নামের আরও এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ঘটনা হয়। পুলিশ কৃতান্তকে গ্রেপ্তার করতে গেলে স্থানীয় জনতা কৃতান্তকে পুলিশের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গণধোলাই দিতে চাইলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ ৩৭ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে এবং কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়।

১০# ৩০শে মার্চ ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে ফেসবুকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে রায়হান রাহী আর উল্লাস দাসের ওপর শিবিরের লোকজন আক্রমণ করে (ফারাবির প্ররোচনাতে) এবং পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

১১# টাঙ্গাইলে গোপালপুরে নিখিল জোয়ারদার নামেও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগে ওঠে। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের বিক্রমপুর আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইংরেজি প্রভাষক নির্মল কুমার রায়ের বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগে মামলা হয়। কুমিল্লার লাকসাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক কৃষ্ণ চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগ উঠে ২০১২ সালে।

১২# ২০১২ সালে কটূক্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য হিন্দু বাড়িঘরে ভাঙচুর হয়। পরবর্তীতে শিক্ষিকা মিতা রানী বালাকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি থেকে তুলে এনে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পীর ব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচন নিয়ে লেখা আবুল মনসুর আহমদের লেখা হুজুর কেবলা গল্পটি মঞ্চস্থ করায় এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এমনকি নাটকে অংশ নেওয়ায় ছাত্রদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। ভাঙচুরের পরিধি এতই বড় ছিল এই ঘটনায় দু’ হাজার লোককে আসামি শ্রেণীভুক্ত করে মামলা করা হয়েছিল। (সূত্র-দৈনিক যায়যায়দিন)

১৩# কটূক্তির অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া দেবাশীষ দয়াময় নামের এক শিক্ষক পুলিশের হাত গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

১৪# মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের বিক্রমপুর আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক নির্মল কুমার রায়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

১৫# ঝিনাইদহে গড়াগঞ্জের মিয়া আলম ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক শিশির ফিরোজের বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগে মামলা হামলা ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। শিক্ষক শিশির ফিরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ক্লাস চলাকালে ইনোসেন্স অব মুসলিম ছবিটির প্রশংসা করেছিলেন।

১৬# মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রদীপ কুমার দাস নামে এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কটূক্তির কারণে।

১৭# জামালপুরে সুপ্রিয় দে খাঁ নামের আরও শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগে বহিষ্কারের ঘটনা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠদানের সময় তিনি বলেছিলেন ‘ভূমিকম্প গজব টজব কিছু না। ভূমিকম্প হতেই পারে। আল্লাহ, ঈশ্বর ও ভগবান বলতে কিছু নেই।“

১৮# গোবিন্দপুর গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শ্রীকান্ত দাশ,আপত্তিকর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের অভিযোগেও শ্রীকান্ত দাশকে নিয়েও লঙ্কা কাণ্ড ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে ৩৪ রাউন্ড-বুলেট ছুড়তে হয়। যাতে আহত হয় দশ জন।

১৮# বরিশালের বাকেরগঞ্জে মৃদুল নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগে মামলার দেখা মিলে।

১৯# নরসিংদী জেলা মনোহরদী উপজেলাতেও ফেসবুক কেন্দ্র করে হৃদয় চন্দ্র সাহা এবং সুকান্ত চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগ উঠে। তাদের মধ্যে হৃদয় চন্দ্র সাহাকে জেলে পাঠানো হলেও পালিয়ে যায় সুকান্ত চন্দ্র সাহা।

২০# ২০১৫ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় বরিশালে বিএম কলেজে এক শিক্ষার্থীকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে তার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও তার কুশপুত্তলিকা দাহ করার ঘটনা হয়।

২১# বাকসীতা রামপুর উদ্ভব চন্দ্র দাস ও ছিনিবাস চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছিল।

২২# ২০১৫ সালের আরেকটি ঘটনায় দেখা যায়, ইসলাম ধর্মের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করায়নিখিল রঞ্জন রায় (প্রিন্স) নামে এক ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল।

২৩# এছাড়াও কটূক্তির অভিযোগে ফারমগেইট এলাকায় এলাকায় বাসে করে করে যাওয়ার সময় এক ব্যক্তি গণধোলাই শিকার হয়েছিলেন।

২৪# নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের লাইব্রেরিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্তকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে হাতে তুলে হয়।

২৫# কটূক্তির অভিযোগে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. এ কে এম নুরুন্নবী লাইজু’র উপরেও মামলা হামলা হয়। অধ্যাপক লাইজুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি বলেছিলেন ক্লাস চলাকালে বলেছিলেন “নবী পালক পুত্র জায়েদের স্ত্রীকেও বিয়ে করেছেন।”

২৬# রাজধানীর ধানমণ্ডি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মদন মোহনকে লাঞ্ছনার ঘটনা হয়। তিনিও নবীর শেষ জীবনে অসংখ্য বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন।

২৭# টুঙ্গিপাড়ার জিটি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক শঙ্কর বিশ্বাস মণ্ডলও ধর্ম নিয়ে আলোচনার কারণে তোপের মুখে পড়েছিল এবং বহিষ্কার হন।

২৮# কুড়িগ্রামের রায়গঞ্জ ডিগ্রি কলেজের এইসএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র গোপাল চন্দ্র দেবকে ২০১৪ সালের জুনে কটূক্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। (সূত্র-www.bdmonitor.net/)

২৯# ২০১৫ সালে ফেসবুকের মন্তব্যকে কেন্দ্র করেফেনী পলিটেকনিক ইনস্ট্রিটিউট ছাত্র জুয়েল চন্দ্র শীলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

৩০# ফটিকছড়িতে ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি আপলোড করে ধর্মীয় উস্কানির অপরাধে অভিযুক্ত কলেজ ছাত্র সুজন দে-কেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল।

৩১# নটরডেম কলেজের ছাত্র অং সিং মং মারমাকে খাগড়াছড়ি থেকে কটূক্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২০১৩ সালে।

৩২# নড়াইলে ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করার অভিযোগ এনে এক হিন্দু শিক্ষককে ঘরছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

৩৩# কিংকর চন্দ্র সমজদার ক্লাস নেওয়ার সময় বলেছিল ‘উপমহাদেশে ধর্ম নিয়ে গোঁড়ামী আছে’। এরপর শুরু হয় তাণ্ডবলীলা। যদিও যে ছাত্ররা অভিযোগ এনেছিল তারা বাংলাট্রিবিউন পত্রিকায় বলেছিল “যেভাবে মিছিল সমাবেশে কিংকর স্যারকে জড়িয়ে বিভিন্ন রকম বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে এসব কথার কিছুই তিনি বলেননি। তার নামে ছাপানো পোস্টারেও যা কিছু বলা হচ্ছে সব বানানো ও মিথ্যা। এমন আলোচনা তিনি করেনই নি।“

৩৪# এ.এম.এফ উচ্চ বিদ্যালয়ের জুনিয়র শিক্ষক বাবু নীহার চন্দ্র সূত্রধর ক্লাস নেওয়ার সময় কটূক্তির অভিযোগে হুমকির মুখে পড়েছিলেন।

৩৫# বোয়ালমারী জজ একাডেমির বিজ্ঞান শিক্ষক সমর বাকচী বিরুদ্ধেও কটূক্তির অভিযোগে মামলা হয়। এরপর থেকে তিনি অনেকদিন পলাতক ছিলেন।

৩৬# কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে শংকর চন্দ্র দাস নামে এক সেলুন দোকানদারকেও কটূক্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি একটি নাস্তিক পেইজে লাইক দিয়েছিলেন।

৩৭# ৭ নভেম্বর ২০১৫, ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অপরাধে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় স্বপন কুমার পোদ্দারের ছেলে চপল কুমার পোদ্দার (২৭) ও কলেজ রোডের আদর্শ পাড়ার মান্নান সিকদারের ছেলে মাঞ্জুরুল সিকদার পলাশ (৩১)। (সূত্র- বাংলানিউজ২৪.কম)

৩৮# ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে মাগুরায় নবম শ্রেণির স্কুলছাত্র গ্রেফতার। (সূত্র-আমার দেশ অনলাইন)

৩৯# ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এনজিও পরিচালক মোহন কুমার (৪০) ও শওকত গাজী (৩৬) গ্রেফতার। (সূত্র-দৈনিক সংগ্রাম)

৪০# ৪ অক্টোবর ২০১৫, হজ ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি : হিন্দুবাড়িতে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ; গ্রেফতার ৭। (সূত্র-মানবকন্ঠ)

প্রকাশনীতে হামলা ও প্রকাশক গ্রেফতার

১# ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বই ছাপা কারণে রোদেলা প্রকাশনী বন্ধ করে দেয় বাংলা একাডেমি ও পুলিশ। এছাড়াও রোদেলা প্রকাশনীর মালিককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। (সূত্র-যুগান্তর, প্রথম আলো)

২# ২ নভেম্বর ২০১৫ সালে, ইসলামিক জঙ্গিরা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বই ছাপানোর কারণে শ্রদ্ধস্বর ও জাগৃতি প্রকাশনীতে হামলা করে। শুদ্ধস্বরে লেখক প্রকাশকসহ আহত হয় ৩ জন। অন্যদিকে জাগৃতির প্রকাশক দীপন নিহত হোন। (প্রথম আলো, যুগান্তর)

• ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত লাগে এমন বই প্রকাশ করার ব-দ্বীপ প্রকাশনী বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এছাড়াও ইসলামিক উগ্রবাদীরা প্রকাশনীর মালিককে হত্যা করবে বলে ফেসবুকে প্রচারনা চালায়। অনুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে প্রকাশক, প্রেস মালিকসহ গ্রেফতার করা হয় ৩ জনকে। (যুগান্তর, বিবিসি)

বোরকা ইস্যু:

বোরকা পরতে নিষেধ করায় কয়েকটি মামলা এবং হত্যার ঘটনাও অনেক।অধ্যাপক শফিউল হত্যার বিষয়টি এবং বোরকার বিরোধিতা করায় চট্টগ্রাম সরকারি নার্সিং কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষিকা অঞ্জলি দেবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালে সিলেটে বোরকা না পরে স্কুল ড্রেস পরে আসতে বলেন সিলেটের শিক্ষক প্রভাংশু শেখরের উপর জনতার হামলা হয়। রাজউক কলেজে বোরকা পরায় ছাত্রীকে অধ্যক্ষের বহিষ্কার ঘটনা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘটনা ঘতে। ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে বোরকা পরার পর নিষিদ্ধ করার পর থেকে ইউনিভার্সিটি রেজিস্টারের বিরুদ্ধে ওলামাদের তীব্র অভিযোগ উঠে। মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইন্সটিটিউটে বোরকা নিষিদ্ধের পরেও মৌলবাদীদের প্রতিক্রিয়ায় ঝড় উঠেছিল। তাছাড়া একুশে টেলিভিশনের নারী সাংবাদিক নাদিয়া শারমিনের ওপর৷ পুরুষদের সমাবেশে নারী সাংবাদিক কেন এই অজুহাত। মাস দুয়েক আগে ড্রেস-কোড মানতে বলায় IUBAT-এ হামলার ঘটনা ঘটে।

আপডেট চলবে…………

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.