
ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী ও ফুটবল লেখক ডেভিড গোল্ডব্লাট সোজাসাপ্টা লিখলেন যে ইংল্যান্ডকে জেতাতে গিয়ে ক্যামেরুনকে ৯০ এর কোয়ার্টার ফাইনালে হারানো হয়েছিল। পুরস্কার হিসেবে মেক্সিকোর রেফারি কোডেসাল ফাইনাল খেলা আয়োজনের সুযোগ পেয়েছিলেন। আর সেই ফাইনালে একটি অন্যায্য পেনাল্টি দিয়ে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দেয়। খেলা শেষে ম্যারাডোনা অভিযোগ করে বলেন, ইতালি ও বসদের (ফিফা) খুশি করতে রেফারি এই বিতর্কিত পেনাল্টি দেন। এই রেফারির সমালোচনা করেন ফিফার সম্পাদক জোসেফ ব্ল্যাটারও। কোডেসালের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে রাস্তায় মিছিল আর জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়। ঐ সময় ম্যারাডোনাকে নিয়ে গানের ক্যাসেট এমনকি ম্যারাডোনাকে ঢাকায় আনারও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ফুটবলের উন্মাদনা বর্তমান থেকে অতীতে কোন অংশে কম ছিল না। অন্যদিকে দুই জার্মানিতে বিজয়োল্লাস করতে গিয়ে দুই জার্মানিতে ৪ জন নিহত ও ১০০ জনের বেশি আহত হয়। বিশ্বকাপ জয় করার পর দুই জার্মানিতেই জার্মান গুণ্ডারা পুলিশ ও বিদেশীদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এতে পুলিশ ৫০ জনকে আটক করে। এছাড়া আতশবাজিতে এক যুবক মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ হয় এবং গাড়ি চাপায় ২ জন গুরুতর আহত হয়।
বাংলাদেশের পত্রিকায় যা লিখল:
বিতর্কিত পেনাল্টিতে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়: ৯ খেলোয়াড় নিয়ে আর্জেন্টিনা রানার্স আপ
বিতর্কিত পেনাল্টি বদৌলতে জয়ী হয়ে পশ্চিম জার্মানি বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছে। খেলা শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে মেক্সিকান রেফারী কোডেসাল মেন্ডেজ জার্মানির অনুকূলে একটি বিতর্কিত পেনাল্টি দিলে ব্রেহমা তা থেকে গোল করে তার দেশ পশ্চিম জার্মানিকে তৃতীয়বারের মত বিশ্বকাপ পাইয়ে দেন।
রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে প্রায় ৭৪,০০০ দর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ ফাইনাল খেলাটি রেফারীর – পক্ষপাতিত্ব-পূর্ণ খেলা পরিচালনার জন্য তার স্বাভাবিক আকর্ষণ হারায়। গতবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে রেফারী কোডেসান শুধু পেনাল্টি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, লঘু অপরাধে আর্জেন্টিনার দু’জন খেলোয়াড় মনজোন ও ডেজোটিকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বহিষ্কার এবং জার্মানির প্রায় এক ডজন ফাউলের শিকার অধিনায়ক ম্যারাডোনাকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে তার নিদারুণ পক্ষপাতিত্বের ষোল কলা পূর্ণ করেন। আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় জন খেলোয়াড় নিয়ে খেলে। উল্লেখ করা যেতে পারে রেফারিদের স্স্বেচ্ছাচারী শো পরিচালনার শিকার হয়ে ক্যানিজিয়া, জুইস্তি প্রমুখ চারজন নিয়মিত খেলোয়াড় ছাড়াই আর্জেন্টিনাকে ফাইনাল খেলতে হয়।
দুই দলের মধ্যে পশ্চিম জার্মানির খেলায় আক্রমণের ছাপ বেশ কিছুটা বেশী থাকলেও বিশ্বকাপ জেতার মত খেলা তারা কখনও খেলেনি। খেলাতে তাদের প্রাধান্য দেখা গেলেও আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগকে ভেদ করে গোল করার কোন কৌশল তাদের খেলার দেখা যায়নি। বরং মাঝে মাঝে নয়ন মনোহর পাসের মধ্যে আর্জেন্টিনার চমৎকার ক্রীড়াশৈলীর সামনে জার্মান দলের খেলা অনেকটা মেকানাইজড মনে হল।
আর্জেন্টিনার অধিনায়ক ম্যারাডোনাকে নিষ্প্রভ দেখা গেলেও তার পায়ে বল পড়লে তাকে তা সহযোগীদের কাছে চকপ্রদভাবে যোগান দিতে দেখা যায়। ম্যারাডোনা যখনই বল ধরছিলেন জার্মান রক্ষণভাগের দু তিনজন করে খেলোয়াড় তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে আটকানোর চেষ্টা করে। সারা খেলায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ডজনখানেক বার ফাউল করা হয়। এর জন্য একবার রুডি ফলারকে হলুদ কার্ড দেখানো ছাড়া রেফারী কোভেসাল ‘বাকিগুলি সহজেই এড়িয়ে যান।
ম্যারাডোনার মতন জার্মান অধিনায়ক ম্যাথুস, ফলার, ও ক্লিনসম্যানও আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগের কড়া প্রহরার জন্য নিষ্প্রভ হয়ে যান।
পশ্চিম জার্মানি এবার নিয়ে ষষ্ঠবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেললেও তারা কাপ জেতার গৌরব পেল মাত্র তৃতীয়বার। এর আগে তারা ১৯৫৪ ও ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপ জয় করে। চার ফাইনালে আর্জেন্টিনার এটা ছিল ২য় পরাজয়। তারা ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জয় করে। ব্রাজিলের মারিও জাগালোর পর জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার হলেন ২য় খেলোয়াড় যিনি পরে ম্যানেজার হিসাবে বিশ্বকাপ জেতার গৌরব পেলেন। এবারের বিশ্বকাপ জিতে জার্মান দশ গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কাছে তাদের ২-৩ গোলের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিল। পশ্চিম জার্মানি এবার কাপ জেতার ব্রাজিল ও ইটালির মত তাদের ভাগ্যেও তিনবার করে বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব জুটল। এবারের ‘ফাইনাল খেলার প্রথমার্ধে মোটামুটি পরিচ্ছন্ন খেলা হলেও, দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলকেই ফাউল করে খেলতে দেখা যায় এবং কোন কোনটি রেফারী সুকৌশলে এড়িয়ে যান। রেফারিকে বিরুদ্ধে যার মারমুখী আচরণ করতে দেখা যায়। খেলা যখন প্রায় অতিরিক্ত সময়ে পড়তে চলছিল ঠিক সেই সময়ে জার্মান অনুকূলে তার বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সারা মাঠকে হতবাক করে দেয়। আর্জেন্টিনীয় খেলোয়াড়রা ক্ষুদ্ধ হয়ে তাকে ঘিরে ধরে। কিন্তু কোচ বিলার্ডো এসে তার ক্ষুদ্ধ খেলোয়াড়দের রেফারীর কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। আর্জেন্টিনীয় খেলোয়াড় নেস্টর যখন মাঠ থেকে বেরিয়ে আসছিলেন তার মুখ থেকে রক্ত ঝরছিল (রিপোর্ট এপির)। রেফারির এই সিদ্ধান্তে বাকি সকল খেলোয়াড়রা স্তম্ভিত ও হতবাক হয়ে গিয়েছিল। খেলার শেষে অধিনায়ক ম্যারাডোনাকে কান্নায় ভেগে পড়তে দেখা যায়।
খেলার শেষে প্রেসিডেন্টের হাত থেকে জার্মান দলের অধিনায়ক লোথার ম্যাথাউস বিশ্বকাপ গ্রহণ পর স্টেডিয়ামের চতুর্দিক প্রদক্ষিণ করেন।
ম্যারাডোনার কান্না
খেলা শেষে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা আবার বিশ্বকাপে কাছে শেষ মুহূর্তে পেনাল্টিতে হেরে গেল। অধিনায়ক ম্যারাডোনা তাঁর দলকে জয়ী করতে পারলেন না। মাঠের উপর শেষ মুহূর্তে অবনত হয়ে নিজের বেদনা উৎসারিত করে দিলেন ম্যারাডোনা। তাঁর চোখে অশ্রু কেন? ট্রেইনার বিলার্ডো এসে ম্যারাডোনাকে টেনে তুললেন।
ফুটবলের ইতিহাসে এক যাদুকরী নাম ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনার পায়ে বল গেলে মুহূর্তে তা জীবন্ত হয়ে উঠে। ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক অতুলনীয় গোল করে ম্যারাডোনা নিজেকে অনন্য সাধারণ খেলোয়াড় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। প্রতিপক্ষের জন্য বিপজ্জনক খেলোয়াড় ম্যারাডোনাকে এজন্যে এবার প্রতিটি খেলায় রাফ ট্যাকলিং আর অগণিত ফাউলের শিকার হতে হয়েছে। কেউ ম্যারাডোনাকে খেলতে দিতে চায়নি।
কিন্তু তারপরও ম্যারাডোনা কখনো কখনো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছেন। বল এগিয়েছেন, বল ঘুরিয়েছেন। গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন।
জার্মানির সঙ্গে খেলায় ম্যারাডোনার দলের দুজন লাল কার্ড পেয়েছেন। স্বয়ং ম্যারাডোনাকে দেয়া হয়েছে হলুদ কার্ড। ইংল্যান্ড-ক্যামেরুনের খেলার পক্ষ-পাতমূলক আচরণের অভিযুক্ত সেই রেফারী ম্যারাডোনার দলের প্রতিও ছিলেন বিমুখ। যতটুকু খেলা ছিল ম্যারাডোনার ততটুকু চমৎকার খেলেছেন।
ম্যারাডোনাকে নিয়ে গানের ক্যাসেট
বাংলাদেশ সমাজকল্যাণ কর্মী সংঘের উদ্যোগে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা উপলক্ষে ম্যারাডোনাকে নিয়ে খন্দকার মুবিন উদ্দীন সঞ্চয় শিশু শিল্পীর গানের ক্যাসেট বের হবে। ২২শে জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে ক্যাসেটের উদ্বোধন করবেন জাতীয় ফুটবলার কায়সার হামিদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন কুমার বিশ্বজিৎ।