
জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক ফারুকির খুনের মামলার আসামিরা হলেন এটিএন বাংলা ও এনটিভির ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক তারেক মনোয়ার, কামাল উদ্দিন জাফরী, দিগন্ত ও পিস টিভির উপস্থাপক কাজী ইব্রাহিম, এটিএন বাংলার উপস্থাপক আরকানুল্লাহ হারুনী, আরটিভি ও রেডিও টুডের ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক খালেদ সাইফুলল্লাহ, বাংলা ভিশনের উপস্থাপক মুখতার আহমদ। এছাড়াও ২০১২ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক সভায় দিগন্ত ও পিস টিভি’র উপস্থাপক কাজী ইব্রাহীম প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিল ফারুকীকে মেরে ফেলার।
উল্লেখ্য, মাওলানা ফারুকীকে হত্যার ঠিক দুইদিন আগে এটিএন বাংলা স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এনটিভি’র উপস্থাপক তারেক মনোয়ার বলেছিল ফারুকীর মতো শিরকী ও বিদআতিকে পুড়িয়ে মারা উচিত। তার বক্তব্যে সায় দিয়েছিল আর টিভি ও রেডিও টুডে’র উপস্থাপক খালিদ সাইফুল্লাহ বক্সী ও বাংলা ভিশনের মোক্তার আহমেদ। হ্যাঁ, কেউ হুমকি দেওয়ার অর্থ এই নয় যে তিনি এই খুনের সাথে সরাসরি জড়িত কিংবা তিনিই খুন করেছেন। তবে প্রকাশ্যে কাউকে হত্যার হুমকি কিংবা হত্যা করতে উস্কানো অবশ্যই অপরাধ মূলক কাজ। শুধু এই অপরাধেই তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট।
এই ইব্রাহিম ২০১২ সালে ফারুকীকে সরাসরি থ্রেট দেয়, ২০১৪ সালে ফারুকীকে খুন করার মামলার আসামীদের মধ্যে সে অন্যতম। আপনাদের রাজাকার রাজ্জাকের কথা মনে আছে? তার বিরুদ্ধে খুনের সাথে সাথে ধর্ষণেরও অভিযোগ ছিল। আর ট্রাইব্রুনালে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। ঐ রাজ্জাক কিন্তু এটিএন বাংলায় মানুষকে ধর্মীয় জ্ঞান দিত ঠিক ইব্রাহিম কিংবা তারেক মনোয়ারের মতন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসী পালে আর বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল এদের প্রচার করে। দেশে কী ধর্মীয়-জ্ঞান জানা লোকের এতোই অভাব তাহলে?

গত কাল থেকে আবার জয়নাল হাজারীর ফুসফুস ধুইয়ে করোনা মুক্ত করার ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। যারা হাজারীর ইতিহাস জানেন তারা অন্তত জানেন সে কতোটা ভয়ংকর একটা মানুষ। সে এখন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। কিন্তু দেখেন এতো বড় গড ফাদার আজ যেন কৌতুক অভিনেতা।
ইসলামিক টিভিতে জাকির নায়েকের পরে যার বক্তব্য প্রচার হতো তার নাম হচ্ছে মুফতি ইব্রাহিম যিনি আজ এন্টার্কটিকা হুজুর নামে পরিচিত। অথচ এই লোকের কৌতুক ও ভাঁড়ামি শুরু করার কাহিনী বেশি দিনের নয়। ফারুকীর মামলা থেকে বাঁচার জন্যে এরা দেশ ছেড়েছিল। আর দেশে এনে এখন কৌতুক শুরু করেছে। আর এদের কৌতুকে মানুষের মনে তাদের আদি পাপের ইতিহাস মুছে যাচ্ছে। বাঙলা ভাই বেঁচে থাকলে জাতি হয়তো আরেকজন কৌতুক অভিনেতা পেত। আপসোস বেচারা ভুল সময়ে ফেঁসে গেছে।
সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হিসেবে সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের নাম নেওয়া যেতে পারে। যিনি একসময় নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক ছিলেন কিন্তু যারা তার স্বৈরতন্ত্র দেখে নাই তাদের কাছে হয়তো তিনি নিতান্ত এক ভাঁড় কিংবা পল্টিবন্ধু হিসেবে পরিচিত। খুনের মামলা মাথা নিয়ে এরশাদ বাংলার মাটিতে মারা গেছেন খুব সম্মানের সাথে। হাজার হাজার মানুষ তার অতীত ইতিহাস ভুলে জানাজায় সামিল হয়েছে। অতএব দেখা যায় ভাঁড়ামি শুধু অপরাধীর অপরাধ আড়াল করে না, সমাজে তার অবস্থান নিশ্চিতও করেন!
ইব্রাহিমরা বোকা নয়, বোকা হলাম আমি-আপনি।।
ফারুকী হত্যা ও মামলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
*২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে সুনামগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের উগ্রপন্থিরা ফারুকীকে হত্যার চেষ্টা করে।
*বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’ বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর বিরোধীরা। দুই বছর আগে চ্যানেল আই অফিসে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোন করে এমন হুমকি দিয়েছিল বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে। বিরোধীরা হুমকি দিয়ে বলেছিল, ‘আপনারা ফারুকীকে চ্যানেল থেকে সরিয়ে দেন। নইলে চ্যানেল আই উড়িয়ে দেওয়া হবে।’
*রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে উপস্থাপক মাওলানা শায়খ নূরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার ঘটনায় পিস টিভির উপস্থাপক মুজাফফর বিন মহসিনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। (৯ নভেম্বর, ২০১৪)
*২২ আগস্ট ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ইসলামী মিডিয়া পারসোনালিটি’ আয়োজিত এক সভায় তারেক মনোয়ার বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই এক থাকলে ফারুকীর মতো শিরকি বিদা’তের গোষ্ঠীকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা যাবে। এ সময় অন্য আসামিরা তাকে সমর্থন দিয়ে বিভিন্ন উক্তি করেন।
*পিস টিভির কর্ণধার ডা. জাকির নায়েক তার এক আলোচনায় বলেছিলেন, আমরা নবী হতে পারব না, কিন্তু চেষ্টা করা যায়। মাওলানা ফারুকী তার এ কথারও কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ওই কথার পর তিনি নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করতে পারেন না। খুন হওয়ার আগে ২৫ আগস্ট টঙ্গীর চেরাগআলীতে আয়োজিত এক ইসলামী অনুষ্ঠানে মাওলানা ফারুকী এসব সমালোচনা করেন।
*তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, ফারুকী খুন হওয়ার এক সপ্তাহ আগে বিরোধীরা একটি বৈঠক করে। বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, মাওলানা ফারুকীকে মিডিয়া থেকে বাদ দেব এবং তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করব।